এই দুয়ারটি খোলা। আমার খেলা খেলবে বলে আপনি হেথায় আস চলে ওগো আপন-ভোলা। ফুলের মালা দোলে গলে, পুলক লাগে চরণতলে কাঁচা নবীন ঘাসে। এসো আমার আপন ঘরে, ব'সো আমার আসন-'পরে লহ আমার পাশে। এমনিতরো লীলার বেশে যখন তুমি দাঁড়াও এসে দাও আমারে দোলা। ওঠে হাসি নয়নবারি, তোমায় যখন চিনতে নারি ওগো আপন-ভোলা। কত রাতে, কত প্রাতে, কত গভীর বরষাতে, কত বসন্তে, তোমায় আমায় সকৌতুকে কেটেছে দিন দুঃখে সুখে কত আনন্দে। আমার পরশ পাবে বলে আমায় তুমি নিলে কোলে কেউ তো জানে না তা। রইল আকাশ অবাক মানি, করল কেবল কানাকানি বনের লতাপাতা। মোদের দোঁহার সেই কাহিনী ধরেছে আজ কোন্ রাগিণী ফুলের সুগন্ধে? সেই মিলনের চাওয়া-পাওয়া গেয়ে বেড়ায় দখিন হাওয়া কত বসন্তে। মাঝে মাঝে ক্ষণে ক্ষণে যেন তোমায় হল মনে ধরা পড়েছ। মন বলেছে "তুমি কে গো, চেনা মানুষ চিনি নে গো, কী বেশ ধরেছ?" রোজ দেখেছি দিনের কাজে পথের মাঝে ঘরের মাঝে করছ যাওয়া-আসা; হঠাৎ কবে এক নিমেষে তোমার মুখের সামনে এসে পাই নে খুঁজে ভাষা। সেদিন দেখি পাখির গানে কী যে বলে কেউ না জানে- কী গুণ করেছ। চেনা মুখের ঘোমটা-আড়ে অচেনা সেই উঁকি মারে ধরা পড়েছ।
দেখছ না কি, নীল মেঘে আজ আকাশ অন্ধকার। সাত সমুদ্র তেরো নদী আজকে হব পার। নাই গোবিন্দ, নাই মুকুন্দ, নাইকো হরিশ খোঁড়া। তাই ভাবি যে কাকে আমি করব আমার ঘোড়া। কাগজ ছিঁড়ে এনেছি এই বাবার খাতা থেকে, নৌকো দে না বানিয়ে, অমনি দিস, মা, ছবি এঁকে। রাগ করবেন বাবা বুঝি দিল্লি থেকে ফিরে? ততক্ষণ যে চলে যাব সাত সমুদ্র তীরে। এমনি কি তোর কাজ আছে, মা, কাজ তো রোজই থাকে। বাবার চিঠি এক্খুনি কি দিতেই হবে ডাকে? নাই বা চিঠি ডাকে দিলে আমার কথা রাখো, আজকে না হয় বাবার চিঠি মাসি লিখুন নাকো! আমার এ যে দরকারি কাজ বুঝতে পার না কি? দেরি হলেই একেবারে সব যে হবে ফাঁকি। মেঘ কেটে যেই রোদ উঠবে বৃষ্টি বন্ধ হলে সাত সমুদ্র তেরো নদী কোথায় যাবে চলে!