আণ্ডেস জাহাজ,  ১৮ অক্টোবর, ১৯২৪


 

আনমনা (anmona)


                    আনমনা গো, আনমনা,

          তোমার কাছে আমার বাণীর মালাখানি আনব না।

                      বার্তা আমার ব্যর্থ হবে,

                          সত্য আমার বুঝবে কবে?

                      তোমারো মন জানব না,

                       আন্‌মনা গো, আন্‌মনা।

                লগ্ন যদি হয় অনুকূল মৌন মধুর সাঁঝে,

             নয়ন তোমার মগ্ন যখন ম্লান আলোর মাঝে,

                   দেব তোমায় শান্ত সুরের সান্ত্বনা,

                       আনমনা গো, আনমনা।

          জনশূন্য তটের পানে ফিরবে হাঁসের দল;

                       স্বচ্ছ নদীর জল

                আকাশ-পানে রইবে পেতে কান

             বুকের তলে শুনবে ব'লে গ্রহতারার গান;

                       কুলায়-ফেরা পাখি

       নীল আকাশের বিরামখানি রাখবে ডানায় ঢাকি;

                বেণুশাখার অন্তরালে অস্তপারের রবি

       আঁকবে মেঘে মুছবে আবার শেষ-বিদায়ের ছবি;

          স্তব্ধ হবে দিনের বেলার ক্ষুব্ধ হাওয়ার দোলা,

              তখন তোমার মন যদি রয় খোলা --

                       তখন সন্ধ্যাতারা

                   পায় যদি তার সাড়া

              তোমার উদার আঁখিতারার পারে,

          কনকচাঁপার গন্ধ-ছোঁওয়া বনের অন্ধকারে

       ক্লান্তি-অলস ভাব্‌না যদি ফুল-বিছানো ভুঁয়ে

            মেলিয়ে ছায়া এলিয়ে থাকে শুয়ে;

          ছন্দে গাঁথা বাণী তখন পড়ব তোমার কানে

                   মন্দ মৃদুল তানে --

          ঝিল্লি যেমন শালের বনে নিদ্রানীরব রাতে

       অন্ধকারের জপের মালায় একটানা সুর গাঁথে।

             একলা তোমার বিজন প্রাণের প্রাঙ্গণে

                   প্রান্তে বসে একমনে

             এঁকে যাব আমার গানের আল্‌পনা

                   আনমনা গো, আনমনা।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •