নাম্নী - মুরতি (namni murati)
যে শক্তির নিত্যলীলা নানা বর্ণে আঁকা,
যে গুণী প্রজাপতির পাখা
যুগ যুগ ধ্যান করি একদা কী খনে
রচিল অপূর্ব চিত্রে বিচিত্র লিখনে--
এই নারী
রচনা তাহারি।
এ শুধু কালের খেলা
এর দেহ কী আলস্যে বিধাতা একেলা
রচিলেন সন্ধ্যাকালে
আপনার অর্থহীন ক্ষণিক খেয়ালে--
যে-লগনে
কর্মহীন ক্লান্তক্ষণে
মেঘের মহিমামায়া মুহূর্তেই মুগ্ধ করি আঁখি
অন্ধরাত্রে বিনা ক্ষোভে যায় মুখ ঢাকি।
শরতে নদীর জলে যে-ভঙ্গিমা,
বৈশাখে দাড়িম্ববনে যে-রাগরঙ্গিমা
যৌবনের দাপে
অবজ্ঞাকটাক্ষ হানে মধ্যাহ্নের তাপে,
শ্রাবণের বন্যাতলে হারা
ভেসে-যাওয়া শৈবালের যে নৃত্যের ধারা,
মাঘশেষে অশ্বত্থের কচি পাতাগুলি
যে চাঞ্চল্যে উঠে দুলি,
হেমন্তের প্রভাতবাতাসে
শিশিরে যে ঝিলিমিলি ঘাসে ঘাসে,
প্রথম আষাঢ়দিনে গুরু গুরু রবে
ময়ূরের পুচ্ছপুঞ্জ উল্লসিয়া উঠে যে গৌরবে
তাই দিয়ে রচিত সুন্দরী--
লতা যেন নারী হয়ে দিল চক্ষু ভরি।
রঙিন বুদ্বুদ্ সে কি, ইন্দ্রধনুবুঝি,
অন্তর না পাই খুঁজি--
সকলি বাহির,
চিত্ত অগভীর।
কারো পথ চেয়ে নাহি থাকে,
কারে-না-পাওয়ার দুঃখ মনে নাহি রাখে।
মুগ্ধ প্রাণ-উপহার
অনায়াসে নেয়, আর অনায়াসে ভোলে দায় তার।
ভুবনে যেখানে যত নয়নের আনন্দলহরী
তাই দেখা দিতে এল নারীমূর্তি ধরি।
সরস্বতী রচিলেন মন তার কোন্ অবসরে
রাগহীন বাণীহীন গুঞ্জনের স্বরে;
অমৃতে-মাটিতে-মেশা সৃজনের এ কোন্ সুরতি--
নাম কি মুরতি।