ছবি ও গান নিয়ে আমার বলবার কথাটা বলে নিই। এটা বয়ঃসন্ধিকালের লেখা, শৈশব যৌবন যখন সবে মিলেছে। ভাষায় আছে ছেলেমানুষি, ভাবে এসেছে কৈশোর। তার পূর্বেকার অবস্থায় একটা বেদনা ছিল অনুদ্দিষ্ট, সে যেন প্রলাপ ব'কে আপনাকে শান্ত করতে চেয়েছে। এখন সেই বয়স যখন কামনা কেবল সুর খুঁজছে না, রূপ খুঁজতে বেরিয়েছে। কিন্তু আলো-আঁধারে রূপের আভাস পায়, স্পষ্ট করে কিছু পায় না। ছবি এঁকে তখন প্রত্যক্ষতার স্বাদ পাবার ইচ্ছা জেগেছে মনে কিন্তু ছবি আঁকবার হাত তৈরি হয় নি তো। কবি সংসারের ভিতরে তখনও প্রবেশ করে নি, তখনও সে বাতায়নবাসী। দূর থেকে যার আভাস দেখে তার সঙ্গে নিজের মনের নেশা মিলিয়ে দেয়। এর কোনো-কোনোটা চোখে দেখা একটুকরো ছবি পেনসিলে আঁকা, রবারে ঘষে দেওয়া, আর কোনো-কোনোটা সম্পূর্ণ বানানো। মোটের উপরে অক্ষম ভাষার ব্যাকুলতায় সবগুলিতেই বানানো ভাব প্রকাশ পেয়েছে, সহজ হয় নি। কিন্তু সহজ হবার একটা চেষ্টা দেখা যায়। সেইজন্যে চলতি ভাষা আপন এলোমেলো পদক্ষেপে এর যেখানে-সেখানে প্রবেশ করেছে। আমার ভাষায় ও ছন্দে এই একটা মেলামেশা আরম্ভ হল। ছবি ও গান কড়ি ও কোমলের ভূমিকা করে দিলে।
আমি ভালোবাসি, দেব, এই বাঙালার দিগন্তপ্রসার ক্ষেত্রে যে শান্তি উদার বিরাজ করিছে নিত্য, মুক্ত নীলাম্বরে অচ্ছায় আলোকে গাহে বৈরাগ্যের স্বরে যে ভৈরবীগান, যে মাধুরী একাকিনী নদীর নির্জন তটে বাজায় কিঙ্কিণী তরল কল্লোলরোলে, যে সরল স্নেহ তরুচ্ছায়া-সাথে মিশি স্নিগ্ধপল্লীগেহ অঞ্চলে আবরি আছে, যে মোর ভবন আকাশে বাতাসে আর আলোকে মগন সন্তোষে কল্যাণে প্রেমে-- করো আশীর্বাদ, যখনি তোমার দূত আনিবে সংবাদ তখনি তোমার কার্যে আনন্দিতমনে সব ছাড়ি যেতে পারি দুঃখে ও মরণে।