প্রকাশকাল : ১২৮৯


 

সন্ধ্যা (byathaa barho baajiyaachhe praane)


ব্যথা বড়ো বাজিয়াছে প্রাণে,

সন্ধ্যা তুই ধীরে ধীরে আয়!

কাছে আয়--আরো কাছে আয়--

সঙ্গীহারা হৃদয় আমার

তোর বুকে লুকাইতে চায়।

আমার ব্যথার তুই ব্যথী,

তুই মোর একমাত্র সাথী,

সন্ধ্যা তুই আমার আলয়,

তোরে আমি বড়ো ভালবাসি--

সারাদিন ঘুরে ঘুরে ঘুরে

তোর কোলে ঘুমাইতে আসি,

তোর কাছে ফেলি রে নিশ্বাস,

তোর কাছে কহি মনোকথা,

তোর কাছে করি প্রসারিত

প্রাণের নিভৃত নীরবতা।

তোর গান শুনিতে শুনিতে

তোর তারা গুনিতে গুনিতে,

নয়ন মুদিয়া আসে মোর,

হৃদয় হইয়া আসে ভোর--

স্বপন-গোধূলিময় প্রাণ

হারায় প্রাণের মাঝে তোর!

একটি কথাও নাই মুখে,

চেয়ে শুধু রোস মুখপানে

অনিমেষ আনত নয়ানে।

ধীরে শুধু ফেলিস নিশ্বাস,

ধীরে শুধু কানে কানে গাস

ঘুম-পাড়াবার মৃদু গান,

কোমল কমল কর দিয়ে

ঢেকে শুধু দিস দুনয়ান,

ভুলে যাই সকল যাতনা

জুড়াইয়া আসে মোর প্রাণ!

তাই তোরে ডাকি একবার

সঙ্গীহারা হৃদয় আমার,

তোর বুকে লুকাইয়া মাথা

তোর কোলে ঘুমাইতে চায়,

সন্ধ্যা তুই ধীরে ধীরে আয়।

আঁধার আঁচল দিয়ে তোর

আমার দুখেরে ঢেকে রাখ,

বল তারে ঘুমাইতে বল

কপালেতে হাতখানি রাখ,

জগতেরে ক'রে দে আড়াল,

কোলাহল করিয়া দে দূর--

দুখেরে কোলেতে করে নিয়ে

র'চে দে নিভৃত অন্তঃপুর।

তা হলে সে কাঁদিবে বসিয়া,

কল্পনার খেলেনা গড়িবে,

          খেলিয়া আপন মনে          কাঁদিয়া কাঁদিয়া, শেষে

                    আপনি সে ঘুমায়ে পড়িবে।

          আয় সন্ধ্যা ধীরে ধীরে আয়,

          হাতে লয়ে স্বপনের ডালা

গুন্‌ গুন্‌ মন্ত্র পড়ি পড়ি

গাঁথিয়া দে স্বপনের মালা,

জড়ায়ে দে আমার মাথায়,

স্নেহ-হস্ত বুলায়ে দে গায়!

          স্রোতস্বিনী ঘুমঘোরে,          গাবে কুলু কুলু করে

                    ঘুমেতে জড়িত আধো গান,

                    ঝিল্লিরা ধরিবে একতান,

          দিনশ্রমে শ্রান্ত বায়ু              গৃহমুখে যেতে যেতে

                    গান গাবে অতি মৃদু স্বরে,

          পদশব্দ শুনি তার              তন্দ্রা ভাঙি লতা পাতা

                    র্ভৎসনা করিবে মরমরে।

          ভাঙা ভাঙা গানগুলি          মিলিয়া হৃদয়-মাঝে

                    মিশে যাবে স্বপনের সাথে,

নানাবিধ রূপ ধরি              ভ্রমিয়া বেড়াবে তারা,

          হৃদয়ের গুহাতে গুহাতে!

আয় সন্ধ্যা ধীরে ধীরে আয়,

আন তোর স্বর্ণ মেঘজাল,

পশ্চিমের সুবর্ণ প্রাঙ্গণে

খেলিবি মেঘের ইন্দ্রজাল!

ওই তোর ভাঙা মেঘগুলি,

হৃদয়ের খেলেনা আমার,

ওইগুলি কোলে করে নিয়ে

সাধ যায় খেলি অনিবার।

ওই তোর জলদের 'পর

বাঁধি আমি কত শত ঘর!

সাধ যায় হোথায় লুটাই,

অস্তগামী রবির মতন,

লুটায়ে লুটায়ে পড়ি শেষে

সাগরের ওই প্রান্তদেশে

তরল কনক নিকেতন!

ছোটো ছোটো ওই তারাগুলি,

ডাকে মোরে আঁখি-পাতা খুলি।

স্নেহময় আঁখিগুলি যেন

আছে শুধু মোর পথ চেয়ে,

সন্ধ্যার আঁধারে বসি বসি

কহে যেন গান গেয়ে গেয়ে,

"কবে তুমি আসিবে হেথায়

অন্ধকার নিভৃত-নিলয়ে,

জগতের অতি প্রান্তদেশে

প্রদীপটি রেখেছি জ্বালায়ে!

বিজনেতে রয়েছি বসিয়া

কবে তুমি আসিবে হেথায়!'

সন্ধ্যা হলে মোর মুখ চেয়ে

তারাগুলি এই গান গায়!

আয় সন্ধ্যা ধীরে ধীরে আয়,

জগতের নয়ন ঢেকে দে--

আঁধার আঁচল পেতে দিয়ে

কোলেতে মাথাটি রেখে দে!

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •