একা আমি ফিরব না আর এমন করে-- নিজের মনে কোণে কোণে মোহের ঘোরে। তোমায় একলা বাহুর বাঁধন দিয়ে ছোটো করে ঘিরতে গিয়ে আপনাকে যে বাঁধি কেবল আপন ডোরে। যখন আমি পাব তোমায় নিখিলমাঝে সেইখনে হৃদয় পাব হৃদয়রাজে। এই চিত্ত আমার বৃন্ত কেবল তারি 'পরে বিশ্বকমল; তারি 'পরে পূর্ণ প্রকাশ দেখাও মোরে।
খ্যাতি নিন্দা পার হয়ে জীবনের এসেছি প্রদোষে, বিদায়ের ঘাটে আছি বসে। আপনার দেহটারে অসংশয়ে করেছি বিশ্বাস, জরার সুযোগ পেয়ে নিজেরে সে করে পরিহাস, সকল কাজেই দেখি কেবলি ঘটায় বিপর্যয়, আমার কর্তৃত্ব করে ক্ষয়; সেই অপমান হতে বাঁচাতে যাহারা অবিশ্রাম দিতেছে পাহারা, পাশে যারা দাঁড়ায়েছে দিনান্তের শেষ আয়োজনে, নাম না'ই বলিলাম তাহারা রহিল মনে মনে। তাহারা দিয়েছে মোরে সৌভাগ্যের শেষ পরিচয়, ভুলায়ে রাখিছে তারা দুর্বল প্রাণের পরাজয়; এ কথা স্বীকার তারা করে খ্যাতি প্রতিপত্তি যত সুযোগ্য সক্ষমদের তরে; তাহারাই করিছে প্রমাণ অক্ষমের ভাগ্যে আছে জীবনের শ্রেষ্ঠ সেই দান। সমস্ত জীবন ধরে খ্যাতির খাজনা দিতে হয়, কিছু সে সহে না অপচয়; সব মূল্য ফুরাইলে যে দৈন্য প্রেমের অর্ঘ্য আনে অসীমের স্বাক্ষর সেখানে।
এসেছিল বহু আগে যারা মোর দ্বারে, যারা চলে গেছে একেবারে, ফাগুন-মধ্যাহ্নবেলা শিরীষছায়ায় চুপে চুপে তারা ছায়ারূপে আসে যায় হিল্লোলিত শ্যাম দুর্বাদলে। ঘন কালো দিঘিজলে পিছনে-ফিরিয়া-চাওয়া আঁখি জ্বলো জ্বলো করে ছলোছলো। মরণের অমরতালোকে ধূসর আঁচল মেলি ফিরে তারা গেরুয়া আলোকে। যে এখনো আসে নাই মোর পথে, কখনো যে আসিবে না আমার জগতে, তার ছবি আঁকিয়াছি মনে-- একেলা সে বাতায়নে বিদেশিনী জন্মকাল হতে। সে যেন শেঁউলি ভাসে ক্ষীণ মৃদু স্রোতে, কোথায় তাহার দেশ নাই সে উদ্দেশ। চেয়ে আছে দূর-পানে কার লাগি আপনি সে নাহি জানে। সেই দূরে ছায়ারূপে রয়েছে সে বিশ্বের সকল-শেষে যে আসিতে পারিত তবুও এল না কভুও। জীবনের মরীচিকাদেশে মরুকন্যাটির আঁখি ফিরে ভেসে ভেসে।