হাটের ভিড়ের দিকে চেয়ে দেখি, হাজার হাজার মুখ হাজার হাজার ইতিহাস ঢাকা দিয়ে আসে যায় দিনের আলোয় রাতের আঁধারে। সব কথা তার কোনো কালে জানবে না কেউ, নিজেও জানে না কোনো লোক। মুখর আলাপ তার, উচ্চস্বরে কত আলোচনা, তারি অন্তস্তলে বিচিত্র বিপুল স্মৃতিবিস্মৃতির সৃষ্টিরাশি। সেখানে তো শব্দ নেই আলো নেই, বাইরের দৃষ্টি নেই, প্রবেশের পথ নেই কারো। সংখ্যাহীন মানুষের এই যে প্রচ্ছন্ন বাণী, অশ্রুত কাহিনী কোন্ আদিকাল হতে অন্তঃশীল অগণ্য ধারায় আঁধার মৃত্যুর মাঝে মেশে রাত্রিদিন, কী হল তাদের, কী এদের কাজ। হে প্রিয়, তোমার যতটুকু দেখেছি শুনেছি জেনেছি, পেয়েছি স্পর্শ করি' -- তার বহুশতগুণ অদৃশ্য অশ্রুত রহস্য কিসের জন্য বন্ধ হয়ে আছে, কার অপেক্ষায়। সে নিরালা ভবনের কুলুপ তোমার কাছে নেই। কার কাছে আছে তবে। কে মহা-অপরিচিত যার অগোচর সভাতলে হে চেনা-অপরিচিত, তোমার আসন? সেই কি সবার চেয়ে জানে আমাদের অন্তরের অজানারে। সবার চেয়ে কি বড়ো তার ভালোবাসা যার শুভদৃষ্টি-কাছে অব্যক্ত করেছে অবগুণ্ঠন মোচন।
এ আমির আবরণ সহজে স্খলিত হয়ে যাক; চৈতন্যের শুভ্র জ্যোতি ভেদ করি কুহেলিকা সত্যের অমৃত রূপ করুক প্রকাশ। সর্বমানুষের মাঝে এক চিরমানবের আনন্দকিরণ চিত্তে মোর হোক বিকীরিত। সংসারের ক্ষুব্ধতার স্তব্ধ ঊর্ধ্বলোকে নিত্যের যে শান্তিরূপ তাই যেন দেখে যেতে পারি, জীবনের জটিল যা বহু নিরর্থক, মিথ্যার বাহন যাহা সমাজের কৃত্রিম মূল্যেই, তাই নিয়ে কাঙালের অশান্ত জনতা দূরে ঠেলে দিয়ে এ জন্মের সত্য অর্থ স্পষ্ট চোখে জেনে যাই যেন সীমা তার পেরোবার আগে।