বিকাশ
Verses
          আজ   বুকের বসন ছিঁড়ে ফেলে
                   দাঁড়িয়েছে এই প্রভাতখানি,
                আকাশেতে সোনার আলোয়
                   ছড়িয়ে গেল তাহার বাণী।
                কুঁড়ির মতো ফেটে গিয়ে
                   ফুলের মতো উঠল কেঁদে
                সুধাকোষের সুগন্ধ তার
                   পারলে না আর রাখতে বেঁধে।
                ওরে মন, খুলে দে মন,
                   যা আছে তোর খুলে দে--
                অন্তরে যা ডুবে আছে
                   আলোক-পানে তুলে দে।
                আনন্দে সব বাধা টুটে
                   সবার সাথে ওঠ্‌ রে ফুটে,
                চোখের 'পরে আলসভরে
                   রাখিস নে আর আঁচল টানি।
          আজ   বুকের বসন ছিঁড়ে ফেলে
                   দাঁড়িয়েছে এই প্রভাতখানি।
আরো দেখুন
দোলা
Verses
ঝিকিমিকি বেলা;
    গাছের ছায়া কাঁপে জলে,
    সোনার কিরণ করে খেলা।
    দুটিতে দোলার 'পরে দোলে রে,
দেখে      রবির আঁখি ভোলে রে।
গাছের ছায়া চারি দিকে আঁধার করে রেখেছে,
    লতাগুলি আঁচল দিয়ে ঢেকেছে।
ফুল       ধীরে ধীরে মাথায় পড়ে,
            পায়ে পড়ে, গায়ে পড়ে,
থেকে থেকে বাতাসেতে ঝুরু ঝুরু পাতা নড়ে।
         নিরালা সকল ঠাঁই,
         কোথাও সাড়া নাই,
শুধু    নদীটি বহে যায় বনের ছায়া দিয়ে,
       বাতাস ছুঁয়ে যায় লতারে শিহরিয়ে।
         দুটিতে বসে বসে দোলে,
বেলা      কোথায় গেল চলে।
            হেরো, সুধামুখী মেয়ে
           কী চাওয়া আছে চেয়ে
         মুখানি থুয়ে তার বুকে।
         কী মায়া মাখা চাঁদমুখে।হাতে তার কাঁকন দুগাছি,
       কানেতে দুলিছে তার দুল,
     হাসি-হাসি মুখখানি তার
       ফুটেছে সাঁঝের জুঁই ফুল।
       গলেতে বাহু বেঁধে
           দুজনে কাছাকাছি--
           দুলিছে এলো চুল,
           দুলিছে মালাগাছি।
       আঁধার ঘনাইল,
       পাখিরা ঘুমাইল,
সোনার রবি-আলো আকাশে মিলাইল।
       মেঘেরা কোথা গেল চলে,
       দুজনে বসে বসে দোলে।
          ঘেঁষে আসে বুকে বুকে,
          মিলায়ে মুখে মুখে
       বাহুতে বাঁধি বাহুপাশ,
       সুধীরে বহিতেছে শ্বাস।
          মাঝে মাঝে থেকে থেকে
          আকাশেতে চেয়ে দেখে,
       গাছের আড়ালে দুটি তারা।
          প্রাণ কোথা উড়ে যায়,
          সেই তারাপানে ধায়,
       আকাশের মাঝে হয় হারা।
          পৃথিবী ছাড়িয়া যেন তা'রা
          দুটিতে হয়েছে দুটি তারা।
আরো দেখুন
এ তো খেলা নয়, খেলা নয়
Songs
এ তো খেলা নয়, খেলা নয়।
এ যে হৃদয়-দহন-জ্বালা, সখী।
এ যে, প্রাণভরা ব্যাকুলতা,
গোপন মর্মের ব্যথা,
এ যে, কাহার চরণোদ্দেশে জীবন মরণ ঢালা।
কে যেন সতত মোরে
ডাকিয়ে আকুল করে,
যাই যাই করে প্রাণ, যেতে পারি নে।
যে কথা বলিতে চাহি,
তা বুঝি বলিতে নাহি,
কোথায় নামায়ে রাখি, সখী, এ প্রেমের ডালা।
যতনে গাঁথিয়ে শেষে, পরাতে পারি নে মালা।
আরো দেখুন
আপন হতে বাহির হয়ে
Verses
আপন হতে বাহির হয়ে
              বাইরে দাঁড়া,
বুকের মাঝে বিশ্বলোকের
             পাবি সাড়া।
এই-যে বিপুল ঢেউ লেগেছে
তোর মাঝেতে উঠুক নেচে,
             সকল পরান দিক-না নাড়া--
             বাইরে দাঁড়া, বাইরে দাঁড়া।
বোস্‌-না ভ্রমর এই নীলিমায়
             আসন লয়ে
অরুণ-আলোর স্বর্ণরেণু
              মাখা হয়ে।
যেখানেতে অগাধ ছুটি
মেল্‌ সেথা তোর ডানা দুটি,
              সবার মাঝে পাবি ছাড়া--
              বাইরে দাঁড়া, বাইরে দাঁড়া।
আরো দেখুন
স্ত্রীর পত্র
Stories
শ্রীচরণকমলেষু
আজ পনেরো বছর আমাদের বিবাহ হয়েছে,আজ পর্যন্ত তোমাকে চিঠি লিখি নি। চিরদিন কাছেই পড়ে আছি -- মুখের কথা অনেক শুনেছ, আমিও শুনেছি;চিঠি লেখবার মতো ফাঁকটুকু পাওয়া যায় নি।
আরো দেখুন
বোষ্টমী
Stories
আমি লিখিয়া থাকি অথচ লোকরঞ্জন আমার কলমের ধর্ম নয়, এইজন্য লোকেও আমাকে সদাসর্বদা যে রঙে রঞ্জিত করিয়া থাকে তাহাতে কালির ভাগই বেশি। আমার সম্বন্ধে অনেক কথাই শুনিতে হয়; কপালক্রমে সেগুলি হিতকথা নয়, মনোয়ারী তো নহেই।
শরীরে যেখানটায় ঘা পড়িতে থাকে সে জায়গাটা যত তুচ্ছই হোক সমস্ত দেহটাকে বেদনার জোরে সেই ছাড়াইয়া যায়। সে লোক গালি খাইয়া মানুষ হয়, সে আপনার স্বভাবকে যেন ঠেলিয়া একঝোঁকা হইয়া পড়ে। আপনার চারি দিককে ছাড়াইয়া আপনাকেই কেবল তাহার মনে পড়ে-- সেটা আরামও নয়, কল্যাণও নয়। আপনাকে ভোলাটাই তো স্বস্তি।
আরো দেখুন
মধ্যবর্তিনী
Stories
নিবারণের সংসার নিতান্তই সচরাচর রকমের, তাহাতে কাব্যরসের কোনো নামগন্ধ ছিল না। জীবনে উক্ত রসের যে কোনো আবশ্যক আছে, এমন কথা তাহার মনে কখনো উদয় হয় নাই। যেমন পরিচিত পুরাতন চটি-জোড়াটার মধ্যে পা দুটো দিব্য নিশ্চিন্তভাবে প্রবেশ করে, এই পুরাতন পৃথিবীটার মধ্যে নিবারণ সেইরূপ আপনার চিরাভ্যস্ত স্থানটি অধিকার করিয়া থাকে, সে সম্বন্ধে ভ্রমেও কোনোরূপ চিন্তা তর্ক বা তত্ত্বালোচনা করে না।
নিবারণ প্রাতঃকালে উঠিয়া গলির ধারে গৃহদ্বারে খোলাগায়ে বসিয়া অত্যন্ত নিরুদ্বিগ্নভাবে হুঁকাটি লইয়া তামাক খাইতে থাকে। পথ দিয়া লোকজন যাতায়াত করে, গাড়ি ঘোড়া চলে, বৈষ্ণব-ভিখারি গান গাহে, পুরাতন বোতল সংগ্রহকারী হাঁকিয়া চলিয়া যায়; এই সমস্ত চঞ্চল দৃশ্য মনকে লঘুভাবে ব্যাপৃত রাখে এবং যেদিন কাঁচা আম অথবা তপসি-মাছওয়ালা আসে, সেদিন অনেক দরদাম করিয়া কিঞ্চিৎ বিশেষরূপে রন্ধনের আয়োজন হয়। তাহার পর যথাসময়ে তেল মাখিয়া স্নান করিয়া আহারান্তে দড়িতে ঝুলানো চাপকানটি পরিয়া এক ছিলিম তামাক পানের সহিত নিঃশেষপূর্বক আর একটি পান মুখে পুরিয়া, আপিসে যাত্রা করে। আপিস হইতে ফিরিয়া আসিয়া সন্ধ্যেবেলাটা প্রতিবেশী রামলোচন ঘোষের বাড়িতে প্রশান্ত গম্ভীর ভাবে সন্ধ্যাযাপন করিয়া আহারান্তে রাত্রে শয়নগৃহে স্ত্রী হরসুন্দরীর সহিত সাক্ষাৎ হয়।
আরো দেখুন
সদর ও অন্দর
Stories
বিপিনকিশোর ধনীগৃহে জন্মিয়াছিলেন, সেইজন্যে ধন যে পরিমাণে ব্যয় করিতে জানিতেন তাহার অর্ধেক পরিমাণেও উপার্জন করিতে শেখেন নাই। সুতরাং যে গৃহে জন্ম সে গৃহে দীর্ঘকাল বাস করা ঘটিল না।
সুন্দর সুকুমারমূর্তি তরুণ যুবক, গানবাজনায় সিদ্ধহস্ত, কাজকর্মে নিরতিশয় অপটু; সংসারের পক্ষে সম্পূর্ণ অনাবশ্যক। জীবনযাত্রার পক্ষে জগন্নাথদেবের রথের মতো অচল; যেরূপ বিপুল আয়োজনে চলিতে পারেন সেরূপ আয়োজন সম্প্রতি বিপিনকিশোরের আয়ত্তাতীত।
আরো দেখুন
নিশীথে
Stories
'ডাক্তার! ডাক্তার!'
জ্বালাতন করিল! এই অর্ধেক রাত্রে--
আরো দেখুন
দর্পহরণ
Stories
কী করিয়া গল্প লিখিতে হয়, তাহা সম্প্রতি শিখিয়াছি। বঙ্কিমবাবু এবং সার্‌ ওয়াল্‌টার স্কট পড়িয়া আমার বিশেষ ফল হয় নাই। ফল কোথা হইতে কেমন করিয়া হইল, আমার এই প্রথম গল্পেই সেই কথাটা লিখিতে বসিলাম।
আমার পিতার মতামত অনেকরকম ছিল; কিন্তু বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কোনো মত তিনি কেতাব বা স্বাধীনবুদ্ধি হইতে গড়িয়া তোলেন নাই। আমার বিবাহ যখন হয় তখন সতেরো উত্তীর্ণ হইয়া আঠারোয় পা দিয়াছি; তখন আমি কলেজে থার্ডইয়ারে পড়ি-- এবং তখন আমার চিত্তক্ষেত্রে যৌবনের প্রথম দক্ষিণবাতাস বহিতে আরম্ভ করিয়া কত অলক্ষ্য দিক হইতে কত অনির্বচনীয় গীতে এবং গন্ধে, কম্পনে এবং মর্মরে আমার তরুণ জীবনকে উৎসুক করিয়া তুলিতেছিল, তাহা এখনো মনে হইলে বুকের ভিতরে দীর্ঘনিশ্বাস ভরিয়া উঠে।
আরো দেখুন