পান্থ তুমি, পান্থজনের সখা হে, পথে চলাই সেই তো তোমায় পাওয়া। যাত্রাপথের আনন্দগান যে গাহে তারি কণ্ঠে তোমারি গান গাওয়া। চায় না সে জন পিছন-পানে ফিরে, বায় না তরী কেবল তীরে তীরে, তুফান তারে ডাকে অকূল নীরে যার পরানে লাগল তোমার হাওয়া। পথে চলাই সেই তো তোমায় পাওয়া। পান্থ তুমি, পান্থজনের সখা হে, পথিক-চিত্তে তোমার তরী বাওয়া। দুয়ার খুলে সমুখ-পানে যে চাহে তার চাওয়া যে তোমার পানে চাওয়া। বিপদ বাধা কিছুই ডরে না সে, রয় না পড়ে কোনো লাভের আশে, যাবার লাগি মন তারি উদাসে-- যাওয়া সে যে তোমার পানে যাওয়া। পথে চলাই সেই তো তোমায় পাওয়া।
বিজ্ঞানাচার্য শ্রীযুক্ত জগদীশচন্দ্র বসু করকমলেষু বন্ধু, এ যে আমার লজ্জাবতী লতা কী পেয়েছে আকাশ হতে কী এসেছে বায়ুর স্রোতে পাতার ভাঁজে লুকিয়ে আছে সে যে প্রাণের কথা। যত্নভরে খুঁজে খুঁজে তোমায় নিতে হবে বুঝে, ভেঙে দিতে হবে যে তার নীরব ব্যাকুলতা। আমার লজ্জাবতী লতা। বন্ধু, সন্ধ্যা এল, স্বপনভরা পবন এরে চুমে। ডালগুলি সব পাতা নিয়ে জড়িয়ে এল ঘুমে। ফুলগুলি সব নীল নয়ানে চুপিচুপি আকাশপানে তারার দিকে চেয়ে চেয়ে কোন্ ধেয়ানে রতা। আমার লজ্জাবতী লতা। বন্ধু, আনো তোমার তড়িৎ-পরশ, হরষ দিয়ে দাও, করুণ চক্ষু মেলে ইহার মর্মপানে চাও। সারা দিনের গন্ধগীতি সারা দিনের আলোর স্মৃতি নিয়ে এ যে হৃদয়ভারে ধরায় অবনতা-- আমার লজ্জাবতী লতা। বন্ধু, তুমি জান ক্ষুদ্র যাহা ক্ষুদ্র তাহা নয়, সত্য যেথা কিছু আছে বিশ্ব সেথা রয় এই-যে মুদে আছে লাজে পড়বে তুমি এরি মাঝে-- জীবনমৃত্যু রৌদ্রছায়া ঝটিকার বারতা। আমার লজ্জাবতী লতা।