ভাগীরথী (bhagirothi)
পূর্বযুগে, ভাগীরথী, তোমার চরণে দিল আনি
মর্তের ক্রন্দনবাণী;
সঞ্জীবনীতপস্যায় ভগীরথ
উত্তরিল দুর্গম পর্বত,
নিয়ে গেল তোমা-কাছে মৃত্যুবন্দী প্রেতের আহ্বান--
ডাক দিল, আনো আনো প্রাণ--
নিবেদিল, হে চৈতন্যস্বরূপিণী তুমি,
গৈরিক অঞ্চল তব চুমি
তৃণে শষ্পে রোমাঞ্চিত হোক মরুতল,
ফলহীনে দাও ফল,
পুষ্পবন্ধ্যালতিকার ঘুচাও ব্যর্থতা,
নির্বাক্ ভূমির মুখে দাও কথা।
তুমি যে প্রাণের ছবি,
হে জাহ্নবী--
ধরণীর আদিসুপ্তি ভেঙে দিয়ে যেথা যাও চলে
জাগ্রত কল্লোলে
গানে মুখরিয়া উঠে মাটির প্রাঙ্গণ,
দুই তীরে জেগে ওঠে বন;
তট বেয়ে মাথা তোলে নগরনগরী
জীবনের আয়োজনে ভাণ্ডার ঐশ্বর্যে ভরি ভরি।
মানুষের মুখ্যভয় মৃত্যুভয়,
কেমনে করিবে তারে জয়
নাহি জানে;
তাই সে হেরিছে ধ্যানে,
মৃত্যুবিজয়ীর জটা হতে
অক্ষয় অমৃতস্রোতে
প্রতিক্ষণে নামিছ ধরায়।
পুণ্যতীর্থতটে সে যে তোমার প্রসাদ পেতে চায়।
সে ডাকিছে-- মিথ্যাশঙ্কা-নাগপাশে ঘুচাও ঘুচাও,
মরণেরে যে কালিমা লেপিয়াছি সে তুমি মুছাও;
গম্ভীর অভয়মূর্তি মরণের
তব কলধ্বনিমাঝে গান ঢেলে দিক তরণের
এ জন্মের শেষ ঘাটে;
নিরুদ্দেশ যাত্রীর ললাটে
স্পর্শ দিক আশীর্বাদ তব,
নিক সে নূতন পথে যাত্রার পাথেয় অভিনব;
শেষ দণ্ডে ভরে দিক তার কান
অজানা সমুদ্রপথে তব নিত্য-অভিসার-গান।