লিখব তোমার রঙিন পাতায় কোন্ বারতা? রঙের তুলি পাব কোথায়? সে রঙ তো নেই চোখের জলে, আছে কেবল হৃদয় তলে প্রকাশ করি কিসের ছলে মনের কথা? কইতে গেলে রইবে কি তার সরলতা? বন্ধু তুমি বুঝবে কি মোর সহজ বলা? নাই যে আমার ছলা-কলা। সুর যা ছিল বাহির ত্যেজে অন্তরেতে উঠল বেজে, একলা কেবল জানে সে-যে মোর দেবতা। কেমন করে করব বাহির মনের কথা?
এই অজানা সাগরজলে বিকেলবেলার আলো লাগল আমার ভালো। কেউ দেখে কেউ নাই-বা দেখে, রাখবে না কেউ মনে, এমনতরো ফেলাছড়ার হিসাব কি কেউ গোনে। এই দেখে মোর ভরল বুকের কোণ; কোথা থেকে নামল রে সেই খেপা দিনের মন, যেদিন অকারণ হঠাৎ হাওয়ায় যৌবনেরি ঢেউ ছল্ছলিয়ে উঠত প্রাণে জানত না তা কেউ। লাগত আমায় আপন গানের নেশা অনাগত ফাগুন দিনের বেদন দিয়ে মেশা। সে গান যারা শুনত তারা আড়াল থেকে এসে আড়ালেতে লুকিয়ে যেত হেসে। হয়তো তাদের দেবার ছিল কিছু, আভাসে কেউ জানায় নি তা নয়ন করে নিচু। হয়তো তাদের সারাদিনের মাঝে পড়ত বাধা একবেলাকার কাজে। চমক-লাগা নিমেষগুলি সেই হয়তো বা কার মনে আছে, হয়তো মনে নেই। জ্যোৎস্নারাতে একলা ছাদের 'পরে উদার অনাদরে কাটত প্রহর লক্ষ্যবিহীন প্রাণে, মূল্যবিহীন গানে। মোর জীবনে বিশ্বজনের অজানা সেই দিন, বাজত তাহার বুকের মাঝে খামখেয়ালী বীন,-- যেমনতরো এই সাগরে নিত্য সোনায় নীলে রূপ হারানো রাধাশ্যামের দোলন দোঁহায় মিলে, যেমনতরো ছুটির দিনে এমনি বিকেলবেলা দেওয়া নেওয়ার নাই কোনো দায়, শুধু হওয়ার খেলা, অজানাতে ভাসিয়ে দেওয়া আলোছায়ার ভেলা।
দেহে মনে সুপ্তি যবে করে ভর সহসা চৈতন্যলোকে আনে কল্পান্তর, জাগ্রত জগৎ চলে যায় মিথ্যার কোঠায়। তখন নিদ্রার শূন্য ভরি স্বপ্নসৃষ্টি শুরু হয়, ধ্রুব সত্য তারে মনে করি। সেও ভেঙে যায় যবে পুনর্বার জেগে উঠি অন্য এক ভবে; তখনি তাহারে সত্য বলি, নিশ্চিত স্বপ্নের রূপ অনিশ্চিতে কোথা যায় চলি। তাই ভাবি মনে যদি এ জীবন মোর গাঁথা থাকে মায়ার স্বপনে, মৃত্যুর আঘাতে জেগে উঠে অজিকার এ জগৎ অকস্মাৎ যায় টুটে, সব-কিছু অন্য-এক অর্থে দেখি-- চিত্ত মোর চমকিয়া সত্য বলি তারে জানিবে কি? সহসা কি উদিবে স্মরণে ইহাই জাগ্রত সত্য অন্যকালে ছিল তার মনে?