মুদিত আলোর কমল-কলিকাটিরে রেখেছে সন্ধ্যা আঁধার-পর্ণপুটে উতরিবে যবে নব-প্রভাতের তীরে তরুণ কমল আপনি উঠিবে ফুটে। উদয়াচলের সে তীর্থপথে আমি চলেছি একেলা সন্ধ্যার অনুগামী, দিনান্ত মোর দিগন্তে পড়ে লুটে। সেই প্রভাতের স্নিগ্ধ সুদূর গন্ধ আঁধার বাহিয়া রহিয়া রহিয়া আসে। আকাশে যে গান ঘুমাইছে নিঃস্পন্দ তারাদীপগুলি কাঁপিছে তাহারি শ্বাসে। অন্ধকারের বিপুল গভীর আশা, অন্ধকারের ধ্যাননিমগ্ন ভাষা বাণী খুঁজে ফিরে আমার চিত্তাকাশে। জীবনের পথ দিনের প্রান্তে এসে নিশীথের পানে গহনে হয়েছে হারা। অঙ্গুলি তুলি তারাগুলি অনিমেষে মাভৈঃ বলিয়া নীরবে দিতেছে সাড়া। ম্লান দিবসের শেষের কুসুম তুলে এ কূল হইতে নবজীবনের কূলে চলেছি আমার যাত্রা করিতে সারা। হে মোর সন্ধ্যা, যাহা-কিছু ছিল সাথে রাখিনু তোমার অঞ্চলতলে ঢাকি। আঁধারের সাথি, তোমার করুণ হাতে বাঁধিয়া দিলাম আমার হাতের রাখি। কত যে প্রাতের আশা ও রাতের গীতি, কত যে সুখের স্মৃতি ও দুখের প্রীতি-- বিদায়বেলায় আজিও রহিল বাকি। যা-কিছু পেয়েছি, যাহা-কিছু গেল চুকে, চলিতে চলিতে পিছে যা রহিল পড়ে, যে মণি দুলিল যে ব্যথা বিঁধিল বুকে, ছায়া হয়ে যাহা মিলায় দিগন্তরে-- জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা-- ধুলায় তাদের যত হোক অবহেলা, পূর্ণের পদ-পরশ তাদের 'পরে।
যদি তোমার দেখা না পাই প্রভু, এবার এ জীবনে তবে তোমায় আমি পাই নি যেন সে কথা রয় মনে। যেন ভুলে না যাই, বেদনা পাই শয়নে স্বপনে। এ সংসারের হাটে আমার যতই দিবস কাটে, আমার যতই দু হাত ভরে ওঠে ধনে, তবু কিছুই আমি পাই নি যেন সে কথা রয় মনে। যেন ভুলে না যাই, বেদনা পাই শয়নে স্বপনে। যদি আলসভরে আমি বসি পথের 'পরে, যদি ধূলায় শয়ন পাতি সযতনে, যেন সকল পথই বাকি আছে সে কথা রয় মনে। যেন ভুলে না যাই, বেদনা পাই শয়নে স্বপনে। যতই উঠে হাসি, ঘরে যতই বাজে বাঁশি, ওগো যতই গৃহ সাজাই আয়োজনে, যেন তোমায় ঘরে হয় নি আনা সে কথা রয় মনে। যেন ভুলে না যাই, বেদনা পাই শয়নে স্বপনে।