আলমোড়া, ৯। ৬। ৩৭  


 

যাত্রাপথ (jatrapoth)


মনে পড়ে, ছেলেবেলায় যে বই পেতুম হাতে

ঝুঁকে পড়ে যেতুম পড়ে তাহার পাতে পাতে।

কিছু বুঝি, নাই বা কিছু বুঝি,

কিছু না হোক পুঁজি,

হিসাব কিছু না থাক্‌ নিয়ে লাভ অথবা ক্ষতি,

অল্প তাহার অর্থ ছিল, বাকি তাহার গতি।

মনের উপর ঝরনা যেন চলেছে পথ খুঁড়ি,

কতক জলের ধারা আবার কতক পাথর নুড়ি।

সব জড়িয়ে ক্রমে ক্রমে আপন চলার বেগে

পূর্ণ হয়ে নদী ওঠে জেগে।

শক্ত সহজ এ সংসারটা যাহার লেখা বই

হালকা ক'রে বুঝিয়ে সে দেয় কই।

বুঝছি যত খুজছি তত, বুঝছি নে আর ততই--

কিছু বা হাঁ, কিছু বা না, চলছে জীবন স্বতই।

 

কৃত্তিবাসী রামায়ণ সে বটতলাতে ছাপা,

দিদিমায়ের বালিশ-তলায় চাপা।

আলগা মলিন পাতাগুলি, দাগি তাহার মলাট

দিদিমায়ের মতোই যেন বলি-পড়া ললাট।

মায়ের ঘরের চৌকাঠেতে বারান্দার এক কোণে

দিন-ফুরানো ক্ষীণ আলোতে পড়েছি একমনে।

অনেক কথা হয় নি তখন বোঝা,

যেটুকু তার বুঝেছিলাম মোট কথাটা সোজা--

ভালোমন্দে লড়াই অনিঃশেষ,

প্রকাণ্ড তার ভালোবাসা, প্রচণ্ড তার দ্বেষ।

বিপরীতের মল্লযুদ্ধ ইতিহাসের রূপ

সামনে এল, রইনু বসে চুপ।

 

শুরু হতে এইটে গেল বোঝা,

হয়তো বা এক বাঁধা রাস্তা কোথাও আছে সোজা,

যখন-তখন হঠাৎ সে যায় ঠেকে,

আন্দাজে যায় ঠিকানাটা বিষম এঁকেবেঁকে।

সব-জানা দেশ এ নয় কভু, তাই তো তেপান্তরে

রাজপুত্তুর ছোটায় ঘোড়া না-জানা কার তরে।

সদাগরের পুত্র সেও যায় অজানার পার

খোঁজ নিতে কোন্‌ সাত-রাজা-ধন গোপন মানিকটার।

কোটালপুত্র খোঁজে এমন গুহায়-থাকা চোর

যাকে ধরলে সকল চুরির কাটবে বাঁধন-ডোর।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •