শ্যামলী (shyamoli)
ওগো শ্যামলী,
আজ শ্রাবণে তোমার কালো কাজল চাহনি
চুপ করে থাকা বাঙালি মেয়েটির
ভিজে চোখের পাতায় মনের কথাটির মতো।
তোমার মাটি আজ সবুজ ভাষায় ছড়া কাটে ঘাসে ঘাসে
আকাশের বাদল-ভাষার জবাবে।
ঘন হয়ে উঠল তোমার জামের বন পাতার মেঘে,
বলছে তারা উড়ে-চলা মেঘগুলোকে হাত তুলে,
"থামো, থামো --
থামো তোমার পুব বাতাসের সওয়ারি।"
পথের ধারে গাছতলাতে তোমার বাসা, শ্যামলী,
তুমি দেবতাপাড়ায় বেদের মেয়ে,
বাসা ভাঙ বারে বারে, খালি হাতে বেরিয়ে পড় পথে,
এক নিমেষে তুমি নিঃশেষে গরিব, তুমি নির্ভাবনা।
তোমাকে যে ভালোবেসেছে
গাঁঠছড়ার বাঁধন দাও না তাকে;
বাসর-ঘরের দরজা যখন খোলে রাতের শেষে
তখন আর কোনোদিন চায় না সে পিছন ফিরে।
মুখোমুখি বসব বলে বেঁধেছিলেম মাটির বাসা
তোমার কাঁচা-বেড়া-দেওয়া আঙিনাতে।
সেদিন গান গাইল পাখিরা,
তাদের নেই অচল খাঁচা;
তারা নীড় যেমন বাঁধে তেমনি আবার ভাঙে।
বসন্তে এ পারে তাদের পালা, শীতের দিনে ও পারের অরণ্যে।
সেদিন সকালে
হাওয়ার তালে হাততালি দিলে গাছের পাতা।
আজ তাদের নাচ বনে বনে,
কাল তাদের ধুলোয় লুটিয়ে-পড়া--
তা নিয়ে নেই বিলাপ, নেই নালিশ।
বসন্ত-রাজদরবারের নকিব ওরা;
এ বেলায় ওদের কাজ, জবাব মেলে ও বেলায়।
এই ক'টা দিন তোমায় আমায় কথা হল কানে কানে;
আজ কানে কানে বলছ আমায়,
"আর নয়, এবার তোলো বাসা।"
আমি পাকা করে গাঁথি নি ভিত,
আমার মিনতি ফাঁদি নি পাথর দিয়ে তোমার দরজায়;
বাসা বেঁধেছি আলগা মাটিতে--
যে চলতি মাটি নদীর জলে এসেছিল ভেসে,
যে মাটি পড়বে গলে শ্রাবণধারায়।
যাব আমি।
তোমার ব্যথাবিহীন বিদায়দিনে
আমার ভাঙা ভিটের 'পরে গাইবে দোয়েল লেজ দুলিয়ে
এক শাহানাই বাজে তোমার বাঁশিতে, ওগো শ্যামলী,
যেদিন আসি আবার যেদিন যাই চলে।