বাঁশরি আনে আকাশ-বাণী- ধরণী আনমনে কিছু বা ভোলে কিছু বা আধো শোনে। নামিবে রবি অস্তপথে, গানের হবে শেষ-- তখন ফিরে ঘিরিবে তারে সুরের কিছু রেশ। অলস খনে কাঁপায় হাওয়া আধেকখানি-হারিয়ে-যাওয়া গুঞ্জরিত কথা, মিলিয়া প্রজাপতির সাথে রাঙিয়ে তোলে আলোছায়াতে দুইপহরে-রোদ-পোহানো গভীর নীরবতা। হল্দেরঙা-পাতায়-দোলা নাম-ভোলা ও বেদনা-ভোলা বিষাদ ছায়ারূপী ঘোমটা-পরা স্বপনময় দূরদিনের কী ভাষা কয় জানি না চুপিচুপি। জীবনে যারা স্মরণ-হারা তবু মরণ জানে না তারা, উদাসী তারা মর্মবাসী পড়ে না কভু চোখে-- প্রতিদিনের সুখ-দুখেরে অজানা হয়ে তারাই ঘেরে, বাষ্পছবি আঁকিয়া ফেরে প্রাণের মেঘলোকে।
ওগো সুখী প্রাণ, তোমাদের এই ভব-উৎসব-ঘরে অচেনা অজানা পাগল অতিথি এসেছিল ক্ষণতরে। ক্ষণেকের তরে বিস্ময়-ভরে চেয়েছিল চারি দিকে বেদনা-বাসনা-ব্যাকুলতা-ভরা তৃষাতুর অনিমিখে। উৎসববেশ ছিল না তাহার, কন্ঠে ছিল না মালা, কেশপাশ দিয়ে বাহিরিতেছিল দীপ্ত অনলজ্বালা। তোমাদের হাসি তোমাদের গান থেমে গেল তারে দেখে, শুধালে না কেহ পরিচয় তার, বসালে না কেহ ডেকে। কী বলিতে গিয়ে বলিল না আর, দাঁড়ায়ে রহিল দ্বারে-- দীপালোক হতে বাহিরিয়া গেল বাহির-অন্ধকারে। তার পরে কেহ জান কি তোমরা কী হইল তার শেষে? কোন্ দেশ হতে এসে চলে গেল কোন্ গৃহহীন দেশে!