উজ্জ্বলে ভয় তার, ভয় মিট্মিটেতে, ঝালে তার যত ভয় তত ভয় মিঠেতে। ভয় তার পশ্চিমে, ভয় তার পূর্বে, যে দিকে তাকায় ভয় সাথে সাথে ঘুরবে। ভয় তার আপনার বাড়িটার ইঁটেতে, ভয় তার অকারণে অপরের ভিটেতে। ভয় তার বাহিরেতে, ভয় তার অন্তরে, ভয় তার ভূত-প্রেতে, ভয় তার মন্তরে। দিনের আলোতে ভয় সামনের দিঠেতে, রাতের আঁধারে ভয় আপনারি পিঠেতে।
একদা এ ভারতের কোন্ বনতলে কে তুমি মহান্ প্রাণ, কী আনন্দবলে উচ্চারি উঠিলে উচ্চে-- "শোনো বিশ্বজন, শোনো অমৃতের পুত্র যত দেবগণ দিব্যধামবাসী, আমি জেনেছি তাঁহারে, মহান্ত পুরুষ যিনি আঁধারের পারে জ্যোতির্ময়। তাঁরে জেনে, তাঁর পানে চাহি মৃত্যুরে লঙ্ঘিতে পারো, অন্য পথ নাহি।' আরবার এ ভারতে কে দিবে গো আনি সে মহা আনন্দমন্ত্র, সে উদাত্তবাণী সঞ্জীবনী, স্বর্গে মর্তে সেই মৃত্যুঞ্জয় পরম ঘোষণা, সেই একান্ত নির্ভয় অনন্ত অমৃতবার্তা। রে মৃত ভারত, শুধু সেই এক আছে, নাহি অন্য পথ।
আমার প্রাণের 'পরে চলে গেল কে বসন্তের বাতাসটুকুর মতো। সে যে ছুঁয়ে গেল নুয়ে গেল রে ফুল ফুটিয়ে গেল শত শত। সে চলে গেল, বলে গেল না, সে কোথায় গেল ফিরে এল না, সে যেতে যেতে চেয়ে গেল, কী যেন গেয়ে গেল তাই আপন মনে বসে আছি কুসুম-বনেতে। সে ঢেউয়ের মতো ভেসে গেছে, চঁদের আলোর দেশে গেছে, যেখান দিয়ে হেসে গেছে হাসি তার রেখে গেছে রে। মনে হল আঁখির কোণে আমায় যেন ডেকে গেছে সে। আমি কোথায় যাব কোথায় যাব, ভাবতেছি তাই একলা বসে। সে চাঁদের চোখে বুলিয়ে গেল ঘুমের ঘোর। সে প্রাণের কোথা দুলিয়ে গেল ফুলের ডোর। সে কুসুম-বনের উপর দিয়ে কী কথা যে বলে গেল, ফুলের গন্ধ পাগল হয়ে সঙ্গে তারি চলে গেল। হৃদয় আমার আকুল হল, নয়ন আমার মুদে এল, কোথা দিয়ে কোথায় গেল সে!