প্রভাতী (probhati)
চপল ভ্রমর, হে কালো কাজল আঁখি,
খনে খনে এসে চলে যাও থাকি থাকি।
হৃদয়কমল টুটিয়া সকল বন্ধ
বাতাসে বাতাসে মেলি দেয় তার গন্ধ,
তোমারে পাঠায় ডাকি
হে কালো কাজল আঁখি।
যেথায় তাহার গোপন সোনার রেণু
সেথা বাজে তার বেণু;
বলে-- এসো, এসো, লও খুঁজে লও মোরে,
মধুসঞ্চয় দিয়ো না ব্যর্থ করে,
এসো এ বক্ষোমাঝে,
কবে হবে দিন আঁধারে বিলীন সাঁঝে।
দেখো চেয়ে কোন্ উতলা পবনবেগে
সুরের আঘাত লেগে
মোর সরোবরে জলতল ছলছলি
এপারে ওপারে করে কী যে বলাবলি,
তরঙ্গ উঠে জেগে।
গিয়েছে আঁধার গোপনে-কাঁদার রাতি,
নিখিল ভুবন হেরো কী আশায় মাতি
আছে অঞ্জলি পাতি।
হেরো গগনের নীল শতদলখানি
মেলিল নীরব বাণী।
অরুণপক্ষ প্রসারি সকৌতুকে
সোনার ভ্রমর আসিল তাহার বুকে
কোথা হতে নাহি জানি।
চপল ভ্রমর, হে কালো কাজল আঁখি,
এখনো তোমার সময় আসিল না কি।
মোর রজনীর ভেঙেছে তিমিরবাঁধ
পাও নি কি সংবাদ।
জেগে-ওঠা প্রাণে উথলিছে ব্যাকুলতা,
দিকে দিকে আজি রটে নি কি সে বারতা।
শোন নি কী গাহে পাখি,
হে কালো কাজল আঁখি।
শিশিরশিহরা পল্লব-ঝলমল্
বেণুশাখাগুলি খনে খনে টলমল্,
অকৃপণ বনে ছেয়ে গেল ফুলদল--
কিছু না রহিল বাকি।
এল যে আমার মন-বিলাবার বেলা,
খেলিব এবার সব-হারাবার খেলা,
যা-কিছু দেবার রাখিব না আর ঢাকি
হে কালো কাজল আঁখি।