উদয়ন, শান্তিনিকেতন, ২২ ফাল্গুন, ১৩৪৬


 

দূরের গান (durer gan)


সুদূরের পানে চাওয়া উৎকণ্ঠিত আমি

     মন সেই আঘাটায় তীর্থপথগামী

যেথায় হঠাৎ-নামা প্লাবনের জলে

          তটপ্লাবী কোলাহলে

     ওপারের আনে আহ্বান,

          নিরুদ্দেশ পথিকের গান।

ফেনোচ্ছ্বল সে-নদীর বন্ধহারা জলে

          পণ্যতরী নাহি চলে,

কেবল অলস মেঘ ব্যর্থ ছায়া-ভাসানের খেলা

          খেলাইছে এবেলা ওবেলা।

দিগন্তের নীলিমার স্পর্শ দিয়ে ঘেরা

     গোধূলিলগ্নের যাত্রী মোর স্বপনেরা।

          নীল আলো প্রেয়সীর আঁখিপ্রান্ত হতে

নিয়ে যায় চিত্ত মোর অকূলের অবারিত স্রোতে;

     চেয়ে চেয়ে দেখি সেই নিকটতমারে

          অজানার অতিদূর পারে।

          মোর জন্মকালে

     নিশীথে সে কে মোরে ভাসালে

দীপ-জ্বালা ভেলাখানি নামহারা অদৃশ্যের পানে;

          আজিও চলেছি তার টানে।

               বাসাহারা মোর মন

তারার আলোতে কোন্‌ অধরাকে করে অন্বেষণ

          পথে পথে

            দূরের জগতে।

ওগো দূরবাসী,

কে শুনিতে চাও মোর চিরপ্রবাসের এই বাঁশি--

     অকারণ বেদনার ভৈরবীর সুরে

          চেনার সীমানা হতে দূরে

     যার গান কক্ষচ্যুত তারা

চিররাত্রি আকাশেতে খুঁজিছে কিনারা।

     এ বাঁশি দিবে সে-মন্ত্র যে-মন্ত্রের গুণে

          আজি এ ফাল্গুনে

কুসুমিত অরণ্যের গভীর রহস্যখানি

     তোমার সর্বাঙ্গে মনে দিবে আনি

          সৃষ্টির প্রথম গূঢ়বাণী।

     যেই বাণী অনাদির সুচিরবাঞ্ছিত

তারায় তারায় শূন্যে হল রোমাঞ্চিত,

          রূপেরে আনিল ডাকি

  অরূপের অসীমেতে জ্যোতিঃসীমা আঁকি।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •