মাঘ ১৩৩০


 

ভাঙা-মন্দির (bhanga mondir)


                   ১

পুণ্যলোভীর নাই হল ভিড়

            শূন্য তোমার অঙ্গনে,

            জীর্ণ হে তুমি দীর্ণ দেবতালয়।

অর্ঘ্যের আলো নাই বা সাজালো

            পুষ্পে প্রদীপে চন্দনে

            যাত্রীরা তব বিস্মৃতপরিচয়।

      সম্মুখপানে দেখো দেখি চেয়ে,

      ফাল্গুনে তব প্রাঙ্গণ ছেয়ে

      বনফুলদল ওই এল ধেয়ে

                     উল্লাসে চারি ধারে।

      দক্ষিণ বায়ে কোন্‌ আহ্বান

      শূন্যে জাগায় বন্দনাগান,

      কী খেয়াতরীর পায় সন্ধান

            আসে পৃথ্বী পারে?

গন্ধের থালি বর্ণের ডালি

            আনে নির্জন অঙ্গনে,

            জীর্ণ হে তুমি দীর্ণ দেবতালয়,

      বকুল শিমূল আকন্দ ফুল

                     কাঞ্চন জবা রঙ্গনে

                     পূজাতরঙ্গ দুলে অম্বরময়।

 

                   ২

প্রতিমা নাহয় হয়েছে চূর্ণ,

               বেদীতে নাহয় শূন্যতা,

               জীর্ণ হে তুমি দীর্ণ দেবতালয়,

নাহয় ধুলায় হল লুণ্ঠিত

               আছিল যে চূড়া উন্নত,

               সজ্জা না থাকে কিসের লজ্জা ভয়?

      বাহিরে তোমার ওই দেখো ছবি,

      ভগ্নভিত্তিলগ্ন মাধবী,

      নীলাম্বরের প্রাঙ্গণে রবি

               হেরিয়া হাসিছে স্নেহে।

      বাতাসে পুলকি আলোকে আকুলি

      আন্দোলি উঠে মঞ্জরীগুলি,

      নবীন প্রাণের হিল্লোল তুলি

                     প্রাচীন তোমার গেহে।

সুন্দর এসে ওই হেসে হেসে

               ভরি দিল তব শূন্যতা,

               জীর্ণ হে তুমি দীর্ণ দেবতালয়।

ভিত্তিরন্ধ্রে বাজে আনন্দে

               ঢাকি দিয়া তব ক্ষুণ্নতা

               রূপের শঙ্খে অসংখ্য "জয় জয়'।

 

                     ৩

সেবার প্রহরে নাই আসিল রে

               যত সন্ন্যাসী-সজ্জনে,

               জীর্ণ হে তুমি দীর্ণ দেবতালয়।

নাই মুখরিল পার্বণ-ক্ষণ

               ঘন জনতার গর্জনে,

               অতিথি-ভোগের না রহিল সঞ্চয়।

    পূজার মঞ্চে বিহঙ্গদল

      কুলায় বাঁধিয়া করে কোলাহল,

      তাই তো হেথায় জীববৎসল

                     আসিছেন ফিরে ফিরে।

      নিত্য সেবার পেয়ে আয়োজন

      তৃপ্ত পরানে করিছে কূজন,

      উৎসবরসে সেই তো পূজন

                     জীবন-উৎসতীরে।

নাইকো দেবতা ভেবে সেই কথা

               গেল সন্ন্যাসী-সজ্জনে,

               জীর্ণ হে তুমি দীর্ণ দেবতালয়।

সেই অবকাশে দেবতা যে আসে--

                     প্রসাদ-অমৃত-মজ্জনে

                     স্খলিত ভিত্তি হল যে পুণ্যময়।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •