এ কথা স্মরণে রাখা কেন গো কঠিন তুমি আছ সব চেয়ে, আছ নিশিদিন, আছ প্রতি ক্ষণে--আছ দূরে, আছ কাছে, যাহা-কিছু আছে, তুমি আছ ব'লে আছে। যেমনি প্রবেশ আমি করি লোকালয়ে, যখনি মানুষ আসে স্তুতিনিন্দা লয়ে-- লয়ে রাগ, লয়ে দ্বেষ, লয়ে গর্ব তার অমনি সংসার ধরে পর্বত-আকার আবরিয়া ঊর্ধ্বলোক; তরঙ্গিয়া উঠে লাভজয় লোভক্ষোভ; নরের মুকুটে যে হীরক জ্বলে তারি আলোক-ঝলকে অন্য আলো নাহি হেরি দ্যুলোকে ভূলোকে। মানুষ সম্মুখে এলে কেন সেই ক্ষণে তোমার সম্মুখে আছি নাহি পড়ে মনে?
আজ এই দিনের শেষে সন্ধ্যা যে ওই মানিকখানি পরেছিল চিকন কালো কেশে গেঁথে নিলেম তারে এই তো আমার বিনিসুতার গোপন গলার হারে। চক্রবাকের নিদ্রানীরব বিজন পদ্মাতীরে এই সে সন্ধ্যা ছুঁইয়ে গেল আমার নতশিরে নির্মাল্য তোমার আকাশ হয়ে পার; ওই যে মরি মরি তরঙ্গহীন স্রোতের 'পরে ভাসিয়ে দিল তারার ছায়াতরী; ওই যে সে তার সোনার চেলি দিল মেলি রাতের আঙিনায় ঘুমে অলস কায়; ওই যে শেষে সপ্তঋষির ছায়াপথে কালো ঘোড়ার রথে উড়িয়ে দিয়ে আগুন-ধূলি নিল সে বিদায়; একটি কেবল করুণ পরশ রেখে গেল একটি কবির ভালে; তোমার ওই অনন্ত মাঝে এমন সন্ধ্যা হয় নি কোনোকালে, আর হবে না কভু। এমনি করেই প্রভু এক নিমেষের পত্রপুটে ভরি চিরকালের ধনটি তোমার ক্ষণকালে লও যে নূতন করি।