আমার এ মনোজ্বালা কে বুঝিবে সরলে কেন যে এমন করে, ম্রিয়মাণ হয়ে থাকি কেন যে নীরবে হেন বসে থাকি বিরলে। এ যাতনা কেহ যদি বুঝিতে পারিত দেবি, তবে কি সে আর কভু পারিত গো হাসিতে? হৃদয় আছয়ে যার সঁপিতে পারে সে প্রাণ এ জ্বলন্ত যন্ত্রণার এক তিল নাশিতে! হে সখী হে সখাগণ, আমার মর্মের জ্বালা কেহই তোমরা যদি না পার গো বুঝিতে, কী আগুন জ্বলে তার নিভৃত গভীর তলে কী ঘোর ঝটিকা সনে হয় তারে যুঝিতে। তবে গো তোমরা মোরে শুধায়ো না শুধায়ো না কেন যে এমন করে রহিয়াছি বসিয়া বিরলে আমারে হেথা, একলা থাকিতে দাও, [আমা]র মনের কথা বুঝিবে কী করিয়া? [ম্রিয়]মাণ মুখে, এই শূন্যপ্রায় নেত্রে [ক]লঙ্ক সঁপি গো আমি তোমাদের হরষে; পূর্ণিমা যামিনী যথা মলিন হইয়া যায় ক্ষুদ্র এক অন্ধকার জলদের পরশে। কিন্তু কী করিব বলো, কী চাও কী দিব আমি তোমাদের আমোদ গো এক তিল বাড়াতে হৃদয়ে এমন জ্বালা, কী করে হাসিব বলো কিছুতে বিষণ্ণভাব পারি না যে তাড়াতে। বিরক্ত হোয়ো না সখি, অমন বিরক্ত নেত্রে আমার মুখের পানে রহিয়ো না চাহিয়া, কী আঘাত লাগে প্রাণে, দেখি ও বিরক্ত মুখ কেমনে সখি গো তাহা বুঝাইব কহিয়া? ব্যথায় পাইয়া ব্যথা, যদি গো শুধাতে কথা অশ্রুজলে মিশাইতে যদি অশ্রুজল আদরে স্নেহের স্বরে, একটি কহিতে কথা, অনেক নিভিত তবু এ হৃদি-অনল জানিতাম ওগো সখি, কাঁদিলে মমতা পাব, কাঁদিলে বিরক্ত হবে এ কী নিদারুণ? চরণে ধরি গো সখি, একটু করিয়ো দয়া নহিলে নিভিবে কিসে বুকের আগুন! ...
এ কথা মানিব আমি, এক হতে দুই কেমনে যে হতে পারে জানি না কিছুই। কেমনে যে কিছু হয়, কেহ হয় কেহ, কিছু থাকে কোনোরূপে, কারে বলে দেহ, কারে বলে আত্মা মন, বুঝিতে না পেরে চিরকাল নিরখিব বিশ্বজগতেরে নিস্তব্ধ নির্বাক্ চিত্তে। বাহিরে যাহার কিছুতে নারিব যেতে আদি অন্ত তার, অর্থ তার, তত্ত্ব তার, বুঝিব কেমনে নিমেষের তরে? এই শুধু জানি মনে সুন্দর সে, মহান সে, মহাভয়ংকর, বিচিত্র সে, অজ্ঞেয় সে, মম মনোহর। ইহা জানি, কিছুই না জানিয়া অজ্ঞাতে নিখিলের চিত্তস্রোত ধাইছে তোমাতে।