সংগ্রাম-সংগীত (sangraam sangeet)
হৃদয়ের সাথে আজি
করিব রে করিব সংগ্রাম।
এতদিন কিছু না করিনু
এতদিন বসে রহিলাম,
আজি এই হৃদয়ের সাথে
একবার করিব সংগ্রাম।
বিদ্রোহী এ হৃদয় আমার
জগৎ করিছে ছারখার।
গ্রাসিছে চাঁদের কায়া ফেলিয়া আঁধার ছায়া
সুবিশাল রাহুর আকার।
মেলিয়া আঁধার গ্রাস দিনেরে দিতেছে ত্রাস
মলিন করিছে মুখ তার।
উষার মুখের হাসি লয়েছে কাড়িয়া,
গভীর বিরামময় সন্ধ্যার প্রাণের মাঝে
দুরন্ত অশান্তি এক দিয়াছে ছাড়িয়া।
প্রাণ হতে মুছিতেছে অরুণের রাগ,
দিতেছে প্রাণের মাঝে কলঙ্কের দাগ।
প্রাণের পাখির গান দিয়াছে থামায়ে,
বেড়ায় যে সাধগুলি মেঘের দোলায় দুলি
তাদের দিয়াছে হায় ভূতলে নামায়ে।
ক্রমশই বিছাইছে অন্ধকার পাখা,
আঁখি হতে সবকিছু পড়িতেছে ঢাকা।
ফুল ফুটে, আমি আর দেখিতে না পাই,
পাখী গাহে, মোর কাছে গাহে না সে আর;
দিন হল, আলো হল, তবু দিন নাই,
আমি শুধু নেহারি পাখার অন্ধকার।
মিছা বসে রহিব না আর
চরাচর হারায় আমার।
রাজ্যহারা ভিখারির সাজে
দগ্ধ ধ্বংস-ভস্ম-'পরি ভ্রমিব কি হাহা করি
জগতের মরুভূমি-মাঝে?
আজ তবে হৃদয়ের সাথে
একবার করিব সংগ্রাম।
ফিরে নেব, কেড়ে নেব আমি
জগতের একেকটি গ্রাম।
ফিরে নেব রষিশশীতারা,
ফিরে নেব সন্ধ্যা আর উষা
পৃথিবীর শ্যামল যৌবন,
কাননের ফুলময় ভূষা।
ফিরে নেব হারানো সংগীত,
ফিরে নেব মৃতের জীবন,
জগতের ললাট হইতে
আঁধার করিব প্রক্ষালন।
আমি হব সংগ্রামে বিজয়ী,
হৃদয়ের হবে পরাজয়,
জগতের দূর হবে ভয়।
হৃদয়েরে রেখে দেব বেঁধে,
বিরলে মরিবে কেঁদে কেঁদে।
দুঃখে বিঁধি কষ্টে বিঁধি জর্জর করিব হৃদি--
বন্দী হয়ে কাটাবে দিবস,
অবশেষে হইবে সে বশ,
জগতে রটিবে মোর যশ।
বিশ্বচরাচরময় উচ্ছ্বসিবে জয় জয়,
উল্লাসে পুরিবে চারি ধার,
গাবে রবি, গাবে শশী, গাবে তারা শূন্যে বসি,
গাবে বায়ু শত শত বার।
চারি দিকে দিবে হুলুধ্বনি,
বরষিষে কুসুম-আসার,
বেঁধে দেব বিজয়ের মালা
শান্তিময় ললাটে আমার।