তোমার এই মাধুরী ছাপিয়ে আকাশ ঝরবে, আমার প্রাণে নইলে সে কি কোথাও ধরবে? এই যে আলো সূর্যে গ্রহে তারায় ঝরে পড়ে শত লক্ষ ধারায় পূর্ণ হবে এ প্রাণ যখন ভরবে। তোমার ফুলে যে রঙ ঘুমের মতো লাগল আমার মনে লেগে তবে সে যে জাগল। যে প্রেম কাঁপায় বিশ্ববীণায় পুলকে সংগীতে সে উঠবে ভেসে পলকে যেদিন আমার সকল হৃদয় হরবে।
হৃদয়-পানে হৃদয় টানে, নয়ন-পানে নয়ন ছোটে, দুটি প্রাণীর কাহিনীটা এইটুকু বৈ নয়কো মোটে। শুক্লসন্ধ্যা চৈত্র মাসে হেনার গন্ধ হাওয়ায় ভাসে-- আমার বাঁশি লুটায় ভূমে, তোমার কোলে ফুলের পুঁজি। তোমার আমার এই-যে প্রণয় নিতান্তই এ সোজাসুজি। বাসন্তী-রঙ বসনখানি নেশার মতো চক্ষে ধরে, তোমার গাঁথা যূথীর মালা স্তুতির মতো বক্ষে পড়ে। একটু দেওয়া একটু রাখা, একটু প্রকাশ একটু ঢাকা, একটু হাসি একটু শরম-- দুজনের এই বোঝাবুঝি। তোমার আমার এই-যে প্রণয় নিতান্তই এ সোজাসুজি। মধুমাসের মিলন-মাঝে মহান কোনো রহস্য নেই, অসীম কোনো অবোধ কথা যায় না বেধে মনে-মনেই। আমাদের এই সুখের পিছু ছায়ার মতো নাইকো কিছু, দোঁহার মুখে দোঁহে চেয়ে নাই হৃদয়ের খোঁজাখুঁজি। মধুমাসে মোদের মিলন নিতান্তই এ সোজাসুজি। ভাষার মধ্যে তলিয়ে গিয়ে খুঁজি নে ভাই ভাষাতীত, আকাশ-পানে বাহু তুলে চাহি নে ভাই আশাতীত। যেটুকু দিই যেটুকু পাই তাহার বেশি আর কিছু নাই-- সুখের বক্ষ চেপে ধরে করি নে কেউ যোঝাযুঝি। মধুমাসে মোদের মিলন নিতান্তই এ সোজাসুজি। শুনেছিনু প্রেমের পাথার নাইকো তাহার কোনো দিশা, শুনেছিনু প্রেমের মধ্যে অসীম ক্ষুধা অসীম তৃষা-- বীণার তন্ত্রী কঠিন টানে ছিঁড়ে পড়ে প্রেমের তানে, শুনেছিনু প্রেমের কুঞ্জে অনেক বাঁকা গলিঘুঁজি। আমাদের এই দোঁহার মিলন নিতান্তই এ সোজাসুজি।