যখন দিনের শেষে চেয়ে দেখি সমুখপানে সূর্য ডোবার দেশে মনের মধ্যে ভাবি অস্তসাগর-তলায় গেছে নাবি অনেক সূর্য-ডোবার সঙ্গে অনেক আনাগোনা, অনেক দেখাশোনা, অনেক কীর্তি, অনেক মূর্তি, অনেক দেবালয়, শক্তিমানের অনেক পরিচয়। তাদের হারিয়ে-যাওয়ার ব্যাথায় টান লাগে না মনে, কিন্তু যখন চেয়ে দেখি সামনে সবুজ বনে ছায়ায় চরছে গোরু, মাঝ দিয়ে তার পথ গিয়েছে সরু, ছেয়ে আছে শুক্নো বাঁশের পাতায়, হাট করতে চলে মেয়ে ঘাসের আঁঠি মাথায়, তখন মনে হঠাৎ এসে এই বেদনাই বাজে-- ঠাঁই রবে না কোনোকালেই ঐ যা-কিছুর মাঝে। ঐ যা-কিছুর ছবির ছায়া দুলেছে কোন্কালে শিশুর-চিত্ত-নাচিয়ে-তোলা ছড়াগুলির তালে-- তিরপূর্নির চরে বালি ঝুর্ঝুর্ করে, কোন্ মেয়ে সে চিকন-চিকন চুল দিচ্ছে ঝাড়ি, পরনে তার ঘুরে-পড়া ডুরে একটি শাড়ি। ঐ যা-কিছু ছবির আভাস দেখি সাঁঝের মুখে মর্ত্যধরার পিছু-ডাকা দোলা লাগায় বুকে।
মোর চেতনায় আদিসমুদ্রের ভাষা ওঙ্কারিয়া যায়; অর্থ তার নাহি জানি, আমি সেই বাণী। শুধু ছলছল কলকল; শুধু সুর, শুধু নৃত্য, বেদনার কলকোলাহল; শুধু এ সাঁতার-- কখনো এ পারে চলা, কখনো ও পার, কখনো বা অদৃশ্য গভীরে, কভু বিচিত্রের তীরে তীরে। ছন্দের তরঙ্গদোলে কত যে ইঙ্গিত ভঙ্গি জেগে ওঠে, ভেসে যায় চলে। স্তব্ধ মৌনী অচলের বহিয়া ইশারা নিরন্তর স্রোতোধারা অজানা সম্মুখে ধায়, কোথা তার শেষ কে জানে উদ্দেশ। আলোছায়া ক্ষণে ক্ষণে দিয়ে যায় ফিরে ফিরে স্পর্শের পর্যায়। কভু দূরে কখনো নিকটে প্রবাহের পটে মহাকাল দুই রূপ ধরে পরে পরে কালো আর সাদা। কেবলি দক্ষিণে বামে প্রকাশ ও প্রকাশের বাধা অধরার প্রতিবিম্ব গতিভঙ্গে যায় এঁকে এঁকে, গতিভঙ্গে যায় ঢেকে ঢেকে।