ভুল-ভাঙা
Verses
বুঝেছি আমার নিশার স্বপন
                হয়েছে ভোর।
        মালা ছিল, তার ফুলগুলি গেছে,
                রয়েছে ডোর।
        নেই আর সেই চুপি-চুপি চাওয়া,
        ধীরে কাছে এসে ফিরে ফিরে যাওয়া--
        চেয়ে আছে আঁখি, নাই ও আঁখিতে
                প্রেমের ঘোর।
        বাহুলতা শুধু বন্ধনপাশ
                বাহুতে মোর।
        হাসিটুকু আর পড়ে না তো ধরা
                অধরকোণে,
        আপনারে আর চাহ না লুকাতে
                আপন মনে।
        স্বর শুনে আর উতলা হৃদয়
        উথলি উঠে না সারা দেহময়,
        গান শুনে আর ভাসে না নয়নে
                নয়নলোর।
        আঁখিজলরেখা ঢাকিতে চাহে না
                শরম চোর।
বসন্ত নাহি এ ধরায় আর
                আগের মতো,
        জ্যোৎস্নাযামিনী যৌবনহারা
                জীবনহত।
        আর বুঝি কেহ বাজায় না বীণা,
        কে জানে কাননে ফুল ফোটে কি না--
        কে জানে সে ফুল তোলে কি না কেউ
                ভরি আঁচোর।
        কে জানে সে ফুলে মালা গাঁথে কি না
                সারা প্রহর।
        বাঁশি বেজেছিল, ধরা দিনু যেই
                থামিল বাঁশি--
        এখন কেবল চরণে শিকল
                কঠিন ফাঁসি।
        মধু নিশা গেছে, স্মৃতি তারি আজ
        মর্মে মর্মে হানিতেছে লাজ--
        সুখ গেছে, আছে সুখের ছলনা
                হৃদয়ে তোর।
        প্রেম গেছে, শুধু আছে প্রাণপণ
                মিছে আদর।
        কতই না জানি জেগেছ রজনী
                করুণ দুখে,
        সদয় নয়নে চেয়েছ আমার
                মলিন মুখে।
পরদুখভার সহে নাকো আর,
        লতায়ে পড়িছে দেহ সুকুমার--
        তবু আসি আমি পাষাণ হৃদয়
                বড়ো কঠোর।
        ঘুমাও, ঘুমাও, আঁখি ঢুলে আসে
                ঘুমে কাতর।
আরো দেখুন
আগমনী
Stories
আয়োজন চলেইছে। তার মাঝে একটুও ফাঁক পাওয়া যায় না যে ভেবে দেখি, কিসের আয়োজন।
তবুও কাজের ভিড়ের মধ্যে মনকে এক-একবার ঠেলা দিয়ে জিজ্ঞাসা করি, 'কেউ আসবে বুঝি?'
আরো দেখুন
মাল্যদান
Stories
সকালবেলায় শীত-শীত ছিল। দুপুরবেলায় বাতাসটি অল্প-একটু তাতিয়া উঠিয়া দক্ষিণ দিক হইতে বহিতে আরম্ভ করিয়াছে।
যতীন যে বারান্দায় বসিয়া ছিল সেখান হইতে বাগানের এক কোণে এক দিকে একটি কাঁঠাল ও আর-এক দিকে একটি শিরীষগাছের মাঝখানের ফাঁক দিয়া বাহিরের মাঠ চোখে পড়ে। সেই শূন্য মাঠ ফাল্গুনের রৌদ্রে ধুধু করিতেছিল। তাহারই একপ্রান্ত দিয়া কাঁচা পথ চলিয়া গেছে -- সেই পথ বাহিয়া বোঝাই-খালাস গোরুর গাড়ি মন্দগমনে গ্রামের দিকে ফিরিয়া চলিয়াছে, গাড়োয়ান মাথায় গামছা ফেলিয়া অত্যন্ত বেকারভাবে গান গহিতেছে।
আরো দেখুন
আমাকে যে বাঁধবে ধরে,
Songs
আমাকে যে বাঁধবে ধরে, এই হবে যার সাধন--
                সে কি অমনি হবে।
আমার কাছে পড়লে বাঁধা সেই হবে মোর বাঁধন--
                সে কি অমনি হবে॥
কে আমারে ভরসা করে আনতে আপন বশে--
                সে কি অমনি হবে।
আপনাকে সে করুক-না বশ, মজুক প্রেমের রসে--
                সে কি অমনি হবে।
আমাকে যে কাঁদাবে তার ভাগ্যে আছে কাঁদন--
                সে কি অমনি হবে।
আরো দেখুন
সিন্ধুতরঙ্গ
Verses
        পুরী-তীর্থযাত্রী তরণীর নিমজ্জন উপলক্ষে
    দোলে রে প্রলয় দোলে           অকূল সমুদ্র-কোলে,
                      উৎসব ভীষণ।
    শত পক্ষ ঝাপটিয়া                বেড়াইছে দাপটিয়া
                      দুর্দম পবন।
    আকাশ সমুদ্র-সাথে              প্রচণ্ড মিলনে মাতে,
         অখিলের আঁখিপাতে আবরি তিমির।
    বিদ্যুৎ চমকে ত্রাসি,           হা হা করে ফেনরাশি,
         তীক্ষ্ণ শ্বেত রুদ্র হাসি জড়-প্রকৃতির।
    চক্ষুহীন কর্ণহীন                    গেহহীন স্নেহহীন
                      মত্ত দৈত্যগণ
         মরিতে ছুটেছে কোথা, ছিঁড়েছে বন্ধন।
    হারাইয়া চারি ধার                  নীলাম্বুধি অন্ধকার
                      কল্লোলে, ক্রন্দনে,
    রোষে, ত্রাসে, ঊর্ধ্বশ্বাসে,         অট্টরোলে, অট্টহাসে,
                      উন্মাদ গর্জনে,
    ফাটিয়া ফুটিয়া উঠে,             চূর্ণ হয়ে যায় টুটে,
         খুঁজিয়া মরিছে ছুটে আপনার কূল--
    যেন রে পৃথিবী ফেলি         বাসুকী করিছে কেলি
         সহস্রৈক ফণা মেলি, আছাড়ি লাঙ্গুল।
    যেন রে তরল নিশি                 টলমলি দশ দিশি
                      উঠিছে নড়িয়া,
         আপন নিদ্রার জাল ফেলিছে ছিঁড়িয়া।
    নাই সুর, নাই ছন্দ,               অর্থহীন, নিরানন্দ
                      জড়ের নর্তন।
    সহস্র জীবনে বেঁচে               ওই কি উঠিছে নেচে
                      প্রকাণ্ড মরণ?
    জল বাষ্প বজ্র বায়ু               লভিয়াছে অন্ধ আয়ু,
         নূতন জীবনস্নায়ু টানিছে হতাশে,
    দিগ্বিদিক নাহি জানে,            বাধাবিঘ্ন নাহি মানে
         ছুটেছে প্রলয়-পানে আপনারি ত্রাসে;
    হেরো, মাঝখানে তারি            আট শত নরনারী
                      বাহু বাঁধি বুকে,
         প্রাণে আঁকড়িয়া প্রাণ, চাহিয়া সম্মুখে।
    তরণী ধরিয়া ঝাঁকে--         রাক্ষসী ঝটিকা হাঁকে,
                      "দাও, দাও, দাও!"
    সিন্ধু ফেনোচ্ছল ছলে           কোটি ঊর্ধ্বকরে বলে,
                      "দাও, দাও, দাও!"
    বিলম্ব দেখিয়া রোষে           ফেনায়ে ফেনায়ে ফোঁষে,
         নীল মৃত্যু মহাক্রোশে শ্বেত হয়ে উঠে।
    ক্ষুদ্র তরী গুরুভার           সহিতে পারে না আর,
         লৌহবক্ষ ওই তার যায় বুঝি টুটে।
    অধ ঊর্ধ্ব এক হয়ে                  ক্ষুদ্র এ খেলনা লয়ে
                      খেলিবারে চায়।
             দাঁড়াইয়া কর্ণধার তরীর মাথায়।
    নরনারী কম্পমাপ                ডাকিতেছে, ভগবান!
                      হায় ভগবান!
    দয়া করো, দয়া করো!              উঠিছে কাতর স্বর,
                      রাখো রাখো প্রাণ!
    কোথা সেই পুরাতন                  রবি শশী তারাগণ
             কোথা আপনার ধন ধরণীর কোল!
    আজন্মের স্নেহসার             কোথা সেই ঘরদ্বার,
         পিশাচী এ বিমাতার হিংস্র উতরোল!
    যে দিকে ফিরিয়া চাই              পরিচিত কিছু নাই,
                      নাই আপনার--
             সহস্র করাল মুখ সহস্র-আকার।
    ফেটেছে তরণীতল,              সবেগে উঠিছে জল,
                      সিন্ধু মেলে গ্রাস।
    নাই তুমি, ভগবান,             নাই দয়া, নাই প্রাণ--
                      জড়ের বিলাস।
    ভয় দেখে ভয় পায়,             শিশু কাঁদে উভরায়--
             নিদারুণ হায়-হায় থামিল চকিতে।
    নিমেষেই ফুরাইল,                   কখন জীবন ছিল
             কখন জীবন গেল নারিল লখিতে।
    যেন রে একই ঝড়ে                নিবে গেল একত্তরে
                    শত দীপ আলো,
             চকিতে সহস্র গৃহে আনন্দ ফুরালো।
    প্রাণহীন এ মত্ততা              না জানে পরের ব্যাথা,
                    না জানে আপন।
    এর মাঝে কেন রয়                ব্যথাভরা স্নেহময়
                    মানবের মন।
    মা কেন রে এইখানে,           শিশুচায় তার পানে,
          ভাই সে ভায়ের টানে কেন পড়ে বুকে।
    মধুর রবির করে                  কত ভালোবাসা-ভরে
          কতদিন খেলা করে কত সুখে দুখে।
    কেন করে টলমল               দুটি ছোটো অশ্রুজল,
                    সকরুণ আশা।
          দীপশিখাসম কাঁপে ভীত ভালোবাসা।
    এমন জড়ের কোলে           কেমনে নির্ভয়ে দোলে
                    নিখিল মানব।
    সব সুখ সব আশ              কেন নাহি করে গ্রাস
                    মরণ দানব।
    ওই-যে জন্মের তরে              জননী ঝাঁপায়ে পড়ে
          কেন বাঁধে বক্ষ-'পরে সন্তান আপন।
    মরণের মুখে ধায়,        সেথাও দিবে না তায়--
          কাড়িয়া রাখিতে চায় হৃদয়ের ধন।
    আকাশেতে পারাবারে           দাঁড়ায়েছে এক ধারে
                    এক ধারে নারী,
        দুর্বল শিশুটি তার কে লইবে কাড়ি?
    এ বল কোথায় পেলে,          আপন কোলের ছেলে
                    এত ক'রে টানে।
    এ নিষ্ঠুর জহস্রোতে            প্রেম এল কোথা হতে
                    মানবের প্রাণে।
    নৈরাশ্য কভু না জানে,           বিপত্তি কিছু না মানে,
               অপূর্ব অমৃতপাটে অনন্ত নবীন--
    এমন মায়ের প্রাণ                  যে বিশ্বের কোনোখান
             তিলেক পেয়েছে স্থান সে কি মাতৃহীন?
    এ প্রলয়-মাঝখানে                  অবলা জননী-প্রাণে
                    স্নেহ মৃত্যুজয়ী--
         এ স্নেহ জাগায়ে রাখে কোন্‌ স্নেহময়ী?
    পাশাপাশি এক ঠাঁই           দয়া আছে, দয়া নাই--
                    বিষম সংশয়।
    মহাশঙ্কা মহা-আশা                একত্র বেঁধেছে বাসা,
                    এক-সাথে রয়।
    কে বা সত্য, কে বা মিছে,     নিশিদিন আকুলিছে,
         কভু ঊর্ধ্বে কভু নীচে টানিছে হৃদয়।
    জড় দৈত্য শক্তি হানে,       মিনতি নাহিক মানে--
         প্রেম এসে কোলে টানে, দূর করে ভয়।
    এ কি দুই দেবতার                দ্যূতখেলা অনিবার
                    ভাঙাগড়াময়?
          চিরদিন অন্তহীন জয়পরাজয়?
আরো দেখুন
ফেল
Stories
ল্যাজা এবং মুড়া, রাহু এবং কেতু, পরস্পরের সঙ্গে আড়াআড়ি করিলে যেমন দেখিতে হইত এও ঠিক সেইরকম। প্রাচীন হালদার বংশ দুই খণ্ডে পৃথক হইয়া প্রকাণ্ড বসত-বাড়ির মাঝখানে এক ভিত্তি তুলিয়া পরস্পর পিঠাপিঠি করিয়া বসিয়া আছে; কেহ কাহারো মুখদর্শন করে না।
নবগোপালের ছেলে নলিন এবং ননীগোপালের ছেলে নন্দ একবংশজাত, একবয়সি, এক ইস্কুলে যায় এবং পারিবারিক বিদ্বেষ ও রেষারেষিতেও উভয়ের মধ্যে সম্পূর্ণ ঐক্য।
আরো দেখুন
শেষ কথা
Stories
জীবনের প্রবহমান ঘোলা রঙের হ-য-ব-র-লর মধ্যে হঠাৎ যেখানে গল্পটা আপন রূপ ধ'রে সদ্য দেখা দেয়, তার অনেক পূর্ব থেকেই নায়কনায়িকারা আপন পরিচয়ের সূত্র গেঁথে আনে। পিছন থেকে সেই প্রাক্‌গাল্পিক ইতিহাসের ধারা অনুসরণ করতেই হয়। তাই কিছু সময় নেব, আমি যে কে সেই কথাটাকে পরিষ্কার করবার জন্যে। কিন্তু নামধান ভাঁড়াতে হবে। নইলে জানাশোনা মহলের জবাবদিহী সামলাতে পারব না। কী নাম নেব তাই ভাবছি, রোম্যাণ্টিক নামকরণের দ্বারা গোড়া থেকেই গল্পটাকে বসন্তরাগে পঞ্চমসুরে বাঁধতে চাই নে। নবীনমাধব নামটা বোধ হয় চলে যেতে পারবে, ওর বাস্তবের শাম্‌লা রঙটা ধুয়ে ফেলে করা যেতে পারত নবারুণ সেনগুপ্ত; কিন্তু তা হলে খাঁটি শোনাত না, গল্পটা নামের বড়াই ক'রে লোকের বিশ্বাস হারাত, লোকে মনে করত ধার-করা জামিয়ার প'রে সাহিত্যসভায় বাবুয়ানা করতে এসেছে।
আমি বাংলাদেশের বিপ্লবীদলের একজন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মহাকর্ষশক্তি আণ্ডামানতীরের খুব কাছাকাছি টান মেরেছিল। নানা বাঁকা পথে সি.আই.ডি.-র ফাঁস এড়িয়ে এড়িয়ে গিয়েছিলুম আফগানিস্থান পর্যন্ত। অবশেষে পৌঁচেছি আমেরিকায় খালাসির কাজ নিয়ে। পূর্ববঙ্গীয় জেদ ছিল মজ্জায়, একদিনও ভুলি নি যে, ভারতবর্ষের হাতপায়ের শিকলে উখো ঘষতে হবে দিনরাত যতদিন বেঁচে থাকি। কিন্তু বিদেশে কিছুদিন থাকতেই একটা কথা নিশ্চিত বুঝেছিলুম, আমরা যে প্রণালীতে বিপ্লবের পালা শুরু করেছিলুম, সে যেন আতশবাজিতে পটকা ছোঁড়ার মতো, তাতে নিজের পোড়াকপাল পুড়িয়েছি অনেকবার, দাগ পড়ে নি ব্রিটিশ রাজতক্তে। আগুনের উপর পতঙ্গের অন্ধ আসক্তি। যখন সদর্পে ঝাঁপ দিয়ে পড়েছিলুম তখন বুঝতে পারি নি, সেটাতে ইতিহাসের যজ্ঞানল জ্বালানো হচ্ছে না, জ্বালাচ্ছি নিজেদের খুব ছোটো ছোটো চিতানল। ইতিমধ্যে য়ুরোপীয় মহাসমরের ভীষণ প্রলয়রূপ তার অতি বিপুল আয়োজন সমেত চোখের সামনে দেখা দিয়েছিল-- এই যুগান্তরসাধিনী সর্বনাশাকে আমাদের খোড়োঘরের চণ্ডীমণ্ডপে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে সে দুরাশা মন থেকে লুপ্ত হয়ে গেল; সমারোহ ক'রে আত্মহত্যা করবার মতোও আয়োজন ঘরে নেই। তখন ঠিক করলুম, ন্যাশনাল দুর্গের গোড়া পাকা করতে হবে। স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলুম, বাঁচতে যদি চাই আদিম যুগের হাত দুখানায় যে কটা নখ আছে তা দিয়ে লড়াই করা চলবে না। এ যুগে যন্ত্রের সঙ্গে যন্ত্রের দিতে হবে পাল্লা; যেমন-তেমন করে মরা সহজ, কিন্তু বিশ্বকর্মার চেলাগিরি করা সহজ নয়। অধীর হয়ে ফল নেই, গোড়া থেকেই কাজ শুরু করতে হবে-- পথ দীর্ঘ, সাধনা কঠিন।
আরো দেখুন
মধ্যবর্তিনী
Stories
নিবারণের সংসার নিতান্তই সচরাচর রকমের, তাহাতে কাব্যরসের কোনো নামগন্ধ ছিল না। জীবনে উক্ত রসের যে কোনো আবশ্যক আছে, এমন কথা তাহার মনে কখনো উদয় হয় নাই। যেমন পরিচিত পুরাতন চটি-জোড়াটার মধ্যে পা দুটো দিব্য নিশ্চিন্তভাবে প্রবেশ করে, এই পুরাতন পৃথিবীটার মধ্যে নিবারণ সেইরূপ আপনার চিরাভ্যস্ত স্থানটি অধিকার করিয়া থাকে, সে সম্বন্ধে ভ্রমেও কোনোরূপ চিন্তা তর্ক বা তত্ত্বালোচনা করে না।
নিবারণ প্রাতঃকালে উঠিয়া গলির ধারে গৃহদ্বারে খোলাগায়ে বসিয়া অত্যন্ত নিরুদ্বিগ্নভাবে হুঁকাটি লইয়া তামাক খাইতে থাকে। পথ দিয়া লোকজন যাতায়াত করে, গাড়ি ঘোড়া চলে, বৈষ্ণব-ভিখারি গান গাহে, পুরাতন বোতল সংগ্রহকারী হাঁকিয়া চলিয়া যায়; এই সমস্ত চঞ্চল দৃশ্য মনকে লঘুভাবে ব্যাপৃত রাখে এবং যেদিন কাঁচা আম অথবা তপসি-মাছওয়ালা আসে, সেদিন অনেক দরদাম করিয়া কিঞ্চিৎ বিশেষরূপে রন্ধনের আয়োজন হয়। তাহার পর যথাসময়ে তেল মাখিয়া স্নান করিয়া আহারান্তে দড়িতে ঝুলানো চাপকানটি পরিয়া এক ছিলিম তামাক পানের সহিত নিঃশেষপূর্বক আর একটি পান মুখে পুরিয়া, আপিসে যাত্রা করে। আপিস হইতে ফিরিয়া আসিয়া সন্ধ্যেবেলাটা প্রতিবেশী রামলোচন ঘোষের বাড়িতে প্রশান্ত গম্ভীর ভাবে সন্ধ্যাযাপন করিয়া আহারান্তে রাত্রে শয়নগৃহে স্ত্রী হরসুন্দরীর সহিত সাক্ষাৎ হয়।
আরো দেখুন
পত্র
Verses
শ্রীমতী ইন্দিরা প্রাণাধিকাসু
স্টীমার । খুলনা
মাগো আমার লক্ষ্ণী,
মনিষ্যি না পক্ষী!
এই ছিলেম তরীতে,
কোথায় এনু ত্বরিতে!
কাল ছিলেম খুলনায়,
তাতে তো আর ভুল নাই,
কলকাতায় এসেছি সদ্য,
বসে বসে লিখছি পদ্য।
তোদের ফেলে সারাটা দিন
          আছি অমন এক রকম,
খোপে বসে পায়রা যেন
          করছি কেবল বক্‌বকম!
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
          মেঘ করেছে আকাশে,
উষার রাঙা মুখখানি গো
          কেমন যেন ফ্যাকাশে!
বাড়িতে যে কেউ কোথা নেই
          দুয়োরগুলো ভেজানো,
ঘরে ঘরে খুঁজে বেড়াই
          ঘরে আছে কে যেন!
পক্ষীটি সেই ঝুপসি হয়ে
          ঝিমচ্ছে রে খাঁচাতে,
ভুলে গেছে নেচে নেচে
          পুচ্ছটি তার নাচাতে।
ঘরের কোণে আপন মনে
          শূন্য পড়ে বিছেনা,
কাহার তরে কেঁদে মরে
          সে কথাটা মিছে না!
বইগুলো সব ছড়িয়ে প'ড়ে
          নাম লেখা তায় কার গো!
এমনি তারা রবে কি রে
          খুলবে না কেউ আর গো!
এটা আছে সেটা আছে
          অভাব কিছুই নেই তো,
স্মরণ করে দেয় রে যারে
          থাকে নাতো সেই তো!
বাগানে ওই দুটো গাছে
          ফুল ফুটেছে রাশি রাশি,
ফুলের গন্ধে মনে পড়ে
          ফুল কে আমায় দিত মেলা,
বিছেনায় কার মুখটি দেখে
          সকাল হত সকালবেলা!
জল থেকে তুই আসবি কবে
          মাটির লক্ষ্ণী মাটিতে
ঠাকুরবাবুর ছয় নম্বর
          জোড়াসাঁকোর বাটীতে!
ইস্টিম ওই রে ফুরিয়ে এল
          নোঙর তবে ফেলি অদ্য।
অবিদিত নেই তো তোমার
          রবিকাকা কুঁড়ের হদ্দ!
আজকে নাকি মেঘ করেছে
          ঠেকছে কেমন ফাঁকা-ফাঁকা,
তাই খানিকটা ফোঁসফোঁসিয়ে
          বিদায় হল--
                             রবিকাকা।
আরো দেখুন