সুরলোকে নৃত্যের উৎসবে যদি ক্ষণকালতরে ক্লান্ত উর্বশীর তালভঙ্গ হয় দেবরাজ করে না মার্জনা। পূর্বার্জিত কীর্তি তার অভিসম্পাতের তলে হয় নির্বাসিত। আকস্মিক ত্রুটি মাত্র স্বর্গ কভু করে না স্বীকার। মানবের সভাঙ্গনে সেখানেও আছে জেগে স্বর্গের বিচার। তাই মোর কাব্যকলা রয়েছে কুণ্ঠিত তাপতপ্ত দিনান্তের অবসাদে; কী জানি শৈথিল্য যদি ঘটে তার পদক্ষেপতালে। খ্যাতিমুক্ত বাণী মোর মহেন্দ্রের পদতলে করি সমর্পণ যেন চলে যেতে পারি নিরাসক্তমনে বৈরাগী সে সূর্যাস্তের গেরুয়া আলোয়; নির্মম ভবিষ্য, জানি, অতর্কিতে দস্যুবৃত্তি করে কীর্তির সঞ্চয়ে-- আজি তার হয় হোক প্রথম সূচনা।
পাছে দেখি তুমি আস নি, তাই আধেক আঁখি মুদিয়ে চাই, ভয়ে চাই নে ফিরে। আমি দেখি যেন আপন-মনে পথের শেষে দূরের বনে আসছ তুমি ধীরে। যেন চিনতে পারি সেই অশান্ত তোমার উত্তরীয়ের প্রান্ত ওড়ে হাওয়ার 'পরে। আমি একলা বসে মনে গণি শুনছি তোমার পদধ্বনি মর্মরে মর্মরে। ভোরে নয়ন মেলে অরুণরাগে যখন আমার প্রাণে জাগে অকারণের হাসি, যখন নবীন তৃণে লতায় গাছে কোন্ জোয়ারের স্রোতে নাচে সবুজ সুধারাশি-- যখন নব মেঘের সজল ছায়া যেন রে কার মিলন-মায়া ঘনায় বিশ্ব জুড়ে, যখন পুলকে নীল শৈল ঘেরি বেজে ওঠে কাহার ভেরী, ধ্বজা কাহার উড়ে-- তখন মিথ্যা সত্য কেই-বা জানে, সন্দেহ আর কেই-বা মানে, ভুল যদি হয় হোক! ওগো, জানি না কি আমার হিয়া কে ভুলালো পরশ দিয়া, কে জুড়ালো চোখ। সে কি তখন আমি ছিলেম একা, কেউ কি মোরে দেয় নি দেখা। কেউ আসে নাই পিছে? তখন আড়াল হতে সহাস আঁখি আমার মুখে চায় নি নাকি। এ কি এমন মিছে।