বিপাশা (bipasha)
মায়ামৃগী, নাই বা তুমি
পড়লে প্রেমের ফাঁদে।
ফাগুন-রাতে চোরা মেঘে
নাই হরিল চাঁদে।
বাঁধন-কাটা ভাব্না তোমার
হাওয়ায় পাখা মেলে,
দেহমনে চঞ্চলতার
নিত্য যে ঢেউ খেলে।
ঝরনা-ধারার মতো সদাই
মুক্ত তোমার গতি,
নাই বা নিলে তটের শরণ
তায় বা কিসের ক্ষতি।
শরৎপ্রাতের মেঘ যে তুমি
শুভ্র আলোয় ধোওয়া,
একটুখানি অরুণ-আভার
সোনার-হাসি-ছোঁওয়া।
শূন্য পথে মনোরথে
ফেরো আকাশ-পার,
বুকের মাঝে নাই বহিলে
অশ্রুজলের ভার।
এমনি করেই যাও খেলে যাও
অকারণের খেলা,
ছুটির স্রোতে যাক-না ভেসে
হালকা খুশির ভেলা।
পথে চাওয়ার ক্লান্তি কেন
নামবে আঁখির পাতে,
কাছের সোহাগ ছাড়বে কেন
দূরের দুরাশাতে।
তোমার পায়ের নূপুরখানি
বাজাক নিত্যকাল
অশোকবনের চিকন পাতার
চমক-আলোর তাল।
রাতের গায়ে পুলক দিয়ে
জোনাক যেমন জ্বলে
তেমনি তোমার খেয়ালগুলি
উড়ুক স্বপন-তলে।
যারা তোমার সঙ্গ-কাঙাল
বাইরে বেড়ায় ঘুরে--
ভিড় যেন না করে তোমার
মনের অন্তঃপুরে।
সরোবরের পদ্ম তুমি,
আপন চারি দিকে
মেলে রেখো তরল জলের
সরল বিঘ্নটিকে।
গন্ধ তোমার হোক-না সবার,
মনে রেখো তবু
বৃন্ত যেন চুরির ছুরি
নাগাল না পায় কভু।
আমার কথা শুধাও যদি--
চাবার তরেই চাই,
পাবার তরে চিত্তে আমার
ভাব্ না কিছুই নাই।
তোমার পানে নিবিড় টানের
বেদন-ভরা সুখ
মনকে আমার রাখে যেন
নিয়ত উৎসুক।
চাই না তোমায় ধরতে আমি
মোর বাসনায় ঢেকে,
আকাশ থেকেই গান গেয়ে যাও--
নয় খাঁচাটার থেকে।