১৯ চৈত্র, ১৩৪১


 

সাত (onek hajar bochhorer)


অনেক হাজার বছরের

মরু-যবনিকার আচ্ছাদন

যখন উৎক্ষিপ্ত হল,

দেখা দিল তারিখ-হারানো লোকালয়ের

বিরাট কঙ্কাল;--

ইতিহাসের অলক্ষ্য অন্তরালে

ছিল তার জীবনক্ষেত্র।

তার মুখরিত শতাব্দী

আপনার সমস্ত কবিগান

বাণীহীন অতলে দিয়েছে বিসর্জন।

আর, যে-সব গান তখনো ছিল অঙ্কুরে, ছিল মুকুলে,

যে বিপুল সম্ভাব্য

সেদিন অনালোকে ছিল প্রচ্ছন্ন

অপ্রকাশ থেকে অপ্রকাশেই গেল মগ্ন হয়ে--

যা ছিল অপ্রজ্বল ধোঁওয়ার গোপন আচ্ছাদনে

তাও নিবল।

যা বিকাল, আর যা বিকাল না,--

দুই-ই সংসারের হাট থেকে গেল চলে

একই মূল্যের ছাপ নিয়ে।

কোথাও রইল না তার ক্ষত,

কোথাও বাজল না তার ক্ষতি।

ঐ নির্মল নিঃশব্দ আকাশে

অসংখ্য কল্প-কল্পান্তরের

হয়েছে আবর্তন।

নূতন নূতন বিশ্ব

অন্ধকারের নাড়ি ছিঁড়ে

জন্ম নিয়েছে আলোকে,

ভেসে চলেছে আলোড়িত নক্ষত্রের ফেনপুঞ্জে;

অবশেষে যুগান্তে তারা তেমনি করেই গেছে

যেমন গেছে বর্ষণশান্ত মেঘ,

যেমন গেছে ক্ষণজীবী পতঙ্গ।

মহাকাল, সন্ন্যাসী তুমি।

তোমার অতলস্পর্শ ধ্যানের তরঙ্গ-শিখরে

উচ্ছ্রিত হয়ে উঠছে সৃষ্টি

আবার নেমে যাচ্ছে ধ্যানের তরঙ্গতলে।

প্রচণ্ড বেগে চলেছে ব্যক্ত অব্যক্তের চক্রনৃত্য,

তারি নিস্তব্ধ কেন্দ্রস্থলে

তুমি আছ অবিচলিত আনন্দে।

হে নির্মম, দাও আমাকে তোমার ঐ সন্ন্যাসের দীক্ষা।

জীবন আর মৃত্যু, পাওয়া আর হারানোর মাঝখানে

যেখানে আছে অক্ষুব্ধ শান্তি

সেই সৃষ্টি-হোমাগ্নিশিখার অন্তরতম

স্তিমিত নিভৃতে

দাও আমাকে আশ্রয়।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •