গুণজ্ঞ
Verses
আমি প্রজাপতি ফিরি রঙিন পাখায়,
কবি তো আমার পানে তবু না তাকায়।
বুঝিতে না পারি আমি, বলো তো ভ্রমর,
কোন্‌ গুণে কাব্যে তুমি হয়েছ অমর।
অলি কহে, আপনি সুন্দর তুমি বটে,
সুন্দরের গুণ তব মুখে নাহি রটে।
আমি ভাই মধু খেয়ে গুণ গেয়ে ঘুরি,
কবি আর ফুলের হৃদয় করি চুরি।
আরো দেখুন
প্রতিবেশিনী
Stories
আমার প্রতিবেশিনী বালবিধবা। যেন শরতের শিশিরাশ্রুপ্লুত শেফালির মতো বৃন্তচ্যুত; কোনো বাসরগৃহের ফুলশয্যার জন্য সে নহে, সে কেবল দেবপূজার জন্যই উৎসর্গ-করা।
তাহাকে আমি মনে মনে পূজা করিতাম। তাহার প্রতি আমার মনের ভাবটা যে কী ছিল পূজা ছাড়া তাহা অন্য কোনো সহজ ভাষায় প্রকাশ করিতে ইচ্ছা করি না -- পরের কাছে তো নয়ই, নিজের কাছেও না।
আরো দেখুন
13
Verses
তুমি মোর জীবনের মাঝে
    মিশায়েছ মৃত্যুর মাধুরী।
চিরবিদায়ের আভা দিয়া
রাঙায়ে গিয়েছ মোর হিয়া,
এঁকে গেছে সব ভাবনায়
    সূর্যাস্তের বরনচাতুরী।
জীবনের দিক্‌চক্রসীমা
লভিয়াছে অপূর্ব মহিমা,
অশ্রুধৌত হৃদয়-আকাশে
    দেখা যায় দূর স্বর্গপুরী।
তুমি মোর জীবনের মাঝে
    মিশায়েছ মৃত্যুর মাধুরী।
তুমি, ওগো কল্যাণরূপিণী,
    মরণেরে করেছ মঙ্গল।
জীবনের পরপার হতে
প্রতি ক্ষণে মর্ত্যের আলোতে
পাঠাইছ তব চিত্তখানি
    মৌনপ্রেমে সজলকোমল।
মৃত্যুর নিভৃত স্নিগ্ধ ঘরে
বসে আছ বাতায়ন-'পরে--
জ্বালায়ে রেখেছ দীপখানি
    চিরন্তন আশায় উজ্জ্বল।
তুমি ওগো কল্যাণরূপিণী,
    মরণেরে করেছ মঙ্গল।
তুমি মোর জীবন মরণ
    বাঁধিয়াছ দুটি বাহু দিয়া।
প্রাণ তব করি অনাবৃত
মৃত্যু-মাঝে মিলালে অমৃত,
মরণেরে জীবনের প্রিয়
    নিজ হাতে করিয়াছ প্রিয়া।
খুলিয়া দিয়াছ দ্বারখানি,
যবনিকা লইয়াছ টানি,
জন্মমরণের মাঝখানে
    নিস্তব্ধ রয়েছ দাঁড়াইয়া।
তুমি মোর জীবন মরণ
    বাঁধিয়াছ দুটি বাহু দিয়া।
আরো দেখুন
188
Verses
DARKNESS TRAVELS towards light, but blindness towards death.
আরো দেখুন
বিদূষক
Stories
কাঞ্চীর রাজা কর্ণাট জয় করতে গেলেন। তিনি হলেন জয়ী। চন্দনে, হাতির দাঁতে, আর সোনামানিকে হাতি বোঝাই হল।
দেশে ফেরবার পথে বলেশ্বরীর মন্দির বলির রক্তে ভাসিয়ে দিয়ে রাজা পুজো দিলেন।
আরো দেখুন
সন্ধ্যা ও প্রভাত
Stories
এখানে নামল সন্ধ্যা। সূর্যদেব, কোন্‌ দেশে, কোন্‌ সমুদ্রপারে, তোমার প্রভাত হল।
অন্ধকারে এখানে কেঁপে উঠছে রজনীগন্ধা, বাসরঘরের দ্বারের কাছে অবগুণ্ঠিতা নববধূর মতো; কোন্‌খানে ফুটল ভোরবেলাকার কনকচাঁপা।
আরো দেখুন
কর্মফল
Stories
আজ সতীশের মাসি সুকুমারী এবং মেসোমশায় শশধরবাবু আসিয়াছেন-- সতীশের মা বিধুমুখী ব্যস্তসমস্তভাবে তাঁহাদের অভ্যর্থনায় নিযুক্ত। 'এসো দিদি, বোসো। আজ কোন্‌ পুণ্যে রায়মশায়ের দেখা পাওয়া গেল! দিদি না আসলে তোমার আর দেখা পাবার জো নেই।'
শশধর। এতেই বুঝবে তোমার দিদির শাসন কিরকম কড়া। দিনরাত্রি চোখে চোখে রাখেন।
আরো দেখুন
রাজপথের কথা
Stories
আমি রাজপথ। অহল্যা যেমন মুনির শাপে পাষাণ হইয়া পড়িয়া ছিল, আমিও যেন তেমনি কাহার শাপে চিরনিদ্রিত সুদীর্ঘ অজগর সর্পের ন্যায় অরণ্যপর্বতের মধ্য দিয়া, বৃক্ষশ্রেণীর ছায়া দিয়া, সুবিস্তীর্ণ প্রান্তরের বক্ষের উপর দিয়া দেশদেশান্তর বেষ্টন করিয়া বহুদিন ধরিয়া জড়শয়নে শয়ান রহিয়াছি। অসীম ধৈর্যের সহিত ধুলায় লুটাইয়া শাপান্তকালের জন্য প্রতীক্ষা করিয়া আছি। আমি চিরদিন স্থির অবিচল, চিরদিন একই ভাবে শুইয়া আছি, কিন্তু তবুও আমার এক মুহূর্তের জন্যও বিশ্রাম নাই। এতটুকু বিশ্রাম নাই যে, আমার এই কঠিন শুষ্ক শয্যার উপরে একটিমাত্র কচি স্নিগ্ধ শ্যামল ঘাস উঠাইতে পারি; এতটুকু সময় নাই যে, আমার শিয়রের কাছে অতি ক্ষুদ্র একটি নীলবর্ণের বনফুল ফুটাইতে পারি। কথা কহিতে পারি না, অথচ অন্ধভাবে সকলই অনুভব করিতেছি। রাত্রিদিন পদশব্দ; কেবলই পদশব্দ। আমার এই গভীর জড়-নিদ্রার মধ্যে লক্ষ লক্ষ চরণের শব্দ অহর্নিশ দুঃস্বপ্নের ন্যায় আবর্তিত হইতেছে। আমি চরণের স্পর্শে হৃদয় পাঠ করিতে পারি। আমি বুঝিতে পারি, কে গৃহে যাইতেছে, কে বিদেশে যাইতেছে, কে কাজে যাইতেছে, কে বিশ্রামে যাইতেছে, কে উৎসবে যাইতেছে, কে শ্মশানে যাইতেছে। যাহার সুখের সংসার আছে, স্নেহের ছায়া আছে, সে প্রতি পদক্ষেপে সুখের ছবি আঁকিয়া আঁকিয়া চলে; সে প্রতি পদক্ষেপে মাটিতে আশার বীজ রোপিয়া রোপিয়া যায়, মনে হয় যেখানে যেখানে তাহার পা পড়িয়াছে, সেখানে যেন মুহূর্তের মধ্যে এক-একটি করিয়া লতা অঙ্কুরিত পুষ্পিত হইয়া উঠিবে। যাহার গৃহ নাই আশ্রয় নাই, তাহার পদক্ষেপের মধ্যে আশা নাই অর্থ নাই, তাহার পদক্ষেপের দক্ষিণ নাই, বাম নাই, তাহার চরণ যেন বলিতে থাকে, আমি চলিই বা কেন থামিই বা কেন, তাহার পদক্ষেপে আমার শুষ্ক ধূলি যেন আরো শুকাইয়া যায়।
পৃথিবীর কোনো কাহিনী আমি সম্পূর্ণ শুনিতে পাই না। আজ শত শত বৎসর ধরিয়া আমি কত লক্ষ লোকের কত হাসি কত গান কত কথা শুনিয়া আসিতেছি; কিন্তু কেবল খানিকটা মাত্র শুনিতে পাই। বাকিটুকু শুনিবার জন্য যখন আমি কান পাতিয়া থাকি, তখন দেখি সে লোক আর নাই। এমন কত বৎসরের কত ভাঙা কথা ভাঙা গান আমার ধূলির সহিত ধূলি হইয়া গেছে, আমার ধূলির সহিত উড়িয়া বেড়ায়, তাহা কি কেহ জানিতে পায়। ঐ শুন, একজন গাহিল, 'তারে বলি বলি আর বলা হল না।' -- আহা, একটু দাঁড়াও, গানটা শেষ করিয়া যাও, সব কথাটা শুনি। কই আর দাঁড়াইল। গাহিতে গাহিতে কোথায় চলিয়া গেল, শেষটা শোনা গেল না। ঐ একটিমাত্র পদ অর্ধেক রাত্রি ধরিয়া আমার কানে ধ্বনিত হইতে থাকিবে। মনে মনে ভাবিব, ও কে গেল। কোথায় যাইতেছে না জানি। যে কথাটা বলা হইল না, তাহাই কি আবার বলিতে যাইতেছে। এবার যখন পথে আবার দেখা হইবে, সে যখন মুখ তুলিয়া ইহার মুখের দিকে চাহিবে, তখন বলি বলি করিয়া আবার যদি বলা না হয়। তখন নত শির করিয়া মুখ ফিরাইয়া অতি ধীরে ধীরে ফিরিয়া আসিবার সময় আবার যদি গায় 'তারে বলি বলি আর বলা হল না'।
আরো দেখুন
দেনাপাওনা
Stories
পাঁচ ছেলের পর যখন এক কন্যা জন্মিল তখন বাপমায়ে অনেক আদর করিয়া তাহার নাম রাখিল নিরুপমা। এ গোষ্ঠীতে এমন শৌখিন নাম ইতিপূর্বে কখনো শোনা যায় নাই। প্রায় ঠাকুরদেবতার নামই প্রচলিত ছিল-- গণেশ, কার্তিক, পার্বতী, তাহার উদাহরণ।
এখন নিরুপমার বিবাহের প্রস্তাব চলিতেছে। তাহার পিতা রামসুন্দর মিত্র অনেক খোঁজ করেন কিন্তু পাত্র কিছুতেই মনের মতন হয় না। অবশেষে মস্ত এক রায়বাহাদুরের ঘরের একমাত্র ছেলেকে সন্ধান করিয়া বাহির করিয়াছেন। উক্ত রায়বাহাদুরের পৈতৃক বিষয়-আশয় যদিও অনেক হ্রাস হইয়া আসিয়াছে কিন্তু বনেদি ঘর বটে।
আরো দেখুন
The Victory
Stories
SHE WAS THE Princess Ajita. And the court poet of King Narayan had never seen her. On the day he recited a new poem to the king he would raise his voice just to that pitch which could be heard by unseen hearers in the screened balcony high above the hall. He sent up his song towards the star-land out of his reach, where, circled with light, the planet who ruled his destiny shone unknown and out of ken.
He would espy some shadow moving behind the veil. A tinkling sound would come to his ear from afar, and would set him dreaming of the ankles whose tiny golden bells sang at each step. Ah, the rosy red tender feet that walked the dust of the earth like God's mercy on the fallen! The poet had placed them on the altar of his heart, where he wove his songs to the tune of those golden bells. Doubt never arose in his mind as to whose shadow it was that moved behind the screen, and whose anklets they were that sang to the time of his beating heart.
আরো দেখুন
ভীরুতা
Verses
গভীর সুরে গভীর কথা
     শুনিয়ে দিতে তোরে
            সাহস নাহি পাই।
মনে মনে হাসবি কিনা
     বুঝব কেমন করে?
            আপনি হেসে তাই
            শুনিয়ে দিয়ে যাই--
ঠাট্টা করে ওড়াই সখী,
            নিজের কথাটাই।
হাল্কা তুমি কর পাছে
            হাল্কা করি ভাই,
            আপন ব্যথাটাই।
সত্য কথা সরলভাবে
     শুনিয়ে দিতে তোরে
            সাহস নাহি পাই।
অবিশ্বাসে হাসবি কিনা
     বুঝব কেমন করে?
            মিথ্যা ছলে তাই
            শুনিয়ে দিয়ে যাই,
উল্টা করে বলি আমি
            সহজ কথাটাই।
ব্যর্থ তুমি কর পাছে
            ব্যর্থ করি ভাই,
            আপন ব্যথাটাই।
সোহাগ-ভরা প্রাণের কথা
     শুনিয়ে দিতে তোরে
            সাহস নাহি পাই।
সোহাগ ফিরে পাব কিনা
     বুঝব কেমন করে?
            কঠিন কথা তাই
            শুনিয়ে দিয়ে যাই,
গর্বছলে দীর্ঘ করি
            নিজের কথাটাই।
ব্যথা পাছে না পাও তুমি
            লুকিয়ে রাখি তাই
            নিজের ব্যথাটাই।
ইচ্ছা করে নীরব হয়ে
     রহিব তোর কাছে,
            সাহস নাহি পাই।
মুখের 'পরে বুকের কথা
     উথ্‌লে ওঠে পাছে
            অনেক কথা তাই
            শুনিয়ে দিয়ে যাই,
কথার আড়ে আড়াল থাকে
           মনের কথাটাই।
তোমায় ব্যথা লাগিয়ে শুধু
            জাগিয়ে তুলি ভাই
            আপন ব্যথাটাই।
ইচ্ছা করি সুদূরে যাই,
     না আসি তোর কাছে।
            সাহস নাহি পাই।
তোমার কাছে ভীরুতা মোর
     প্রকাশ হয় রে পাছে
            কেবল এসে তাই
            দেখা দিয়েই যাই,
স্পর্ধাতলে গোপন করি
            মনের কথাটাই।
নিত্য তব নেত্রপাতে
            জ্বালিয়ে রাখি ভাই,
            আপন ব্যথাটাই।
আরো দেখুন