মুক্তি (mukti)
মুক্তি নানা মূর্তি ধরি দেখা দিতে আসে নানা জনে --
এক পন্থা নহে।
পরিপূর্ণতার সুধা নানা স্বাদে ভুবনে ভুবনে
নানা স্রোতে বহে।
সৃষ্টি মোর সৃষ্টি-সাথে মেলে যেথা, সেথা পাই ছাড়া,
মুক্তি যে আমারে তাই সংগীতের মাঝে দেয় সাড়া,
সেথা আমি খেলা-খ্যাপা বালকের মতো লক্ষ্মীছাড়া
লক্ষ্যহীন নগ্ন নিরুদ্দেশ।
সেথা মোর চির নব, সেথা মোর চিরন্তন শেষ।
মাঝে মাঝে গানে মোর সুর আসে যে সুরে, হে গুণী,
তোমারে চিনায়।
বেঁধে দিয়ো নিজহাতে সেই নিত্য সুরের ফাল্গুনী
আমার বীণায়।
তা হলে বুঝিব আমি ধূলি কোন্ ছন্দে হয় ফুল
বসন্তের ইন্দ্রজালে অরণ্যেরে করিয়া ব্যাকুল,
নব নব মায়াচ্ছায়া কোন্ নৃত্যে নিয়ত দোদুল
বর্ণ বর্ণ ঋতুর দোলায়।
তোমারি আপন সুর কোন্ তালে তোমারে ভোলায়।
যেদিন আমার গান মিলে যাবে তোমার গানের
সুরের ভঙ্গিতে
মুক্তির সংগমতীর্থ পাব আমি আমারি প্রাণের
আপন সংগীতে।
সেদিন বুঝিব মনে নাই নাই বস্তুর বন্ধন,
শূন্যে শূন্যে রূপ ধরে তোমারি এ বীণার স্পন্দন --
নেমে যাবে সব বোঝা, থেমে যাবে সকল ক্রন্দন,
ছন্দে তালে ভুলিব আপনা,
বিশ্বগীতপদ্মদলে স্তব্ধ হবে অশান্ত ভাবনা।
সঁপি দিব সুখ দুঃখ আশা ও নৈরাশ্য যত-কিছু
তব বীণাতারে --
ধরিবে গানের মূর্তি, একান্তে করিয়া মাথা নিচু
শুনিব তাহারে।
দেখিব তাদের যেথা ইন্দ্রধনু অকস্মাৎ ফুটে,
দিগন্তে বনের প্রান্তে উষার উত্তরী যেথা লুটে,
বিবাগী ফুলের গন্ধ মধ্যাহ্নে যেথায় যায় ছুটে --
নীড়ে-ধাওয়া পাখির ডানায়
সায়াহ্নগগন যেথা দিবসেরে বিদায় জানায়।
সেদিন আমার রক্তে শুনা যাবে দিবসরাত্রির
নৃত্যের নূপুর।
নক্ষত্র বাজাবে বক্ষে বংশীধ্বনি আকাশযাত্রীর
আলোকবেণুর।
সেদিন বিশ্বের তৃণ মোর অঙ্গে হবে রোমাঞ্চিত,
আমার হৃদয় হবে কিংশুকের রক্তিমালাঞ্ছিত;
সেদিন আমার মুক্তি, যবে হবে, হে চিরবাঞ্ছিত,
তোমার লীলায় মোর লীলা --
যেদিন তোমার সঙ্গে গীতরঙ্গে তালে তালে মিলা।