আছে, আছে স্থান! একা তুমি, তোমার শুধু একটি আঁটি ধান। নাহয় হবে, ঘেঁষাঘেঁষি, এমন কিছু নয় সে বেশি, নাহয় কিছু ভারী হবে আমার তরীখান-- তাই বলে কি ফিরবে তুমি আছে, আছে স্থান! এসো, এসো নায়ে! ধুলা যদি থাকে কিছু থাক্-না ধূলা পায়ে। তনু তোমার তনুলতা, চোখের কোণে চঞ্চলতা, সজলনীল-জলদ-বরন বসনখানি গায়ে-- তোমার তরে হবে গো ঠাঁই-- এসো এসো নায়ে। যাত্রী আছে নানা, নানা ঘাটে যাবে তারা কেউ কারো নয় জানা। তুমিও গো ক্ষণেক-তরে বসবে আমার তরী-'পরে, যাত্রা যখন ফুরিয়ে যাবে, মান্বে না মোর মানা-- এলে যদি তুমিও এসো, যাত্রী আছে নানা। কোথা তোমার স্থান? কোন্ গোলাতে রাখতে যাবে একটি আঁটি ধান? বলতে যদি না চাও তবে শুনে আমার কী ফল হবে, ভাবব ব'সে খেয়া যখন করব অবসান-- কোন্ পাড়াতে যাবে তুমি, কোথা তোমার স্থান?
চিরকাল একি লীলা গো-- অনন্ত কলরোল। অশ্রুত কোন্ গানের ছন্দে অদ্ভুত এই দোল। দুলিছ গো, দোলা দিতেছ। পলকে আলোকে তুলিছ, পলকে আঁধারে টানিয়া নিতেছ। সমুখে যখন আসি তখন পুলকে হাসি, পশ্চাতে যবে ফিরে যায় দোলা ভয়ে আঁখিজলে ভাসি। সমুখে যেমন পিছেও তেমন, মিছে করি মোরা গোল। চিরকাল একই লীলা গো-- অনন্ত কলরোল। ডান হাত হতে বাম হাতে লও, বাম হাত হতে ডানে। নিজধন তুমি নিজেই হরিয়া কী যে কর কে বা জানে। কোথা বসে আছ একেলা-- সব রবিশশী কুড়ায়ে লইয়া তালে তালে কর এ খেলা। খুলে দাও ক্ষণতরে, ঢাকা দাও ক্ষণপরে-- মোরা কেঁদে ভাবি, আমারি কী ধন কে লইল বুঝি হ'রে! দেওয়া-নেওয়া তব সকলি সমান সে কথাটি কে বা জানে। ডান হাত হতে বাম হাতে লও, বাম হাত হতে ডানে। এইমতো চলে চির কাল গো শুধু যাওয়া, শুধু আসা। চির দিনরাত আপনার সাথ আপনি খেলিছ পাশা। আছে তো যেমন যা ছিল-- হারায় নি কিছু, ফুরায় নি কিছু যে মরিল যে বা বাঁচিল। বহি সব সুখদুখ এ ভুবন হাসিমুখ, তোমারি খেলার আনন্দে তার ভরিয়া উঠেছে বুক। আছে সেই আলো, আছে সেই গান, আছে সেই ভালোবাসা। এইমতো চলে চির কাল গো শুধু যাওয়া, শুধু আসা।