কঙ্কাল
Stories
আমরা তিন বাল্যসঙ্গী যে ঘরে শয়ন করিতাম তাহার পাশের ঘরের দেয়ালে একটি আস্ত নরকঙ্কাল ঝুলানো থাকিত। রাত্রে বাতাসে তাহার হাড়গুলা খট্‌খট্‌ শব্দ করিয়া নড়িত। দিনের বেলায় আমাদিগকে সেই হাড় নাড়িতে হইত। আমরা তখন পণ্ডিত-মহাশয়ের নিকট মেঘনাদবধ এবং ক্যাম্বেল স্কুলের এক ছাত্রের কাছে অস্থিবিদ্যা পড়িতাম। আমাদের অভিভাবকের ইচ্ছা ছিল আমাদিগকে সহসা সর্ববিদ্যায় পারদর্শী করিয়া তুলিবেন। তাঁহার অভিপ্রায় কতদূর সফল হইয়াছে যাঁহারা আমাদিগকে জানেন তাঁহাদের নিকট প্রকাশ করা বাহুল্য এবং যাঁহারা জানেন না তাঁহাদের নিকট গোপন করাই শ্রেয়।
তাহার পর বহুকাল অতীত হইয়াছে। ইতিমধ্যে সেই ঘর হইতে কঙ্কাল এবং আমাদের মাথা হইতে অস্থিবিদ্যা কোথায় স্থানান্তরিত হইয়াছে অন্বেষণ করিয়া জানা যায় না।
আরো দেখুন
দুই পাখি
Verses
খাঁচার পাখি ছিল     সোনার খাঁচাটিতে
                   বনের পাখি ছিল বনে।
একদা কী করিয়া     মিলন হল দোঁহে,
        কী ছিল বিধাতার মনে।
বনের পাখি বলে,  খাঁচার পাখি ভাই,
       বনেতে যাই দোঁহে মিলে।
খাঁচার পাখি বলে-- বনের পাখি, আয়
        খাঁচায় থাকি নিরিবিলে।'
                   বনের পাখি বলে-- "না,
আমি     শিকলে ধরা নাহি দিব।'
        খাঁচার পাখি বলে-- "হায়,
আমি     কেমনে বনে বাহিরিব!'
বনের পাখি গাহে বাহিরে বসি বসি
                   বনের গান ছিল যত,
খাঁচার পাখি পড়ে শিখানো বুলি তার--
                 দোঁহার ভাষা দুইমতো।
বনের  পাখি বলে, খাঁচার পাখি ভাই,
        বনের গান গাও দিখি।
খাঁচার পাখি বলে, বনের পাখি ভাই,
খাঁচার গান লহো শিখি।
          বনের পাখি বলে-- না,
আমি     শিখানো গান নাহি চাই।'
        খাঁচার পাখি বলে-- "হায়,
আমি     কেমনে বন-গান গাই।'
         বনের পাখি বলে, "আকাশ ঘননীল,
        কোথাও বাধা নাহি তার।'
খাঁচার পাখি বলে, "খাঁচাটি পরিপাটি
        কেমন ঢাকা চারি ধার।'
বনের পাখি বলে, "আপনা ছাড়ি দাও
        মেঘের মাঝে একেবারে।'
খাঁচার পাখি বলে, নিরালা সুখকোণে
        বাঁধিয়া রাখো আপনারে!'
        বনের পাখি বলে-- "না,
সেথা     কোথায় উড়িবারে পাই!'
        খাঁচার পাখি বলে-- "হায়,
মেঘে     কোথায় বসিবার ঠাঁই!'
এমনি দুই পাখি দোঁহারে ভালোবাসে
        তবুও কাছে নাহি পায়।
খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে পরশে মুখে মুখে,
        নীরবে চোখে চোখে চায়।
দুজনে কেহ কারে বুঝিতে নাহি পারে,
        বুঝাতে নারে আপনায়।
দুজনে একা একা ঝাপটি মরে পাখা,
        কাতরে কহে, "কাছে আয়!'
        বনের পাখি বলে--না,
কবে     খাঁচার রুধি দিবে দ্বার।
        খাঁচার পাখি বলে--হায়,
মোর     শকতি নাহি উড়িবার।
আরো দেখুন
স্বর্গ-মর্ত
Stories
গান
মাটির প্রদীপখানি আছে
আরো দেখুন
যজ্ঞেশ্বরের যজ্ঞ
Stories
এক সময় যজ্ঞেশ্বরের অবস্থা ভালোই ছিল। এখন প্রাচীন ভাঙা কোঠাবাড়িটাকে সাপব্যাঙ-বাদুড়ের হস্তে সমর্পণ করিয়া খোড়ো ঘরে ভগবদগীতা লইয়া কালযাপন করিতেছেন।
এগারো বৎসর পূর্বে তাঁহার মেয়েটি যখন জন্মিয়াছিল তখন বংশের সৌভাগ্যশশী কৃষ্ণপক্ষের শেষকলায় আসিয়া ঠেকিয়াছে। সেইজন্য সাধ করিয়া মেয়ের নাম রাখিয়াছিলেন কমলা। ভাবিয়াছিলেন, যদি এই কৌশলে ফাঁকি দিয়া চঞ্চলা লক্ষ্মীকে কন্যারূপে ঘরে ধরিয়া রাখিতে পারেন। লক্ষ্মী সে ফন্দিতে ধরা দিলেন না, কিন্তু মেয়েটির মুখে নিজের শ্রী রাখিয়া গেলেন। বড়ো সুন্দরী মেয়ে।
আরো দেখুন
তীর্থযাত্রিণী
Verses
          তীর্থের যাত্রিণী ও যে, জীবনের পথে
শেষ আধক্রোশটুকু টেনে টেনে চলে কোনোমতে।
                   হাতে নামজপ-ঝুলি
          পাশে তার রয়েছে পুটুলি।
ভোর হতে ধৈর্য ধরি বসি ইস্টেশনে
          অস্পষ্ট ভাবনা আসে মনে--
আর কোনো ইস্টেশনে আছে যেন আর কোনো ঠাঁই,
                   যেথা সব ব্যর্থতাই
                             আপনায়
          হারানো অর্থেরে ফিরে পায়,
                   যেথা গিয়ে ছায়া
কোনো-এক রূপ ধরি পায় যেন কোনো-এক কায়া।
          বুকের ভিতরে ওর পিছু হতে দেয় দোল
                   আশৈশব-পরিচিত দূর সংসারের কলরোল
          প্রত্যাখ্যাত জীবনের প্রতিহত আশা
অজানার নিরুদ্দেশে প্রদোষ খুঁজিতে চলে বাসা।
যে পথে সে করেছিল যাত্রা একদিন
                   সেখানে নবীন
          আলোকে আকাশ ওর মুখ চেয়ে উঠেছিল হেসে।
                   সে পথে পড়েছে আজ এসে
                             অজানা লোকের দল,
          তাদের কন্ঠের ধ্বনি ওর কাছে ব্যর্থ কোলাহল।
                   যে যৌবনখানি
          একদিন পথে যেতে বল্লভেরে দিয়েছিল আনি
                   মধুমদিরার রসে বেদনার নেশা
                             দুঃখে-সুখে-মেশা
          সে রসের রিক্ত পাত্রে আজ শুষ্ক অবহেলা,
          মধুপগুঞ্জনহীন যেন ক্লান্ত হেমন্তের বেলা।
          আজিকে চলেছে যারা খেলার সঙ্গীর আশে
                             ওরে ঠেলে যায় পথপাশে;
                   যে খুঁজিছে দুর্গমের সাথি
          ও পারে না তার পথে জ্বালাইতে বাতি
                   জীর্ণ কম্পমান হাতে
                             দুর্যোগের রাতে।
                   একদিন যারা সবে এ পথনির্মাণে
                             লেগেছিল আপনার জীবনের দানে
                                      ও ছিল তাদেরি মাঝে
                                                নানা কাজে--
                                      সে পথ উহার আজ নহে।
                   সেথা আজি কোন্‌ দূত কী বারতা বহে
                                      কোন্‌ লক্ষ্য-পানে
                                                নাহি জানে।
          পরিত্যক্ত একা বসি ভাবিতেছে, পাবে বুঝি দূরে
সংসারের গ্লানি ফেলে স্বর্গ-ঘেঁষা দুমূর্ল্য কিছুরে।
                             হায়, সেই কিছু
          যাবে ওর আগে আগে প্রেতসম, ও চলিবে পিছু
                   ক্ষীণালোকে, প্রতিদিন ধরি-ধরি করি তারে
                             অবশেষে মিলাবে আঁধারে।
আরো দেখুন
249
Verses
স্তব্ধতা উচ্ছ্বসি উঠে গিরিশৃঙ্গরূপে,
     ঊর্ধ্বে খোঁজে আপন মহিমা।
গতিবেগ সরোবরে থেমে চায় চুপে
     গভীরে খুঁজিতে নিজ সীমা।
আরো দেখুন
পাত্র ও পাত্রী
Stories
ইতিপূর্বে প্রজাপতি কখনো আমার কপালে বসেন নি বটে, কিন্তু একবার আমার মানসপদ্মে বসেছিলেন। তখন আমার বয়স ষোলো। তার পরে কাঁচা ঘুমে চমক লাগিয়ে দিলে যেমন ঘুম আর আসতে চায় না, আমার সেই দশা হল। আমার বন্ধুবান্ধবরা কেউ কেউ দারপরিগ্রহ ব্যাপারে দ্বিতীয়, এমন-কি তৃতীয় পক্ষে প্রোমোশন পেলেন; আমি কৌমার্যের লাস্ট বেঞ্চিতে বসে শূন্য সংসারের কড়িকাঠ গণনা করে কাটিয়ে দিলুম।
আমি চোদ্দ বছর বয়সে এনট্রেন্স পাস করেছিলুম। তখন বিবাহ কিম্বা এনট্রেন্স পরীক্ষায় বয়সবিচার ছিল না। আমি কোনোদিন পড়ার বই গিলি নি, সেইজন্যে শারীরিক বা মানসিক অজীর্ণ রোগে আমাকে ভুগতে হয় নি। ইঁদুর যেমন দাঁত বসাবার জিনিস পেলেই সেটাকে কেটে-কুটে ফেলে, তা সেটা খাদ্যই হোক আর অখাদ্যই হোক, শিশুকাল থেকেই তেমনি ছাপার বই দেখলেই সেটা পড়ে ফেলা আমার স্বভাব ছিল। সংসারে পড়ার বইয়ের চেয়ে না-পড়ার বইয়ের সংখ্যা ঢের বেশি, এইজন্য আমার পুঁথির সৌরজগতে স্কুল-পাঠ্য পৃথিবীর চেয়ে বেস্কুল-পাঠ্য সূর্য চোদ্দ লক্ষগুণে বড়ো ছিল। তবু, আমার সংস্কৃত-পণ্ডিতমশায়ের নিদারুণ ভবিষ্যদ্‌বাণী সত্ত্বেও, আমি পরীক্ষায় পাস করেছিলুম।
আরো দেখুন
মুক্তি
Stories
বিরহিণী তার ফুলবাগানের এক ধারে বেদী সাজিয়ে তার উপর মূর্তি গড়তে বসল। তার মনের মধ্যে যে মানুষটি ছিল বাইরে তারই প্রতিরূপ প্রতিদিন একটু একটু করে গড়ে, আর চেয়ে চেয়ে দেখে, আর ভাবে, আর চোখ দিয়ে জল পড়ে।
কিন্তু, যে রূপটি একদিন তার চিত্তপটে স্পষ্ট ছিল তার উপরে ক্রমে যেন ছায়া পড়ে আসছে। রাতের বেলাকার পদ্মের মতো স্মৃতির পাপড়িগুলি অল্প অল্প করে যেন মুদে এল।
আরো দেখুন
মাস্টারমশায়
Stories
রাত্রি তখন প্রায় দুটা। কলিকাতার নিস্তব্ধ শব্দসমুদ্রে একটুখানি ঢেউ তুলিয়া একটা বড়ো জুড়িগাড়ি ভবানীপুরের দিক হইতে আসিয়া বির্জিতলাওয়ের মোড়ের কাছে থামিল। সেখানে একটা ঠিকাগাড়ি দেখিয়া, আরোহী বাবু তাহাকে ডাকিয়া আনাইলেন। তাহার পাশে একটি কোট-হ্যাট-পরা বাঙালি বিলাতফের্তা যুবা সম্মুখের আসনে দুই পা তুলিয়া দিয়া একটু মদমত্ত অবস্থায় ঘাড় নামাইয়া ঘুমাইতেছিল। এই যুবকটি নূতন বিলাত হইতে আসিয়াছে। ইহারই অভ্যর্থনা উপলক্ষে বন্ধুমহলে একটা খানা হইয়া গেছে। সেই খানা হইতে ফিরিবার পথে একজন বন্ধু তাহাকে কিছুদূর অগ্রসর করিবার জন্য নিজের গাড়িতে তুলিয়া লইয়াছেন। তিনি ইহাকে দু-তিনবার ঠেলা দিয়া জাগাইয়া কহিলেন, 'মজুমদার, গাড়ি পাওয়া গেছে, বাড়ি যাও।'
মজুমদার সচকিত হইয়া একটা বিলাতি দিব্য গালিয়া ভাড়াটে গাড়িতে উঠিয়া পড়িল। তাহার গাড়োয়ানকে ভালো করিয়া ঠিকানা বাতলাইয়া দিয়া ব্রুহাম গাড়ির আরোহী নিজের গম্যপথে চলিয়া গেলেন।
আরো দেখুন
পাথরপিণ্ড
Verses
   সাগরতীরে পাথরপিণ্ড ঢুঁ মারতে চায় কাকে,
               বুঝি আকাশটাকে।
        শান্ত আকাশ দেয় না কোনো জবাব,
   পাথরটা রয় উঁচিয়ে মাথা, এমনি সে তার স্বভাব।
          হাতের কাছেই আছে সমুদ্রটা,
   অহংকারে তারই সঙ্গে লাগত যদি ওটা,
          এমনি চাপড় খেত, তাহার ফলে
   হুড়্‌মুড়িয়ে ভেঙেচুরে পড়ত অগাধ জলে।
ঢুঁ-মারা এই ভঙ্গীখানা কোটি বছর থেকে
     ব্যঙ্গ ক'রে কপালে তার কে দিল ঐ এঁকে।
পণ্ডিতেরা তার ইতিহাস বের করেছেন খুঁজি;
     শুনি তাহা, কতক বুঝি, নাইবা কতক বুঝি।
         অনেক যুগের আগে
একটা সে কোন্‌ পাগলা বাষ্প আগুন-ভরা রাগে
     মা ধরণীর বক্ষ হতে ছিনিয়ে বাঁধন-পাশ
         জ্যোতিষ্কদের ঊর্ধ্বপাড়ায় করতে গেল বাস।
     বিদ্রোহী সেই দুরাশা তার প্রবল শাসন-টানে
                 আছাড় খেয়ে পড়ল ধরার পানে।
            লাগল কাহার শাপ,
       হারালো তার ছুটোছুটি, হারালো তার তাপ।
              দিনে দিনে কঠিন হয়ে ক্রমে
            আড়ষ্ট এক পাথর হয়ে কখন গেল জমে।
  আজকে যে ওর অন্ধ নয়ন, কাতর হয়ে চায়
              সম্মুখে কোন্‌ নিঠুর শূন্যতায়।
  স্তম্ভিত চীৎকার সে যেন, যন্ত্রণা নির্বাক,
       যে যুগ গেছে তার উদ্দেশে কণ্ঠহারার ডাক।
     আগুন ছিল পাখায় যাহার আজ মাটি-পিঞ্জরে
       কান পেতে সে আছে ঢেউয়ের তরল কলস্বরে;
            শোনার লাগি ব্যগ্র তাহার ব্যর্থ বধিরতা
                 হেরে-যাওয়া সে-যৌবনের ভুলে-যাওয়া কথা।
আরো দেখুন
74
Verses
                বর্ষণশান্ত
         পাণ্ডুর মেঘ যবে ক্লান্ত
বন ছাড়ি মনে এল নীপরেণু গন্ধ,
        ভরি দিল কবিতার ছন্দ।
আরো দেখুন
The Parrot`s Training
Stories
ONCE UPON A time there was a bird. It was ignorant. It sang all right, but never recited scriptures. It hopped pretty frequently, but lacked manners.
Said the Raja to himself: ‘Ignorance is costly in the long run. For fools consume as much food as their betters, and yet give nothing in return.’
আরো দেখুন
শুকসারী
Verses
  শ্রীযুক্ত নন্দলাল বসুর পাহাড়-আঁকা চিত্রপত্রিকার উত্তরে
      শুক বলে, গিরিরাজের জগতে প্রাধান্য;
      সারী বলে, মেঘমালা, সেই বা কী সামান্য,--
             গিরির মাথায় থাকে।
      শুক বলে, গিরিরাজের দৃঢ় অচল শিলা;
      সারী বলে, মেঘমালার আদি-অন্তই লীলা,--
             বাঁধবে কে-বা তাকে।
      শুক বলে, নদীর জলে গিরি ঢালেন প্রাণ;
      সারী বলে, তার পিছনে মেঘমালার দান,--
             তাই তো নদী আছে।
      শুক বলে, গিরীশ থাকেন গিরিতে দিনরাত্র;
      সারী বলে, অন্নপূর্ণা ভরেন ভিক্ষাপাত্র ,--
             সে তো মেঘের কাছে।
      
      শুক বলে, হিমাদ্রি যে ভারত করে ধন্য;
      সারী বলে, মেঘমালা বিশ্বেরে দেয় স্তন্য ,--
             বাঁচে সকল জন।
      শুক বলে, সমাধিতে স্তব্ধ গিরির দৃষ্টি;
      সারী বলে, মেঘমালার নিত্যনূতন সৃষ্টি,--
             তাই সে চিরন্তন।
আরো দেখুন