নামের খেলা
Stories
প্রথম বয়সেই সে কবিতা লিখতে শুরু করে।
বহু যত্নে খাতায় সোনালি কালির কিনারা টেনে, তারই গায়ে লতা এঁকে, মাঝখানে লাল কালি দিয়ে কবিতাগুলি লিখে রাখত। আর, খুব সমারোহে মলাটের উপর লিখত, শ্রীকেদারনাথ ঘোষ।
আরো দেখুন
প্রায়শ্চিত্ত
Stories
মণীন্দ্র ছেলেটির বয়স হবে চোদ্দ। তার বুদ্ধি খুব তীক্ষ্ণ কিন্তু পড়াশুনায় বিশেষ মনোযোগ নেই। তবু সে স্বভাবতই মেধাবী বলে বৎসরে বৎসরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু অধ্যাপকেরা তার কাছে যতটা প্রত্যাশা করেন সে-অনুরূপ ফল হয় না। মণীন্দ্রের পিতা দিব্যেন্দু ছিলেন এই বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ। কর্তব্যে ছেলের শৈথিল্য দেখে তাঁর মন উদ্‌বিগ্ন ছিল।
অক্ষয় মণীন্দ্রের সঙ্গে এক ক্লাসে পড়ে। সে বড়ো দরিদ্র। ছাত্রবৃত্তির 'পরেই তার নির্ভর। মা বিধবা। বহু কষ্টে অক্ষয়কে মানুষ করেছেন। তার পিতা প্রিয়নাথ যখন জীবিত ছিলেন তখন যথেষ্ট উপার্জন করতেন। লোকের কাছে তাঁর সম্মানও ছিল খুব বেশি। কিন্তু ব্যয় করতেও তিনি মুক্ত হস্ত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে দেখা গেল যত তাঁর ঋণ, সম্পত্তি তার অর্ধেকও নয়। অক্ষয়ের মা সাবিত্রী তাঁর যত কিছু অলংকার, গাড়ি ঘোড়া বাড়ি গৃহসজ্জা প্রভৃতি সমস্ত বিক্রয় করে ক্রমে ক্রমে স্বামীর ঋণ শোধ করেছেন।
আরো দেখুন
কর্মফল
Stories
আজ সতীশের মাসি সুকুমারী এবং মেসোমশায় শশধরবাবু আসিয়াছেন-- সতীশের মা বিধুমুখী ব্যস্তসমস্তভাবে তাঁহাদের অভ্যর্থনায় নিযুক্ত। 'এসো দিদি, বোসো। আজ কোন্‌ পুণ্যে রায়মশায়ের দেখা পাওয়া গেল! দিদি না আসলে তোমার আর দেখা পাবার জো নেই।'
শশধর। এতেই বুঝবে তোমার দিদির শাসন কিরকম কড়া। দিনরাত্রি চোখে চোখে রাখেন।
আরো দেখুন
সান্ত্বনা
Verses
কোথা হতে দুই চক্ষে ভরে নিয়ে এলে জল
     হে প্রিয় আমার।
হে ব্যথিত, হে অশান্ত, বলো আজি গাব গান
     কোন্‌ সান্ত্বনার।
  হেথায় প্রান্তরপারে
  নগরীর এক ধারে
  সায়াহ্নের অন্ধকারে
     জ্বালি দীপখানি
  শূন্য গৃহে অন্যমনে
  একাকিনী বাতায়নে
  বসে আছি পুষ্পাসনে
     বাসরের রানী--
কোথা বক্ষে বিঁধি কাঁটা ফিরিলে আপন নীড়ে
     হে আমার পাখি।
ওরে ক্লিষ্ট, ওরে ক্লান্ত, কোথা তোর বাজে ব্যথা,
     কোথা তোরে রাখি।
চারি দিকে তমস্বিনী রজনী দিয়েছে টানি
    মায়ামন্ত্র-ঘের--
দুয়ার রেখেছি রুধি, চেয়ে দেখো কিছু হেথা
    নাহি বাহিরের।
  এ যে দুজনের দেশ,
  নিখিলের সব শেষ,
  মিলনের রসাবেশ
    অনন্ত ভবন--
  শুধু এই এক ঘরে
  দুখানি হৃদয় ধরে,
  দুজনে সৃজন করে
    নূতন ভুবন।
একটি প্রদীপ শুধু এ আঁধারে যতটুকু
    আলো করে রাখে
সেই আমাদের বিশ্ব, তাহার বাহিরে আর
    চিনি না কাহাকে।
একখানি বীণা আছে, কভু বাজে মোর বুকে
    কভু তব কোরে।
একটি রেখেছি মালা, তোমারে পরায়ে দিলে
    তুমি দিবে মোরে।
  এক শয্যা রাজধানী,
  আধেক আঁচলখানি
  বক্ষ হতে লয়ে টানি
    পাতিব শয়ন।
  একটি চুম্বন গড়ি
  দোঁহে লব ভাগ করি--
  এ রাজত্বে, মরি মরি,
    এত আয়োজন।
একটি গোলাপফুল রেখেছি বক্ষের মাঝে,
    তব ঘ্রাণশেষে
আমারে ফিরায়ে দিলে অধরে পরশি তাহা
    পরি লব কেশে।
আজ করেছিনু মনে তোমারে করিব রাজা
    এই রাজ্যপাটে,
এ অমর বরমাল্য আপনি যতনে তব
    জড়াব ললাটে।
  মঙ্গলপ্রদীপ ধ'রে
  লইব বরণ করে,
  পুষ্পসিংহাসন-'পরে
      বসাব তোমায়--
  তাই গাঁথিয়াছি হার,
  আনিয়াছি ফুলভার,
  দিয়েছি নূতন তার
      কনকবীণায়।
আকাশে নক্ষত্রসভা নীরবে বসিয়া আছে
      শান্ত কৌতূহলে--
আজি কি এ মালাখানি সিক্ত হবে, হে রাজন্‌,
      নয়নের জলে।
রুদ্ধকণ্ঠ, গীতহারা, কহিয়ো না কোনো কথা,
      কিছু শুধাব না--
নীরবে লইব প্রাণে তোমার হৃদয় হতে
      নীরব বেদনা।
  প্রদীপ নিবায়ে দিব,
  বক্ষে মাথা তুলি নিব,
  স্নিগ্ধ করে পরশিব
      সজল কপোল--
  বেণীমুক্ত কেশজাল
  স্পর্শিবে তাপিত ভাল,
  কোমল বক্ষের তাল
      মৃদুমন্দ দোল।
নিশ্বাসবীজনে মোর কাঁপিবে কুন্তল তব,
      মুদিবে নয়ন--
অর্ধরাতে শান্তবায়ে নিদ্রিত ললাটে দিব
      একটি চুম্বন।
আরো দেখুন
শাস্তি
Stories
দুখিরাম রুই এবং ছিদাম রুই দুই ভাই সকালে যখন দা হাতে লইয়া জন খাটিতে বাহির হইল তখন তাহাদের দুই স্ত্রীর মধ্যে বকাবকি চেঁচামেচি চলিতেছে। কিন্তু প্রকৃতির অন্যান্য নানাবিধ নিত্য কলরবের ন্যায় এই কলহ-কোলাহলও পাড়াসুদ্ধ লোকের অভ্যাস হইয়া গেছে। তীব্র কণ্ঠস্বর শুনিবামাত্র লোকে পরস্পরকে বলে--'ওই রে বাধিয়া গিয়াছে,' অর্থাৎ যেমনটি আশা করা যায় ঠিক তেমনিটি ঘটিয়াছে, আজও স্বভাবের নিয়মের কোনোরূপ ব্যত্যয় হয় নাই। প্রভাতে পূর্বদিকে সূর্য উঠিলে যেমন কেহ তাহার কারণ জিজ্ঞাসা করে না, তেমনি এই কুরিদের বাড়িতে দুই জায়ের মধ্যে যখন একটা হৈ-হৈ পড়িয়া যায় তখন তাহার কারণ জিজ্ঞাসা করে না, তেমনি এই কুরিদের বাড়িতে দুই জায়ের মধ্যে যখন একটা হৈ-হৈ পড়িয়া যায় তখন তাহার কারণ নির্ণয়ের জন্য কাহারও কোনোরূপ কৌতূহলের উদ্রেক হয় না।
অবশ্য এই কোন্দল আন্দোলন প্রতিবেশীদের অপেক্ষা দুই স্বামীকে বেশি স্পর্শ করিত সন্দেহ নাই, কিন্তু সেটা তাহারা কোনোরূপ অসুবিধার মধ্যে গণ্য করিত না। তাহারা দুই ভাই যেন দীর্ঘ সংসারপথ একটা এক্কাগাড়িতে করিয়া চলিয়াছে, দুই দিকের দুই স্প্রিংবিহীন চাকার অবিশ্রাম ছড়ছড় খড়খড় শব্দটাকে জীবনরথযাত্রার একটা বিধিবিহিত নিয়মের মধ্যেই ধরিয়া লইয়াছে।
আরো দেখুন
অতিথি
Stories
কাঁঠালিয়ার জমিদার মতিলালবাবু নৌকা করিয়া সপরিবারে স্বদেশে যাইতেছিলেন। পথের মধ্যে মধ্যাহ্নে নদীতীরের এক গঞ্জের নিকট নৌকা বাঁধিয়া পাকের আয়োজন করিতেছেন এমন সময় এক ব্রাহ্মণবালক আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, 'বাবু, তোমরা যাচ্ছ কোথায়?'
প্রশ্নকর্তার বয়স পনেরো-ষোলোর অধিক হইবে না।
আরো দেখুন
পান্নালাল
Stories
দাদামশায়, তোমার পাগলের দলের মধ্যে পান্নালাল ছিল খুব নতুন রকমের।
জান, দিদি? তোমার পাগলরা প্রত্যেকেই নতুন, কারও সঙ্গে কারও মিল হয় না। যেমন তোমার দাদামশায়। বিধাতার নতুন পরীক্ষা। ছাঁচ তিনি ভেঙে ফেলেন। সাধারণ লোকের বুদ্ধিতে মিল হয়, অসাধারণ পাগলের মিল হয় না। তোমাকে একটা উদাহরণ দেখাই--
আরো দেখুন
গল্প
Stories
ছেলেটির যেমনি কথা ফুটল অমনি সে বললে, 'গল্প বলো।'
দিদিমা বলতে শুরু করলেন, 'এক রাজপুত্তুর, কোটালের পুত্তুর, সদাগরের পুত্তুর--'
আরো দেখুন