ফসল কাটা হলে সারা মাঠ হয়ে যায় ফাঁক; অনাদরের শস্য গজায়, তুচ্ছ দামের শাক। আঁচল ভরে তুলতে আসে গরিব-ঘরের মেয়ে, খুশি হয়ে বাড়িতে যায়, যা জোটে তাই পেয়ে। আজকে আমার চাষ চলে না, নাই লাঙলের বালাই; পোড়ো মাঠের কুঁড়েমিতে মন্থর দিন চালাই। জমিতে রস কিছু আছে, শক্ত যায় নি আঁটি; ফলায় না সে ফল তবুও সবুজ রাখে মাটি। শ্রাবণ আমার গেছে চলে, নাই বাদলের ধারা; অঘ্রান সে সোনার ধানের দিন করেছে সারা। চৈত্র আমার রোদে পোড়া, শুকনো যখন নদী, বুনো ফলের ঝোপের তলায় ছায়া বিছায় যদি, জানব আমার শেষের মাসে ভাগ্য দেয় নি ফাঁকি, শ্যামল ধরার সঙ্গে আমার বাঁধন রইল বাকি।
একদা এলোচুলে কোন্ ভুলে ভুলিয়া আসিল সে আমার ভাঙা দ্বার খুলিয়া। জ্যোৎস্না অনিমিখ, চারি দিক সুবিজন, চাহিল একবার আঁখি তার তুলিয়া। দখিনবায়ুভরে থরথরে কাঁপে বন, উঠিল প্রাণ মম তারি সম দুলিয়া। আবার ধীরে ধীরে গেল ফিরে আলসে, আমার সব হিয়া মাড়াইয়া গেল সে। আমার যাহা ছিল সব নিল আপনায়, হরিল আমাদের আকাশের আলো সে। সহসা এ জগৎ ছায়াবৎ হয়ে যায়, তাহারি চরণের শরণের লালসে। যে জন চলিয়াছে তারি পাছে সবে ধায়, নিখিলে যত প্রাণ যত গান ঘিরে তায়। সকল রূপহার উপহার চরণে, ধায় গো উদাসিয়া যত হিয়া পায় পায়। যে জন পড়ে থাকে একা ডাকে মরণে, সুদূর হতে হাসি আর বাঁশি শোনা যায়। শবদ নাহি আর, চারি ধার প্রাণহীন, কেবল ধুক্ ধুক্ করে বুক নিশিদিন। যেন গো ধ্বনি এই তারি সেই চরণের, কেবলি বাজে শুনি, তাই গুনি দুই তিন। কুড়ায়ে সব-শেষ অবশেষ স্মরণের বসিয়া একজন আনমন উদাসীন।
ভোরের বেলায় কখন এসে পরশ ক'রে গেছ হেসে। আমার ঘুমের দুয়ার ঠেলে কে সেই খবর দিল মেলে, জেগে দেখি আমার আঁখি আঁখির জলে গেছে ভেসে। মনে হল আকাশ যেন কইল কথা কানে কানে। মনে হল সকল দেহ পূর্ণ হল গানে গানে। হৃদয় যেন শিশিরনত ফুটল পূজার ফুলের মতো জীবননদী কূল ছাপিয়ে ছড়িয়ে গেল অসীম দেশে।