একটা আষাঢ়ে গল্প
Stories
দূর সমুদ্রের মধ্যে একটা দ্বীপ। সেখানে কেবল তাসের সাহেব, তাসের বিবি, টেক্কা এবং গোলামের বাস। দুরি তিরি হইতে নহলা-দহলা পর্যন্ত আরো অনেক-ঘর গৃহস্থ আছে কিন্তু তাহারা উচ্চজাতীয় নহে।
টেক্কা সাহেব গোলাম এই তিনটেই প্রধান বর্ণ, নহলা-দহলারা অন্ত্যজ-- তাহাদের সহিত এক পঙ্‌ক্তিতে বসিবার যোগ্য নহে।
আরো দেখুন
পায়ে চলার পথ
Stories
এই তো পায়ে চলার পথ।
এসেছে বনের মধ্যে দিয়ে মাঠে, মাঠের মধ্যে দিয়ে নদীর ধারে, খেয়াঘাটের পাশে বটগাছেরতলায়। তার পরে ও পারের ভাঙা ঘাট থেকে বেঁকে চলে গেছে গ্রামের মধ্যে; তার পরে তিসির খেতের ধার দিয়ে, আমবাগানের ছায়া দিয়ে, পদ্মদিঘির পাড় দিয়ে, রথতলার পাশ দিয়ে কোন্‌ গাঁয়ে গিয়ে পৌঁচেছে জানি নে।
আরো দেখুন
রিম ঝিম ঘন ঘন রে
Songs
রিম্‌ ঝিম্‌ ঘন ঘন রে বরষে।
গগনে ঘনঘটা, শিহরে তরুলতা,
ময়ূর ময়ূরী নাচিছে হরষে।
  দিশি দিশি সচকিত, দামিনী চমকিত,
চমকি উঠিছে হরিণী তরাসে!
আরো দেখুন
ডিটেকটিভ
Stories
আমি পুলিসের ডিটেকটিভ কর্মচারী।  আমার জীবনের দুটিমাত্র লক্ষ্য ছিল-- আমার স্ত্রী এবং আমার ব্যবসায়। পূর্বে একান্নবর্তী পরিবারের মধ্যে ছিলাম, সেখানে আমার স্ত্রীর প্রতি সমাদরের অভাব হওয়াতেই আমি দাদার সঙ্গে ঝগড়া করিয়া বাহির হইয়া আসি। দাদাই উপার্জন করিয়া আমাকে পালন করিতেছিলেন, অতএব সহসা সস্ত্রীক তাঁহার আশ্রয় ত্যাগ করিয়া আসা আমার পক্ষে দুঃসাহসের কাজ হইয়াছিল।
কিন্তু কখনো নিজের উপরে আমার বিশ্বাসের ত্রুটি ছিল না। আমি নিশ্চয় জানিতাম, সুন্দরী স্ত্রীকে যেমন বশ করিয়াছি বিমুখ অদৃষ্টলক্ষ্মীকেও তেমনি বশ করিতে পারিব। মহিমচন্দ্র এ সংসারে পশ্চাতে পড়িয়া থাকিবে না।
আরো দেখুন
কথিকা
Stories
এবার মনে হল, মানুষ অন্যায়ের আগুনে আপনার সমস্ত ভাবী কালটাকে পুড়িয়ে কালো করে দিয়েছে, সেখানে বসন্ত কোনোদিন এসে আর নতুন পাতা ধরাতে পারবে না।
মানুষ অনেক দিন থেকে একখানি আসন তৈরি করছে। সেই আসনই তাকে খবর দেয় যে, তার দেবতা আসবেন, তিনি পথে বেরিয়েছেন।
আরো দেখুন
ও নিঠুর, আরো কি বাণ
Verses
ও নিঠুর,        আরো কি বাণ
                          তোমার তূণে আছে?
      তুমি        মর্মে আমায়
          মারবে হিয়ার কাছে?
      আমি       পালিয়ে থাকি, মুদি আঁখি,
                আঁচল দিয়ে মুখ যে ঢাকি,
      কোথাও কিছু আঘাত লাগে পাছে।
মারকে তোমার
           ভয় করেছি বলে
  তাই তো এমন
           হৃদয় ওঠে জ্বলে।
  যেদিন সে ভয় ঘুচে যাবে
  সেদিন তোমার বাণ ফুরাবে,
  মরণকে প্রাণ বরণ করে বাঁচে।
আরো দেখুন
রবিবার
Stories
আমার গল্পের প্রধান মানুষটি প্রাচীন ব্রাহ্মণপণ্ডিত-বংশের ছেলে। বিষয়ব্যাপারে বাপ ওকালতি ব্যবসায়ে আঁটি পর্যন্ত পাকা, ধর্মকর্মে শাক্ত আচারের তীব্র জারক রসে জারিত। এখন আদালতে আর প্র্যাকটিস করতে হয় না। এক দিকে পূজা-অর্চনা আর-এক দিকে ঘরে বসে আইনের পরামর্শ দেওয়া, এই দুটোকে পাশাপাশি রেখে তিনি ইহকাল পরকালের জোড় মিলিয়ে অতি সাবধানে চলেছেন। কোনো দিকেই একটু পা ফসকায় না।
এইরকম নিরেট আচারবাঁধা সনাতনী ঘরের ফাটল ফুঁড়ে যদি দৈবাৎ কাঁটাওয়ালা নাস্তিক ওঠে গজিয়ে, তা হলে তার ভিত-দেয়াল-ভাঙা মন সাংঘাতিক ঠেলা মারতে থাকে ইঁটকাঠের প্রাচীন গাঁথুনির উপরে। এই আচারনিষ্ঠ বৈদিক ব্রাহ্মণের বংশে দুর্দান্ত কালাপাহাড়ের অভ্যুদয় হল আমাদের নায়কটিকে নিয়ে।
আরো দেখুন
মেঘলা দিনে
Stories
রোজই থাকে সমস্তদিন কাজ, আর চার দিকে লোকজন। রোজই মনে হয়, সেদিনকার কাজে, সেদিনকার আলাপে সেদিনকার সব কথা দিনের শেষে বুঝি একেবারে শেষ করে দেওয়া হয়। ভিতরে কোন্‌ কথাটি যে বাকি রয়ে গেল তা বুঝে নেবার সময় পাওয়া যায় না।
আজ সকালবেলা মেঘের স্তবকে স্তবকে আকাশের বুক ভরে উঠেছে। আজও সমস্ত দিনের কাজ আছে সামনে, আর লোক আছে চার দিকে। কিন্তু, আজ মনে হচ্ছে, ভিতরে যা-কিছু আছে বাইরে তা সমস্ত শেষ করে দেওয়া যায় না।
আরো দেখুন
জীবনমধ্যাহ্ন
Verses
      জীবন আছিল লঘু প্রথম বয়সে,
          চলেছিনু আপনার বলে,
       সুদীর্ঘ জীবনযাত্রা নবীন প্রভাতে
          আরম্ভিনু খেলিবার ছলে।
      অশ্রুতে ছিল না তাপ, হাস্যে উপহাস,
          বচনে ছিল না বিষানল--
       ভাবনাভ্রূকুটিহীন সরল ললাট
          সুপ্রশান্ত আনন্দ-উজ্জ্বল।
       কুটিল হইল পথ, জটিল জীবন,
          বেড়ে গেল জীবনের ভার--
       ধরণীর ধূলি-মাঝে গুরু আকর্ষণ,
          পতন হইল কত বার।
       আপনার 'পরে আর কিসের বিশ্বাস,
          আপনার মাঝে আশা নাই--
       দর্প চূর্ণ হয়ে গেছে, ধূলি-সাথে মিশে
          লজ্জাবস্ত্র  জীর্ণ শত ঠাঁই।
       তাই আজ বার বার ধাই তব পানে,
          ওহে তুমি নিখিলনির্ভর--
       অনন্ত এ দেশকাল আচ্ছন্ন করিয়া
          আছ তুমি আপনার 'পর।
       ক্ষণেক দাঁড়ায়ে পথে দেখিতেছি চেয়ে
          তোমার এ ব্রহ্মাণ্ড বৃহৎ--
       কোথায় এসেছি আমি, কোথায় যেতেছি,
          কোন্‌ পথে চলেছে জগৎ!
       প্রকৃতির শান্তি আজি করিতেছি পান
          চিরস্রোত সান্ত্বনার ধারা--
       নিশীথ-আকাশ-মাঝে নয়ন তুলিয়া
          দেখিতেছি কোটি গ্রহতারা--
       সুগভীর তামসীর ছিদ্রপথে যেন
          জ্যোতির্ময় তোমার আভাস,
       ওহে মহা-অন্ধকার, ওহে মহাজ্যোতি,
          অপ্রকাশ, চির-স্বপ্রকাশ।
      যখন জীবন-ভার ছিল লঘু অতি
          যখন ছিল না কোনো পাপ
       তখন তোমার পানে দেখি নাই চেয়ে,
          জানি নাই তোমার প্রতাপ--
       তোমার অগাধ শান্তি, রহস্য অপার,
          সৌন্দর্য অসীম অতুলন--
       স্তব্ধভাবে মুগ্ধনেত্রে নিবিড় বিস্ময়ে
          দেখি নাই তোমার ভুবন।
       কোমল সায়াহ্নলেখা বিষণ্ণ উদার
          প্রান্তরের প্রান্ত-আম্রবনে,
       বৈশাখের নীলধারা বিমলবাহিনী
          ক্ষীণ গঙ্গা সৈকতশয়নে,
       শিরোপরি সপ্ত ঋষি যুগ-যুগান্তের
          ইতিহাসে নিবিষ্ট-নয়ান,
       নিদ্রাহীন পূর্ণচন্দ্র নিস্তব্ধ নিশীথে
          নিদ্রার সমুদ্রে ভাসমান--
       নিত্যনিশ্বসিত বায়ু, উন্মেষিত উষা,
          কনকে শ্যামল সম্মিলন,
       দূর দূরান্তরশায়ী মধ্যাহ্ন উদাস,
          বনচ্ছায়া নিবিড় গহন,
       যতদূর নেত্র যায় শস্যশীর্ষরাশি
          ধরার অঞ্চলতল ভরি--
       জগতের মর্ম হতে মোর মর্মস্থলে
          আনিতেছে জীবনলহরী।
       বচন-অতীত ভাবে ভরিছে হৃদয়,
          নয়নে উঠিছে অশ্রুজল,
       বিরহবিষাদ মোর গলিয়া ঝরিয়া
          ভিজায় বিশ্বের বক্ষস্থল।
       প্রশান্ত গভীর এই প্রকৃতির মাঝে
          আমার জীবন হয় হারা,
       মিশে যায় মহাপ্রাণসাগরের বুকে
          ধূলিম্লান পাপতাপধারা।
       শুধু জেগে উঠে প্রেম মঙ্গল মধুর,
          বেড়ে যায় জীবনের গতি,
       ধূলিধৌত দুঃখশোক শুভ্রশান্ত বেশে
          ধরে যেন আনন্দমুরতি।
       বন্ধন হারায়ে গিয়ে স্বার্থ ব্যাপ্ত হয়
          অবারিত জগতের মাঝে,
       বিশ্বের নিশ্বাস লাগি জীবনকুহরে
          মঙ্গল-আনন্দধ্বনি বাজে।
আরো দেখুন
নিশীথে
Stories
'ডাক্তার! ডাক্তার!'
জ্বালাতন করিল! এই অর্ধেক রাত্রে--
আরো দেখুন
অপরিচিতা
Stories
আজ আমার বয়স সাতাশ মাত্র। এ জীবনটা না দৈর্ঘ্যের হিসাবে বড়ো, না গুণের হিসাবে। তবু ইহার একটু বিশেষ মূল্য আছে। ইহা সেই ফুলের মতো যাহার বুকের উপরে ভ্রমর আসিয়া বসিয়াছিল, এবং সেই পদক্ষেপের ইতিহাস তাহার জীবনের মাঝখানে ফলের মতো গুটি ধরিয়া উঠিয়াছে।
সেই ইতিহাসটুকু আকারে ছোটো, তাহাকে ছোটো করিয়াই লিখিব। ছোটোকে যাঁহারা সামান্য বলিয়া ভুল করেন না তাঁহারা ইহার রস বুঝিবেন।
আরো দেখুন