তব দক্ষিণ হাতের পরশ কর নি সমর্পণ। লেখে আর মোছে তব আলো ছায়া ভাবনার প্রাঙ্গণে খনে খনে আলিপন। বৈশাখে কৃশ নদী পূর্ণ স্রোতের প্রসাদ না দিল যদি শুধু কুণ্ঠিত বিশীর্ণ ধারা তীরের প্রান্তে জাগালো পিয়াসি মন। যতটুকু পাই ভীরু বাসনার অঞ্জলিতে নাই বা উচ্ছলিল, সারা দিবসের দৈন্যের শেষে সঞ্চয় সে যে সারা জীবনের স্বপ্নের আয়োজন।
বিদায় দেহো, ক্ষম আমায় ভাই। কাজের পথে আমি তো আর নাই। এগিয়ে সবে যাও-না দলে দলে, জয়মাল্য লও-না তুলি গলে, আমি এখন বনচ্ছায়াতলে অলক্ষিতে পিছিয়ে যেতে চাই। তোমরা মোরে ডাক দিয়ো না ভাই। অনেক দূরে এলেম সাথে সাথে, চলেছিলেম সবাই হাতে হাতে। এইখানেতে দুটি পথের মোড়ে হিয়া আমার উঠল কেমন করে জানি নে কোন্ ফুলের গন্ধ-ঘোরে সৃষ্টিছাড়া ব্যাকুল বেদনাতে। আর তো চলা হয় না সাথে সাথে। তোমরা আজি ছুটেছ যার পাছে সে-সব মিছে হয়েছে মোর কাছে-- রত্ন খোঁজা, রাজ্য ভাঙা-গড়া, মতের লাগি দেশ-বিদেশে লড়া, আলবালে জলসেচন করা উচ্চশাখা স্বর্ণচাঁপার গাছে। পারি নে আর চলতে সবার পাছে। আকাশ ছেয়ে মন-ভোলানো হাসি আমার প্রাণে বাজালো আজ বাঁশি। লাগল আলস পথে চলার মাঝে, হঠাৎ বাধা পড়ল সকল কাজে, একটি কথা পরান জুড়ে বাজে "ভালোবাসি, হায় রে ভালোবাসি'-- সবার বড়ো হৃদয়-হরা হাসি। তোমরা তবে বিদায় দেহো মোরে-- অকাজ আমি নিয়েছি সাধ করে। মেঘের পথের পথিক আমি আজি হাওয়ার মুখে চলে যেতেই রাজি, অকূল-ভাসা তরীর আমি মাঝি বেড়াই ঘুরে অকারণের ঘোরে। তোমরা সবে বিদায় দেহো মোরে।