এসেছি সুদূর কাল থেকে। তোমাদের কালে পৌঁছলেম যে সময়ে তখন আমার সঙ্গী নেই। ঘাটে ঘাটে কে কোথায় নেবে গেছে। ছোটো ছোটো চেনা সুখ যত, প্রাণের উপকরণ, দিনের রাতের মুষ্টিদান এসেছি নিঃশেষ করে বহুদূর পারে। এ জীবনে পা দিয়েছি প্রথম যে কালে সে কালের 'পরে অধিকার দৃঢ় হয়েছিল দিনে দিনে ভাবে ও ভাষায় কাজে ও ইঙ্গিতে, প্রণয়ের প্রাত্যহিক দেনাপাওনায়। হেসে খেলে কোনোমতে সকলের সঙ্গে বেঁচে থাকা, লোকযাত্রারথে কিছু কিছু গতিবেগ দেওয়া, শুধু উপস্থিত থেকে প্রাণের আসরে ভিড় জমা করা, এই তো যথেষ্ট ছিল। আজ তোমাদের কালে প্রবাসী অপরিচিত আমি। আমাদের ভাষার ইশারা নিয়েছে নূতন অর্থ তোমাদের মুখে। ঋতুর বদল হয়ে গেছে, -- বাতাসের উলটো-পালটা ঘ'টে প্রকৃতির হল বর্ণভেদ। ছোটো ছোটো বৈষম্যের দল দেয় ঠেলা, করে হাসাহাসি। রুচি আশা অভিলাষ যা মিশিয়ে জীবনের স্বাদ, তার হল রসবিপর্যয়। আমাদের সেকালকে যে সঙ্গ দিয়েছি যতই সামান্য হোক মূল্য তার তবু সেই সঙ্গসূত্রে গাঁথা হয়ে মানুষে মানুষে রচেছিল যুগের স্বরূপ, -- আমার সে সঙ্গ আজ মেলে না যে তোমাদের প্রত্যহের মাপে। কালের নৈবেদ্যে লাগে যে-সকল আধুনিক ফুল আমার বাগানে ফোটে না সে। তোমাদের যে বাসার কোণে থাকি তার খাজনার কড়ি হাতে নেই। তাই তো আমাকে দিতে হবে বড়ো কিছু দান দানের একান্ত দুঃসাহসে। উপস্থিত কালের যা দাবি মিটাবার জন্যে সে তো নয়, তাই যদি সেই দান তোমাদের রুচিতে না লাগে, তবে তার বিচার সে পরে হবে। তবু যা সম্বল আছে তাই দিয়ে একালের ঋণ শোধ করে অবশেষে ঋণী তারে রেখে যাই যেন। যা আমার লাভক্ষতি হতে বড়ো, যা আমার সুখদুঃখ হতে বেশি-- তাই যেন শেষ করে দিয়ে চলে যাই স্তুতি নিন্দা হিসাবের অপেক্ষা না রেখে।
আমার বয়সে মনকে বলবার সময় এল-- কাজ নিয়ে কোরো না বাড়াবাড়ি ধীরে সুস্থে চলো, যথোচিত পরিমাণে ভুলতে করো শুরু যাতে ফাঁক পড়ে সময়ের মাঝে মাঝে। বয়স যখন অল্প ছিল কর্তব্যের বেড়ায় ফাঁক ছিল যেখানে সেখানে। তখন যেমন-খুশির ব্রজধামে ছিল বালগোপালের লীলা। মথুরার পালা এল মাঝে, কর্তব্যের রাজাসনে। আজ আমার মন ফিরেছে সেই কাজ-ভোলার অসাবধানে। কী কী আছে দিনের দাবি পাছে সেটা যাই এড়িয়ে বন্ধু তার ফর্দ রেখে যায় টেবিলে। ফর্দটাও দেখতে ভুলি, টেবিলে এসেও বসা হয় না-- এম্নিতরো ঢিলে অবস্থা। গরম পড়েছে ফর্দে এটা না ধরলেও মনে আনতে বাধে না। পাখা কোথায়, কোথায় দার্জিলিঙের টাইম-টেবিলটা, --এমনতরো হাঁপিয়ে ওঠবার ইশারা ছিল থার্মোমিটারে। তবু ছিলেম স্থির হয়ে। বেলা দুপুর, আকাশ ঝাঁ ঝাঁ করছে, ধূ ধূ করছে মাঠ, তপ্ত বালু উড়ে যায় হূহু করে-- খেয়াল হয় না। বনমালী ভাবে দরজা বন্ধ করাটা ভদ্রঘরের কায়দা-- দিই তাকে এক ধমক। পশ্চিমের সাশির ভিতর দিয়ে রোদ ছড়িয়ে পড়ে পায়ের কাছে। বেলা যখন চারটে বেহারা এসে খবর নেয়, চিট্ঠি? হাত উলটিয়ে বলি, নাঃ। ক্ষণকালের জন্য খটকা লাগে চিঠি লেখা উচিত ছিল-- ক্ষণকালটা যায় পেরিয়ে, ডাকের সময় যায় তার পিছন পিছন। এ দিকে বাগানে পথের ধারে টগর গন্ধরাজের পুঁজি ফুরোয় না, এরা ঘাটে-জটলা-করা বউদের মতো পরস্পর হাসাহাসি ঠেলাঠেলিতে মাতিয়ে তুলেছে কুঞ্জ আমার। কোকিল ডেকে ডেকে সারা-- ইচ্ছে করে তাকে বুঝিয়ে বলি, অত একান্ত জেদ কোরো না বনান্তরের উদাসীনকে মনে রাখবার জন্যে। মাঝে মাঝে ভুলো, মাঝে মাঝে ফাঁক বিছিয়ে রেখো জীবনে; মনে রাখার মানহানি কোরো না তাকে দুঃসহ ক'রে। মনে আনবার অনেক দিন-ক্ষণ আমারো আছে, অনেক কথা, অনেক দুঃখ। তার ফাঁকের ভিতর দিয়েই নতুন বসন্তের হাওয়া আসে রজনীগন্ধার গন্ধে বিষণ্ন হয়ে; তারি ফাঁকের মধ্যে দিয়ে কাঁঠালতলার ঘন ছায়া তপ্ত মাঠের ধারে দূরের বাঁশি বাজায় অশ্রুত মূলতানে। তারি ফাঁকে ফাঁকে দেখি-- ছেলেটা ইস্কুল পালিয়ে খেলা করছে হাঁসের বাচ্ছা বুকে চেপে ধ'রে পুকুরের ধারে ঘাটের উপর একলা ব'সে সমস্ত বিকেল বেলাটা। তারি ফাঁকের ভিতর দিয়ে দেখতে পাই লিখছে চিঠি নূতন বধূ, ফেলছে ছিঁড়ে, লিখছে আবার। একটুখানি হাসি দেখা দেয় আমার মুখে, আবার একটুখানি নিশ্বাসও পড়ে।
YOU CAME TO me in the wayward hours of spring with flute songs and flowers. You troubled my heart from ripples into waves, rocking the red lotus of love. You asked me to come out with you into the secret of life. But I fell asleep among the murmurous leaves of May. When I woke the cloud gathered in the sky and the dead leaves flitted in the wind. Through the patter of rain I hear your nearing footsteps and the cry to come out with you into the secret of death. I walk to your side and put my hand into yours, while your eyes burn and water drips from your hair.