১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪


 

প্রলয় (proloy)


আকাশের দূরত্ব যে, চোখে তারে দূর বলে জানি,

          মনে তারে দূর নাহি মানি।

কালের দূরত্ব সেও যত কেন হোক-না নিষ্ঠুর

          তবু সে দুঃসহ নহে দূর।

আঁধারের দূরত্বই কাছে থেকে রচে ব্যবধান,

চেতনা আবিল করে, তার হাতে নাই পরিত্রাণ

          শুধু এই মাত্র নয়--

     সে-যে সৃষ্টি করে নিত্যভয়।

ছায়া দিয়ে রচি তুলে আঁকাবাঁকা দীর্ঘ উপছায়া,

জানারে অজানা করে--ঘেরে তারে অর্থহীনা মায়া।

পথ লুপ্ত করে দিয়ে যে পথের করে সে নির্দেশ

          নাই তার শেষ।

সে পথ ভুলায়ে লয় দিনে দিনে দূর হতে দূরে

          ধ্রুবতারাহীন অন্ধপুরে।

অগ্নিবীণা বিস্তারিয়া যে প্রলয় আনে মহাকাল,

চন্দ্রসূর্য লুপ্ত করে আবর্তে-ঘূর্ণিত জটাজাল,

          দিব্য দীপ্তিচ্ছটায় সে সাজে,

বজ্রের ঝঞ্ঝনামন্দ্রে বক্ষে তার রুদ্রবীণা বাজে।

যে বিশ্বে বেদনা হানে তাহারি দাহনে করে তার

          পবিত্র সৎকার।

জীর্ণ জগতের ভস্ম যুগান্তের প্রচণ্ড নিশ্বাসে

          লুপ্ত হয় ঝঞ্ঝার বাতাসে।

          অবশেষে তপস্বীর তপস্যাবহ্নির শিখা হতে

          নবসৃষ্টি উঠে আসে নিরঞ্জন নবীন আলোতে।

দানব বিলুপ্তি আনে, আঁধারের পঙ্কিল বুদ্‌বুদে

          নিখিলের সৃষ্টি দেয় মুদে;

কণ্ঠ দেয় রূদ্ধ করি, বাণী হতে ছিন্ন করে সুর,

          ভাষা হতে অর্থ করে দূর;

উদয়দিগন্তমুখে চাপা দেয় ঘন কালো আঁখি,

          প্রেমেরে সে ফেলে বাঁধি

          সংশয়ের ডোরে;

ভক্তিপাত্র শূন্য করি শ্রদ্ধার অমৃত লয় হরে।

          মূক অন্ধ মৃত্তিকার স্তর,

জগদ্দল শিলা দিয়ে রচে সেথা মুক্তির কবর।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •