সে যেন খসিয়া-পড়া তারা, মর্তের প্রদীপে নিল মৃত্তিকার কারা। নগরে জনতামরু, সে যেন তাহারি মাঝে পথপ্রান্তে সঙ্গিহীন তরু, তারে ঢেকে আছে নিতি অরণ্যের সুগভীর স্মৃতি। সে যেন অকালে-ফোটা কুবলয়, শিশিরে কুণ্ঠিত হয়ে রয়। মন পাখা মেলিবারে চায়, চারি দিকে ঠেকে যায়, জানে না কিসের বাধা তার; অদৃষ্টের মায়াদুর্গদ্বার কোন্ রাজপুত্র এসে মন্ত্রবলে ভেঙে দেবে শেষে। আকাশে আলোতে নিমন্ত্রণ আসে যেন কোথা হতে, পথ রুদ্ধ চারি ধারে-- মুখ ফুটে বলিতে না পারে অলক্ষ্য কী আচ্ছাদনে কেন সে আবৃতা। সে যেন অশোকবনে-সীতা, চারি দিকে যারা আছে কেহ তার নহেক স্বকীয়; কে তারে পাঠাবে অঙ্গুরীয় বিচ্ছেদের অতল সমুদ্র-পারে। আঁখি তুলে তাই বারে বারে চেয়ে দেখে নিরুত্তর নিঃশব্দ গগনে। কোন্ দেব নিত্যনির্বাসনে পাঠাল তাহারে! স্বর্গের বীণার তারে সংগীতে কি করেছিল ভুল। মহেন্দ্রের-দেওয়া ফুল নৃত্যকালে খসে গেলে অন্যমনে দলেছিল কভু? আজও তবু মন্দারের গন্ধ যেন আছে তার বিষাদে জড়ানো, অধরে রয়েছে তার ম্লান-- সন্ধ্যার গোলাপ-সম-- মাঝখানে-ভেঙে-যাওয়া অমরার গীতি অনুপম। অদৃশ্য যে অশ্রুধারা আবিষ্ট করেছে তার চক্ষুতারা, তাহা দিব্য বেদনার করুণানির্ঝরী-- নাম কি ঝামরী।
এ সংসারে একদিন নববধূবেশে তুমি যে আমার পাশে দাঁড়াইলে এসে, রাখিলে আমার হাতে কম্পমান হাত, সে কি অদৃষ্টের খেলা, সে কি অকস্মাৎ? শুধু এক মুহূর্তের এ নহে ঘটনা, অনাদিকালের এ আছিল মন্ত্রণা। দোঁহার মিলনে মোরা পূর্ণ হব দোঁহে, বহু যুগ আসিয়াছি এই আশা বহে। নিয়ে গেছ কতখানি মোর প্রাণ হতে, দিয়ে গেছ কতখানি এ জীবনস্রোতে! কত দিন কত রাত্রে কত লজ্জাভয়ে কত ক্ষতিলাভে কত জয়ে পরাজয়ে রচিতেছিলাম যাহা মোরা শ্রান্তিহারা সাঙ্গ কে করিবে তাহা মোরা দোঁহে ছাড়া?