নামহারা এই নদীর পারে ছিলে তুমি বনের ধারে বলে নি কেউ আমাকে। শুধু কেবল ফুলের বাসে মনে হ'ত খবর আসে উঠত হিয়া চমকে। শুধু যেদিন দখিন হাওয়ায় বিরহ-গান মনকে গাওয়ায় পরান-উন্মাদনি, পাতায় পাতায় কাঁপন ধরে, দিগন্তরে ছড়িয়ে পড়ে বনান্তরের কাঁদনি, সেদিন আমার লাগে মনে আছ যেন কাছের কোণে একটুখানি আড়ালে, জানি যেন সকল জানি, ছুঁতে পারি বসনখানি একটুকু হাত বাড়ালে। এ কী গভীর, এ কী মধুর, এ কী হাসি পরান-বঁধুর এ কী নীরব চাহনি, এ কী ঘন গহন মায়া, এ কী স্নিগ্ধ শ্যামল ছায়া, নয়ন-অবগাহনি। লক্ষ তারের বিশ্ববীণা এই নীরবে হয়ে লীনা নিতেছে সুর কুড়ায়ে, সপ্তলোকের আলোকধারা এই ছায়াতে হল হারা গেল গো তাপ জুড়ায়ে। সকল রাজার রতন-সজ্জা লুকিয়ে গেল পেয়ে লজ্জা বিনা-সাজের কী বেশে। আমার চির-জীবনেরে লও গো তুমি লও গো কেড়ে একটি নিবিড় নিমেষে।
মর্তবাসীদের তুমি যা দিয়েছ প্রভু, মর্তের সকল আশা মিটাইয়া তবু রিক্ত তাহা নাহি হয়। তার সর্বশেষ আপনি খুঁজিয়া ফিরে তোমারি উদ্দেশ। নদী ধায় নিত্যকাজে, সর্ব কর্ম সারি অন্তহীন ধারা তার চরণে তোমারি নিত্য জলাঞ্জলিরূপে ঝরে অনিবার। কুসুম আপন গন্ধে সমস্ত সংসার সম্পূর্ণ করিয়া তবু সম্পূর্ণ না হয়-- তোমারি পূজায় তার শেষ পরিচয়। সংসারে বঞ্চিত করি তব পূজা নহে। কবি আপনার গানে যত কথা কহে নানা জনে লহে তার নানা অর্থ টানি, তোমা-পানে ধায় তার শেষ অর্থখানি।