© Kriya Unlimited, 2010 - 2024
কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
আজ মনে হয় সকলেরই মাঝে তোমারেই ভালোবেসেছি। জনতা বাহিয়া চিরদিন ধরে শুধু তুমি আমি এসেছি। দেখি চারি দিক-পানে কী যে জেগে ওঠে প্রাণে-- তোমার আমার অসীম মিলন যেন গো সকল খানে। কত যুগ এই আকাশে যাপিনু সে কথা অনেক ভুলেছি। তারায় তারায় যে আলো কাঁপিছে সে আলোকে দোঁহে দুলেছি। তৃণরোমাঞ্চ ধরণীর পানে আশ্বিনে নব আলোকে চেয়ে দেখি যবে আপনার মনে
আমি পুলিসের ডিটেকটিভ কর্মচারী। আমার জীবনের দুটিমাত্র লক্ষ্য ছিল-- আমার স্ত্রী এবং আমার ব্যবসায়। পূর্বে একান্নবর্তী পরিবারের মধ্যে ছিলাম, সেখানে আমার স্ত্রীর প্রতি সমাদরের অভাব হওয়াতেই আমি দাদার সঙ্গে ঝগড়া করিয়া বাহির হইয়া আসি। দাদাই উপার্জন করিয়া আমাকে পালন করিতেছিলেন, অতএব সহসা সস্ত্রীক তাঁহার আশ্রয় ত্যাগ করিয়া আসা আমার পক্ষে দুঃসাহসের কাজ হইয়াছিল।কিন্তু কখনো নিজের উপরে আমার বিশ্বাসের ত্রুটি ছিল না। আমি নিশ্চয় জানিতাম, সুন্দরী স্ত্রীকে যেমন বশ করিয়াছি বিমুখ অদৃষ্টলক্ষ্মীকেও তেমনি বশ করিতে পারিব। মহিমচন্দ্র এ সংসারে পশ্চাতে পড়িয়া থাকিবে না।পুলিসবিভাগে সামান্যভাবে প্রবেশ করিলাম, অবশেষে ডিটেকটিভ-পদে উত্তীর্ণ হইতে অধিক বিলম্ব হইল না। উজ্জ্বল শিখা হইতেও যেমন কজ্জ্বলপাত হয় তেমনি আমার স্ত্রীর প্রেম ...
রাজপুত্রের বয়স কুড়ি পার হয়ে যায়, দেশবিদেশ থেকে বিবাহের সম্বন্ধ আসে।ঘটক বললে, 'বাহ্লীকরাজের মেয়ে রূপসী বটে, যেন সাদা গোলাপের পুষ্পবৃষ্টি।'রাজপুত্র মুখ ফিরিয়ে থাকে, জবাব করে না।দূত এসে বললে, 'গান্ধাররাজের মেয়ের অঙ্গে অঙ্গে লাবণ্য ফেটে পড়ছে, যেন দ্রাক্ষালতায় আঙুরের গুচ্ছ।'রাজপুত্র শিকারের ছলে বনে চলে যায়। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, ফিরে আসে না।দূত এসে বললে, 'কাম্বোজের রাজকন্যাকে দেখে এলেম; ভোরবেলাকার দিগন্ত-রেখাটির মতো বাঁকা চোখের পল্লব, শিশিরে স্নিগ্ধ, আলোতে উজ্জ্বল।'রাজপুত্র ভর্তৃহরির কাব্য পড়তে লাগল, পুঁথি থেকে চোখ তুলল না।রাজা বললে, 'এর কারণ? ডাকো দেখি মন্ত্রীর পুত্রকে।'মন্ত্রীর পুত্র এল। রাজা বললে, 'তুমি তো আমার ছেলের মিতা, সত্য করে বলো, বিবাহে তার মন নেই কেন।'মন্ত্রীর পুত্র বললে, 'মহারাজ, যখন থেকে ...
শ্রীকান্ত আচার্য্য
শ্রাবণী সেন
সোমলতা আচার্য্য
ইমন চক্রবর্তী
(ছোটো গল্প)সাহিত্যে বড়ো গল্প ব'লে যে-সব প্রগল্ভ বাণীবাহন দেখা যায় তারা প্রাক্ভূতাত্ত্বিক যুগের প্রাণীদের মতো-- তাদের প্রাণের পরিমাণ যত দেহের পরিমাণ তার চার গুণ, তাদের লেজটা কলেবরের অত্যুক্তি।অতিপরিমাণ ঘাসপাতা খেয়ে যাদের পেট মোটা তারা ভারবাহী জীব, স্তূপাকার মালের বস্তা টানা তাদের অদৃষ্টে। বড়ো গল্প সেই জাতের, মাল-বোঝাইওয়ালা। যে-সব প্রাণীর খোরাক স্বল্প এবং সারালো, জাওর কেটে কেটে তারা প্রলম্বিত করে না ভোজন-ব্যাপার অধ্যায়ের পর অধ্যায়ে। ছোটো গল্প সেই জাতের; বোঝা বইবার জন্যে সে নয়; একেবারে সে মার লাগায় মর্মে লঘু লম্ফে।কিন্ত গল্পের ফরমাশ আসছে বড়ো বহরের। অনেকখানি মালকে মানুষ অনেকখানি দাম দিয়ে ঠকতেও রাজি হয়। ওটা তার আদিম দুর্নিবার প্রবৃত্তির দুর্বলতা। এটাই দেখতে পাওয়া যায় আমাদের দেশের বিয়ের ব্যাপারে। ...
ফাল্গুনমাধুরী তার চরণের মঞ্জীরে মঞ্জীরে নীলমণিমঞ্জরির গুঞ্জন বাজায়ে দিল কি রে। আকাশ যে মৌনভার বহিতে পারে না আর,নীলিমাবন্যায় শূন্যে উচ্ছলে অনন্ত ব্যাকুলতা ,তারি ধারা পুষ্পপাত্রে ভরি নিল নীলমণিলতা।পৃথ্বী গভীর মৌন দূর শৈলে ফেলে নীল ছায়া,মধ্যাহ্নমরীচিকায় দিগন্তে খোঁজে সে স্বপ্নমায়া। যে মৌন নিজেরে চায় সমুদ্রের নীলিমায়,অন্তহীন সেই মৌন উচ্ছ্বসিল নীলগুচ্ছ ফুলে,দুর্গম রহস্য তার উঠিল সহজ ছন্দে দুলে।আসন্ন মিলনাশ্বাসে বধূর কম্পিত তনুখানিনীলাম্বর-অঞ্চলের গুণ্ঠনে সঞ্চিত করে বাণী। মর্মের নির্বাক কথা
হায় অতিথি, এখনি কি হল তোমার যাবার বেলা।দেখো আমার হৃদয়তলে সারা রাতের আসন মেলা ॥ এসেছিলে দ্বিধাভরে কিছু বুঝি চাবার তরে, নীরব চোখে সন্ধ্যালোকে খেয়াল নিয়ে করলে খেলা।জানালে না গানের ভাষায় এনেছিলে যে প্রত্যাশা।শাখার আগায় বসল পাখি, ভুলে গেল বাঁধতে বাসা। দেখা হল, হয় নি চেনা-- প্রশ্ন ছিল, শুধালে না-- আপন মনের আকাঙক্ষারে আপনি কেন করলে হেলা ॥
রূপনারানের কূলেজেগে উঠিলাম,জানিলাম এ জগৎস্বপ্ন নয়।রক্তের অক্ষরে দেখিলামআপনার রূপ,চিনিলাম আপনারেআঘাতে আঘাতেবেদনায় বেদনায়;সত্য যে কঠিন,কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,সে কখনো করে না বঞ্চনা।আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন,সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে,মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে।
হাসির সময় বড়ো নেই,দু দণ্ডের তরে গান গাওয়া।নিমেষের মাঝে চুমো খেয়েমুহূর্তে ফুরাবে চুমো খাওয়া।বেলা নাই শেষ করিবারেঅসম্পূর্ণ প্রেমের মন্ত্রণা--সুখস্বপ্ন পলকে ফুরায়,তার পরে জাগ্রত যন্ত্রণা।কিছু ক্ষণ কথা কয়ে লও,তাড়াতাড়ি দেখে লও মুখ,দু দণ্ডের খোঁজ দেখাশুনা--ফুরাইবে খুঁজিবার সুখ।বেলা নাই কথা কহিবারেযে কথা কহিতে ফাটে প্রাণ।দেবতারে দুটো কথা ব'লে
পাঠক যে ভার নিলে সংগত হয় লেখকের প্রতি সে ভার দেওয়া চলে না। নিজের রচনা উপলক্ষে আত্মবিশ্লেষণ শোভন হয় না। তাকে অন্যায় বলা যায় এইজন্যে যে, নিতান্ত নৈর্ব্যক্তিক ভাবে এ কাজ করা অসম্ভব -- এইজন্য নিষ্কাম বিচারের লাইন ঠিক থাকে না। প্রকাশক জানতে চেয়েছেন নৌকাডুবি লিখতে গেলুম কী জন্যে। এ-সব কথা দেবা ন জানন্তি কুতো মনুষ্যাঃ। বাইরের খবরটা দেওয়া যেতে পারে, সে হল প্রকাশকের তাগিদ। উৎসটা গভীর ভিতরে, গোমুখী তো উৎস নয়। প্রকাশকের ফরমাশকে প্রেরণা বললে বেশি বলা হয়। অথচ তা ছাড়া বলব কী? গল্পটায় পেয়ে-বসা আর প্রকাশকে পেয়ে-বসা সম্পূর্ণ আলাদা কথা। বলা বাহুল্য ভিতরের দিকে গল্পের তাড়া ছিল না। গল্পলেখার পেয়াদা যখন দরজা ছাড়ে না তখন দায়ে পড়ে ভাবতে হল কী লিখি। সময়ের দাবি বদলে গেছে। একালে গল্পের কৌতূহলটা হয়ে উঠেছে মনোবিকলনমূলক। ...
পাঁচ ছেলের পর যখন এক কন্যা জন্মিল তখন বাপমায়ে অনেক আদর করিয়া তাহার নাম রাখিল নিরুপমা। এ গোষ্ঠীতে এমন শৌখিন নাম ইতিপূর্বে কখনো শোনা যায় নাই। প্রায় ঠাকুরদেবতার নামই প্রচলিত ছিল-- গণেশ, কার্তিক, পার্বতী, তাহার উদাহরণ।এখন নিরুপমার বিবাহের প্রস্তাব চলিতেছে। তাহার পিতা রামসুন্দর মিত্র অনেক খোঁজ করেন কিন্তু পাত্র কিছুতেই মনের মতন হয় না। অবশেষে মস্ত এক রায়বাহাদুরের ঘরের একমাত্র ছেলেকে সন্ধান করিয়া বাহির করিয়াছেন। উক্ত রায়বাহাদুরের পৈতৃক বিষয়-আশয় যদিও অনেক হ্রাস হইয়া আসিয়াছে কিন্তু বনেদি ঘর বটে।বরপক্ষ হইতে দশ হাজার টাকা পণ এবং বহুল দানসামগ্রী চাহিয়া বসিল। রামসুন্দর কিছুমাত্র বিবেচনা না করিয়া তাহাতেই সম্মত হইলেন; এমন পাত্র কোনোমতে হাতছাড়া করা যায় না।কিছুতেই টাকার জোগাড় আর হয় না। বাঁধা দিয়া, বিক্রয় করিয়া, ...