কেবল তব মুখের পানে চাহিয়া, বাহির হনু তিমির-রাতে তরণীখানি বাহিয়া। অরুণ আজি উঠেছে-- আশোক আজি ফুটেছে-- না যদি উঠে,না যদি ফুটে, তবুও আমি চলিব ছুটে তোমার মুখে চাহিয়া। নয়নপাতে ডেকেছ মোরে নীরবে। হৃদয় মোর নিমেষ-মাঝে উঠেছে ভরি গরবে। শঙ্খ তব বাজিল-- সোনার তরী সাজিল-- না যদি বাজে, না যদি সাজে, গরব যদি টুটে গো লাজে চলিব তবু নীরবে। কথাটি আমি শুধাব নাকো তোমারে। দাঁড়াব নাকো ক্ষণেক-তরে দ্বিধার ভরে দুয়ারে। বাতাসে পাল ফুলিছে-- পতাকা আজি দুলিছে-- না যদি ফুলে, না যদি দুলে, তরণী যদি না লাগে কূলে শুধাব নাকো তোমারে।
জগতের মাঝখানে যুগে যুগে হইতেছে জমা সুতীব্র অক্ষমা। অগোচরে কোনোখানে একটি রেখার হলে ভুল দীর্ঘকালে অকস্মাৎ আপনারে করে সে নির্মূল। ভিত্তি যার ধ্রুব বলে হয়েছিল মনে তলে তার ভূমিকম্প টলে ওঠে প্রলয়নর্তনে। প্রাণী কত এসেছিল দলে দলে জীবনের রঙ্গভূমে অপর্যাপ্ত শক্তির সম্বলে-- সে শক্তিই ভ্রম তার, ক্রমেই অসহ্য হয়ে লুপ্ত করে দেয় মহাভার। কেহ নাহি জানে, এ বিশ্বের কোন্খানে প্রতি ক্ষণে জমা দারুণ অক্ষমা। দৃষ্টির অতীত ত্রুটি করিয়া ভেদন সম্বন্ধের দৃঢ় সূত্র করিছে ছেদন; ইঙ্গিতের স্ফুলিঙ্গের ভ্রম পশ্চাতে ফেরার পথ চিরতরে করিছে দুর্গম। দারুণ ভাঙন এ যে পূর্ণেরই আদেশে; কী অপূর্ব সৃষ্টি তার দেখা দিবে শেষে-- গুঁড়াবে অবাধ্য মাটি, বাধা হবে দূর, বহিয়া নূতন প্রাণ উঠিবে অঙ্কুর। হে অক্ষমা, সৃষ্টির বিধানে তুমি শক্তি যে পরমা; শান্তির পথের কাঁটা তব পদপাতে বিদলিত হয়ে যায় বারবার আঘাতে আঘাতে।