সওগাত
Stories
পুজোর পরব কাছে। ভাণ্ডার নানা সামগ্রীতে ভরা। কত বেনারসি কাপড়, কত সোনার অলংকার; আর ভাণ্ড ভ'রে ক্ষীর দই, পাত্র ভ'রে মিষ্টান্ন।
মা সওগাত পাঠাচ্ছেন।
আরো দেখুন
স্পাই
Verses
শক্ত হল রোগ,
হপ্তা-পাঁচেক ছিল আমার ভোগ।
      একটুকু যেই সুস্থ হলেম পরে
           লোক ধরে না ঘরে,
ব্যামোর চেয়ে অনেক বেশি ঘটাল দুর্যোগ।
      এল ভবেশ, এল পালিত, এল বন্ধু ঈশান,
           এল পোলিটিশান,
      এল গোকুল সংবাদপত্রের,
খবর রাখে সকল পাড়ার নাড়ীনক্ষত্রের।
      কেউ-বা বলে "বদল করো হাওয়া',
কেউ-বা বলে "ভালো ক'রে করবে খাওয়াদাওয়া'।
      কেউ-বা বলে "মহেন্দ্র ডাক্তার
এই ব্যামোতে তার মতো কেউ ওস্তাদ নেই আর'।
           দেয়াল ঘেঁষে ওই যে সবার পাছে
                 সতীশ বসে আছে।
           থাকে সে এই পাড়ায়,
      চুলগুলো তার ঊর্ধ্বে তোলা পাঁচ আঙুলের নাড়ায়।
           চোখে চশমা আঁটা,
      এক কোণে তার ফেটে গেছে বাঁয়ের পরকলাটা।
           গলার বোতাম খোলা
         প্রশান্ত তার চাউনি ভাবে-ভোলা।
      সর্বদা তার হাতে থাকে বাঁধানো এক খাতা,
                 হঠাৎ খুলে পাতা
      লুকিয়ে লুকিয়ে কী-যে লেখে, হয়তো বা সে কবি,
                 কিম্বা আঁকে ছবি।
      নবীন আমায় শোনায় কানে-কানে,
         ওই ছেলেটার গোপন খবর নিশ্চিত সেই জানে --
            যাকে বলে "স্পাই',
                 সন্দেহ তার নাই।
      আমি বলি, হবেও বা, ভক্তিসম নিরীহ ওই মুখে
               খাতার কোণে রিপোর্ট করার খোরাক নিচ্ছে টুকে।
            ও মানুষটা সত্যি যদি তেমনি হেয় হয়,
                 ঘৃণা করব, কেন করব ভয়।
এই বছরে বছরখানেক বেড়িয়ে নিলেম পাঞ্জাবে কাশ্মীরে।
           এলেম যখন ফিরে;
এল গণেশ পলটু এল, এল নবীন পাল,
                 এল মাখনলাল।
হাতে একটা মোড়ক নিয়ে প্রণাম করলে পাঁচু,
                 মুখটা কাঁচুমাচু।
      "মনিব কোথায়' শুধাই আমি তারে,
                 "সতীশ কোথায় হাঁ রে।'
      নবীন বললে, "খবর পান নি তবে
                 দিন-পনেরো হবে
      উপোস করে মারা গেল সোনার-টুকরো ছেলে
নন্‌-ভায়োলেন্‌স প্রচার করে গেল যখন আলিপুরের জেলে।'
   পাঁচু আমার হাতে দিল খাতা,
           খুলে দেখি পাতার পরে পাতা--
দেশের কথা কী বলেছি তাই লিখেছে গভীর অনুরাগে,
           পাঠিয়ে দিল জেলে যাবার আগে।
আজকে বসে বসে ভাবি, মুখের কথাগুলো
           ঝরা পাতার মতোই তারা ধুলোয় হত ধুলো।
           সেইগুলোকে সত্য করে বাঁচিয়ে রাখবে কি এ
                       মৃত্যুসুধার নিত্যপরশ দিয়ে।
আরো দেখুন
সন্ধ্যা ও প্রভাত
Stories
এখানে নামল সন্ধ্যা। সূর্যদেব, কোন্‌ দেশে, কোন্‌ সমুদ্রপারে, তোমার প্রভাত হল।
অন্ধকারে এখানে কেঁপে উঠছে রজনীগন্ধা, বাসরঘরের দ্বারের কাছে অবগুণ্ঠিতা নববধূর মতো; কোন্‌খানে ফুটল ভোরবেলাকার কনকচাঁপা।
আরো দেখুন
আজি সাঁঝের যমুনায়
Songs
              আজি        সাঁঝের যমুনায় গো
তরুণ চাঁদের কিরণতরী কোথায় ভেসে যায় গো ॥
     তারি সুদূর সারিগানে   বিদায়স্মৃতি জাগায় প্রাণে
          সেই-যে দুটি উতল আঁখি উছল করুণায় গো ॥
     আজ মনে মোর যে সুর বাজে কেউ তা শোনে না কি।
একলা প্রাণের কথা নিয়ে একলা এ দিন যায় কি।
     যায় যাবে, সে ফিরে ফিরে   লুকিয়ে তুলে নেয় নি কি রে
          আমার পরম বেদনখানি আপন বেদনায় গো ॥
আরো দেখুন
বঞ্চিত
Verses
ফুলিদের বাড়ি থেকে এসেই দেখি
      পোস্টকার্ডখানা আয়নার সামনেই,
            কখন এসেছে জানি নে তো।
মনে হল, সময় নেই একটুও;
            গাড়ি ধরতে পারব না বুঝি।
                 বাক্স থেকে টাকা বের করতে গিয়ে
                       ছড়িয়ে পড়ল সিকি দুয়ানি,
                    কিছু কুড়োলেম, কিছু রইল বা,
                          গ'নে ওঠা হল না।
                 কাপড় ছাড়ি কখন।
            নীল রঙের রেশমি রুমালখানা
      দিলেম মাথার উপর তুলে কাঁটায় বিঁধে।
    চুলটাকে জড়িয়ে নিলুম কোনোমতে
          টবের গাছ থেকে তুলে নিলুম
                চন্দ্রমল্লিকা বাসন্তীরঙের।
স্টেশনে এসে দেখি গাড়ি আসেই না,
      জানি নে কতক্ষণ গেল--
            পাঁচ মিনিট, হয়তো বা পঁচিশ মিনিট।
গাড়িতে উঠে দেখি চেলি-পরা বিয়ের কনে দলে-বলে;
         আমার চোখে কিছুই পড়ে না যেন,
     খানিকটা লাল রঙের কুয়াশা, একখানা ফিকে ছবি।
      গাড়ি চলেছে ঘটর ঘটর, বেজে উঠছে বাঁশি,
               উড়ে আসছে কয়লার গুঁড়ো,
                    কেবলই মুখ মুছছি রুমালে।
            কোন্‌-এক স্টেশনে
    বাঁকে করে ছানা এনেছে গয়লার দল।
         গাড়িটাকে দেরি করাচ্ছে মিছিমিছি।
             হুইস্‌ল্‌ দিলে শেষকালে;
         সাড়া পড়ল চাকাগুলোয়, চলল গাড়ি।
             গাছপালা, ঘরবাড়ি, পানাপুকুর
          ছুটেছে জানলার দু ধারে পিছনের দিকে --
      পৃথিবী যেন কোথায় কী ফেলে এসেছে ভুলে,
                 ফিরে আর পায় কি-না পায়।
              গাড়ি চলেছে ঘটর ঘটর।
      মাঝখানে অকারণে গাড়িটা থামল অনেক ক্ষণ,
      খেতে খেতে খাবার গলায় বেধে যাবার মতো।
                            আবার বাঁশি বাজল,
                    আবার চলল গাড়ি ঘটর ঘটর।
                          শেষে দেখা দিল হাবড়া স্টেশন।
     চাইলেম না জানালার বাইরে,
                   মনে স্থির করে আছি --
খুঁজতে খুঁজতে আমাকে আবিষ্কার করবে একজন এসে,
         তার পরে দুজনের হাসি।
বিয়ের কনে, টোপর-হাতে আত্মীয়স্বজন,
         সবাই গেল চলে।
      কুলি এসে চাইলে মুখের দিকে,
   দেখলে গাড়ির ভিতরটাতে মুখ বাড়িয়ে,
            কিছুই নেই।
যারা কনেকে নিতে এসেছিল গেল চলে।
         যে জনস্রোত এ মুখে আসছিল
                 ফিরল গেটের দিকে।
গট গট করে চলতে চলতে
গার্ড্‌ আমার জানালার দিকে একটু তাকালে,
ভাবলে মেয়েটা নামে না কেন।
     মেয়েটাকে নামতেই হল।
এই আগন্তুকের ভিড়ের মধ্যে
আমি একটিমাত্র খাপছাড়া।
      মনে হল প্লাটফর্‌ম্‌টার
এক প্রান্ত থেকে আর-এক প্রান্ত প্রশ্ন করছে আমাকে;
         জবাব দিচ্ছি নীরবে,
                 "না এলেই হত।"
         আর-একবার পড়লুম পোস্টকার্ড্‌খানা --
                       ভুল করি নি তো?
এখন ফিরতি গাড়ি নেই একটাও।
যদি বা থাকত, তবু কি ...
বুকের মধ্যে পাক খেয়ে বেড়াচ্ছে
            কত রকমের "হয়তো'--
                 সবগুলিই সাংঘাতিক।
      বেরিয়ে এসে তাকিয়ে রইলুম ব্রিজটার দিকে।
            রাস্তার লোক কী ভাবলে জানি নে।
                  সামনে ছিল বাস্‌, উঠে পড়লুম।
                       ফেলে দিলুম চন্দ্রমল্লিকাটা।
আরো দেখুন