এবারের মতো করো শেষ প্রাণে যদি পেয়ে থাকো চরমের পরম উদ্দেশ; যদি অবসান সুমধুর আপন বীণার তারে সকল বেসুর সুরে বেঁধে তুলে থাকে; অস্তরবি যদি তোরে ডাকে দিনেরে মাভৈঃ বলে যেমন সে ডেকে নিয়ে যায় অন্ধকার অজানায়; সুন্দরের শেষ অর্চনায় আপনার রশ্মিচ্ছটা সম্পূর্ণ করিয়া দেয় সারা; যদি সন্ধ্যাতারা অসীমের বাতায়নতলে শান্তির প্রদীপশিখা দেখায় কেমন করে জ্বলে; যদি রাত্রি তার খুলে দেয় নীরবের দ্বার, নিয়ে যায় নিঃশব্দ সংকেতে ধীরে ধীরে সকল বাণীর শেষ সাগরসংগম-তীর্থ-তীরে; সেই শতদল হতে যদি গন্ধ পেয়ে থাকো তার মানসসরসে যাহা শেষ অর্ঘ্য, শেষ নমস্কার।
অন্ধ মোহবন্ধ তব দাও মুক্ত করি-- রেখো না বসায়ে দ্বারে জাগ্রত প্রহরী হে জননী, আপনার স্নেহ-কারাগারে সন্তানেরে চিরজন্ম বন্দী রাখিবারে। বেষ্টন করিয়া তারে আগ্রহ-পরশে, জীর্ণ করি দিয়া তারে লালনের রসে, মনুষ্যত্ব-স্বাধীনতা করিয়া শোষণ আপন ক্ষুধিত চিত্ত করিবে পোষণ? দীর্ঘ গর্ভবাস হতে জন্ম দিলে যার স্নেহগর্ভে গ্রাসিয়া কি রাখিবে আবার? চলিবে সে এ সংসারে তব পিছু-পিছু? সে কি শুধু অংশ তব, আর নহে কিছু? নিজের সে, বিশ্বের সে, বিশ্বদেবতার-- সন্তান নহে, গো মাতঃ, সম্পত্তি তোমার।