বিদায় দেহো, ক্ষম আমায় ভাই। কাজের পথে আমি তো আর নাই। এগিয়ে সবে যাও-না দলে দলে, জয়মাল্য লও-না তুলি গলে, আমি এখন বনচ্ছায়াতলে অলক্ষিতে পিছিয়ে যেতে চাই। তোমরা মোরে ডাক দিয়ো না ভাই। অনেক দূরে এলেম সাথে সাথে, চলেছিলেম সবাই হাতে হাতে। এইখানেতে দুটি পথের মোড়ে হিয়া আমার উঠল কেমন করে জানি নে কোন্ ফুলের গন্ধ-ঘোরে সৃষ্টিছাড়া ব্যাকুল বেদনাতে। আর তো চলা হয় না সাথে সাথে। তোমরা আজি ছুটেছ যার পাছে সে-সব মিছে হয়েছে মোর কাছে-- রত্ন খোঁজা, রাজ্য ভাঙা-গড়া, মতের লাগি দেশ-বিদেশে লড়া, আলবালে জলসেচন করা উচ্চশাখা স্বর্ণচাঁপার গাছে। পারি নে আর চলতে সবার পাছে। আকাশ ছেয়ে মন-ভোলানো হাসি আমার প্রাণে বাজালো আজ বাঁশি। লাগল আলস পথে চলার মাঝে, হঠাৎ বাধা পড়ল সকল কাজে, একটি কথা পরান জুড়ে বাজে "ভালোবাসি, হায় রে ভালোবাসি'-- সবার বড়ো হৃদয়-হরা হাসি। তোমরা তবে বিদায় দেহো মোরে-- অকাজ আমি নিয়েছি সাধ করে। মেঘের পথের পথিক আমি আজি হাওয়ার মুখে চলে যেতেই রাজি, অকূল-ভাসা তরীর আমি মাঝি বেড়াই ঘুরে অকারণের ঘোরে। তোমরা সবে বিদায় দেহো মোরে।
বন্দী হয়ে আছ তুমি সুমধুর স্নেহে অয়ি গৃহলক্ষ্মী, এই করুণক্রন্দন এই দুঃখদৈন্যে-ভরা মানবের গেহে। তাই দুটি বাহু'পরে সুন্দরবন্ধন সোনার কঙ্কণ দুটি বহিতেছে দেহে শুভচিহ্ন, নিখিলের নয়ননন্দন। পুরুষের দুই বাহু কিণাঙ্ক-কঠিন সংসারসংগ্রামে, সদা বন্ধনবিহীন; যুন্ধ-দ্বন্দ্ব যত কিছু নিদারুণ কাজে বহ্নিবাণ বজ্রসম সর্বত্র স্বাধীন। তুমি বদ্ধ স্নেহ-প্রেম-করুণার মাঝে-- শুধু শুভকর্ম, শুধু সেবা নিশিদিন। তোমার বাহুতে তাই কে দিয়াছে টানি, দুইটি সোনার গণ্ডি, কাঁকন দুখানি।