উৎসবের দিন (utsober dine)
ভয় নিত্য জেগে আছে প্রেমের শিয়র-কাছে,
মিলনসুখের বক্ষোমাঝে।
আনন্দের হৃৎস্পন্দনে আন্দোলিছে ক্ষণে ক্ষণে
বেদনার রুদ্র দেবতা যে!
তাই আজ উৎসবের ভোরবেলা হতে
বাষ্পাকুল অরুণের করুণ আলোতে
উল্লাসকল্লোলতলে ভৈরবী রাগিণী কেঁদে বাজে
মিলনসুখের বক্ষোমাঝে।
নবীন পল্লবপুটে মর্মরি মর্মরি উঠে
দূর বিরহের দীর্ঘশ্বাস।
উষার সীমান্ত লেখা উদয়সিন্দূররেখা
মনে আনে সন্ধ্যার আকাশ।
আম্রের মুকুলগন্ধে ব্যাকুল কী সুর
অরণ্যছায়ার হিয়া করিছে বিধুর,
অশ্রুর অশ্রুত ধ্বনি ফাল্গুনের মর্মে করে বাস--
দূর বিরহের দীর্ঘশ্বাস।
দিগন্তের স্বর্ণদ্বারে কতবার বারে বারে
এসেছিল সৌভাগ্য-লগন।
আশার লাবণ্যে ভরা জেগেছিল বসুন্ধরা,
হেসেছিল প্রভাতগগন।
কত-না উৎসুক বুকে পথপানে ধাওয়া,
কত-না চকিত চক্ষে প্রতীক্ষার চাওয়া
বারে বারে বসন্তেরে করেছিল চাঞ্চল্যে মগন,
এসেছিল সৌভাগ্য-লগন।
আজ উৎসবের সুরে তারা মরে ঘুরে ঘুরে
বাতাসেরে করে যে উদাস।
তাদের পরশ পায়, কী মায়াতে ভরে যায়
প্রভাতের স্নিগ্ধ অবকাশ।
তাদের চমক লাগে চম্পকশাখায়,
কাঁপে তারা মৌমাছির গুঞ্জিত পাখায়,
সেতারের তারে তারে মূর্ছনায় তাদের আভাস
বাতাসেরে করিল উদাস।
কালস্রোতে এ অকূলে আলোচ্ছায়া দুলে দুলে
চলে নিত্য অজানার টানে।
বাঁশি কেন রহি রহি সে আহ্বান আনে বহি
আজি এই উল্লাসের গানে?
চঞ্চলেরে শুনাইছে স্তব্ধতার ভাষা,
যার রাত্রি-নীড়ে আসে যত শঙ্কা আশা।
বাঁশি কেন প্রশ্ন করে, "বিশ্ব কোন্ অনন্তের পানে
চলে নিত্য অজানার টানে?'
যায় যাক্, যায় যাক্, আসুক দূরের ডাক,
যাক ছিঁড়ে সকল বন্ধন--
চলার সংঘাত-বেগে সংগীত উঠুক জেগে
আকাশের হৃদয়-নন্দন।
মুহূর্তের নৃত্যচ্ছন্দে ক্ষণিকের দল
যাক পথে মত্ত হয়ে বাজায়ে মাদল।
অনিত্যের স্রোত বেয়ে যাক ভেসে হাসি ও ক্রন্দন,
যাক ছিঁড়ে সকল বন্ধন।