এগারো (phalguner rongin abesh)
ফাল্গুনের রঙিন আবেশ
যেমন দিনে দিনে মিলিয়ে দেয় বনভূমি
নীরস বৈশাখের রিক্ততায়,
তেমনি করেই সরিয়ে ফেলেছ হে প্রমদা, তোমার মদির মায়া
অনাদরে অবহেলায় ।
একদিন আপন হাতে আমার চোখে বিছিয়েছিলে বিহ্বলতা,
রক্তে দিয়েছিলে দোল,
চিত্তে ভরেছিলে নেশায়,হে আমার সাকী,
পাত্র উজাড় ক'রে
জাদুরসধারা আজ ঢেলে দিয়েছ ধুলায় ।
আজ উপেক্ষা করেছ আমার স্তুতিকে,
আমার দুই চক্ষুর বিস্ময়কে ডাক দিতে ভুলে গেলে;
আজ তোমার সাজের মধ্যে কোনো আকুতি নেই;
নেই সেই নীরব সুরের ঝংকার
যা আমার নামকে দিয়েছিল রাগিণী ।
শুনেছি একদিন চাঁদের দেহ ঘিরে
ছিল হাওয়ার আবর্ত ।
তখন ছিল তার রঙের শিল্প,
ছিল সুরের মন্ত্র,
ছিল সে নিত্য নবীন ।
দিনে দিনে উদাসী কেন ঘুচিয়ে দিল
আপন লীলার প্রবাহ ।
কেন ক্লান্ত হল সে আপনার মাধুর্যকে নিয়ে ।
আজ শুধু তার মধ্যে আছে
আলোছায়ার মৈত্রীবিহীন দ্বন্দ্ব --
ফোটে না ফুল,
বহে না কলমুখরা নির্ঝরিণী ।
সেই বাণীহারা চাঁদ তুমি আজ আমার কাছে ।
দুঃখ এই যে,এতে দুঃখ নেই তোমার মনে ।
একদিন নিজেকে নূতন নূতন ক'রে সৃষ্টি করেছিলে মায়াবিনী,
আমারই ভালোলাগার রঙে রঙিয়ে ।
আজ তারই উপর তুমি টেনে দিলে
যুগান্তের কালো যবনিকা
বর্ণহীন,ভাষাহীন ।
ভুলে গেছ যতই দিতে এসেছিলে আপনাকে
ততই পেয়েছিলে আপনাকে বিচিত্র করে ।
আজ আমাকে বঞ্চিত করে
বঞ্চিত হয়েছ আপন সার্থকতায় ।
তোমার মাধুর্যযুগের ভগ্নশেষ
রইল আমার মনের স্তরে স্তরে --
সেদিনকার তোরণের স্তুপ,
প্রাসাদের ভিত্তি,
গুল্মে-ঢাকা বাগানের পথ ।
আমি বাস করি
তোমার ভাঙা ঐশ্বর্যের ছড়ানো টুকরোর মধ্যে ।
আমি খুঁজে বেড়াই মাটির তলার অন্ধকার,
কুড়িয়ে রাখি যা ঠেকে হাতে ।
আর তুমি আছ
আপন কৃপণতার পাণ্ডুর মরুদেশে,
পিপাসিতের জন্যে জল নেই সেখানে,
পিপাসাকে ছলনা করতে পারে
নেই এমন মরীচিকারও সম্বল ।