এসেছিল বহু আগে যারা মোর দ্বারে, যারা চলে গেছে একেবারে, ফাগুন-মধ্যাহ্নবেলা শিরীষছায়ায় চুপে চুপে তারা ছায়ারূপে আসে যায় হিল্লোলিত শ্যাম দুর্বাদলে। ঘন কালো দিঘিজলে পিছনে-ফিরিয়া-চাওয়া আঁখি জ্বলো জ্বলো করে ছলোছলো। মরণের অমরতালোকে ধূসর আঁচল মেলি ফিরে তারা গেরুয়া আলোকে। যে এখনো আসে নাই মোর পথে, কখনো যে আসিবে না আমার জগতে, তার ছবি আঁকিয়াছি মনে-- একেলা সে বাতায়নে বিদেশিনী জন্মকাল হতে। সে যেন শেঁউলি ভাসে ক্ষীণ মৃদু স্রোতে, কোথায় তাহার দেশ নাই সে উদ্দেশ। চেয়ে আছে দূর-পানে কার লাগি আপনি সে নাহি জানে। সেই দূরে ছায়ারূপে রয়েছে সে বিশ্বের সকল-শেষে যে আসিতে পারিত তবুও এল না কভুও। জীবনের মরীচিকাদেশে মরুকন্যাটির আঁখি ফিরে ভেসে ভেসে।
সুধাকান্ত বচনের রচনে অক্লান্ত-- মুখে কথা নাহি বাধে, পসরা ভরিয়া রাখে বহুবিধ কুড়ানো সংবাদে, প্রত্যহ কন্ঠের পায় সাড়া পাড়া হতে পাড়া। আজি তার আত্মত্যাগ বাক্যত্যাগে হয়েছে কঠোর রোগীর সেবার কার্যে মোর। ও পাশের ঘরে দিন কাটে সঙ্গীহীন নিঃশব্দ প্রহরে। বাধা দেয় যাদের প্রবেশে আহা যদি কাছে পেত, এই ব'লে মরে যে ক্ষোভে সে। তবু বিধাতার বর আছে তার পর, বাক্যরুদ্ধ হয়ে গেলে তবু তার কাছে অন্য পথ আছে। অনায়াসে শব্দ আর মিল কলমের মুখে তার করে কিলবিল। মোর দিনমান মুখর খাতায় তার যাহা তাহা দিতেছে জোগান রচে বসি তুচ্ছতার ছবি-- ভয়ে মরি ছাই-চাপা পড়ে বুঝি কবি। মনে আছে একমাত্র আশা বুদ্বুদের ইতিহাসে সুদীর্ঘ কালের নেই ভাষা। বাহিরেতে চলিয়াছে দেশে দেশে বিরাটের পালা অকিঞ্চিৎকরের স্তূপ জমাইছে এ আরোগ্যশালা। লিখিবার কথা কোথা রুদ্ধ ঘরে দু' চক্ষু বুলাই। কোনোমতে ছড়া কেটে নিজের ভুলাই। ধাক্কা তারে দেয় পিছে খ্যাপা ঊনপঞ্চাশ বায়ু,এবেলা ওবেলা তার আয়ু, এরি মধ্যে কবি-বেশে সুধাকান্ত এল ইহাকেই বলে না কি strange bed-fellow!