যোগাযোগ
Novels
আজ ৭ই আষাঢ়। অবিনাশ ঘোষালের জন্মদিন। বয়স তার হল বত্রিশ। ভোর থেকে আসছে অভিনন্দনের টেলিগ্রাম, আর ফুলের তোড়া।
গল্পটার এইখানে আরম্ভ। কিন্তু আরম্ভের পূর্বেও আরম্ভ আছে। সন্ধ্যাবেলায় দীপ জ্বালার আগে সকালবেলায় সলতে পাকানো।
মিছে কর কেন নিন্দে,
ওগো বিন্দে শ্রীগোবিন্দে--"
"কার বাঁশি ওই বাজে বৃন্দাবনে।
সই লো সই,
ঘরে আমি রইব কেমনে!
"শ্যামের বাঁশি কাড়তে হবে,
নইলে আমায় এ বৃন্দাবন ছাড়তে হবে।"
আজু মোর ঘরে আইল পিয়রওলা
রোমে রোমে হরখীলা।
এক-যে ছিল কুকুর-চাটা শেয়ালকাঁটার বন,
কেটে করলে সিংহাসন।
দুঃখেষ্বনুদ্বিগ্নমনা সুখেষু বিগতস্পৃহঃ
বীতরাগভয়ক্রোধঃ--
গোরার রূপে লাগল রসের বান--
ভাসিয়ে নিয়ে যায় নদীয়ার পুরনারীর প্রাণ
জগতঃ পিতরৌ বন্দে পার্বতীপরমেশ্বরৌ
"বাপে ছাড়ে, মায়ে ছাড়ে, ছাড়ে সখা সহী,
মীরা প্রভু লগন লগী যো ন হোয়ে হোয়ী।'
গৃহিণী সচিবঃ সখী মিথঃ
প্রিয়শিষ্যা ললিতে কলাবিধৌ--
যৎ করোষি যদশ্নাসি যজ্জুহোষি দদাসি যৎ,
যৎ তপস্যসি, কৌন্তেয়, তৎ কুরুষ মদর্পণম্‌।
হমারে তুমারে সম্প্রীতি লগী হৈ
গুন মনমোহন প্যারে--
বাজে ঝননন মেরে পায়েরিয়া
কৈস করো যাউঁ ঘরোয়ারে।
তস্মাৎ প্রণম্য প্রণিধায় কায়ং
প্রসাদয়ে ত্বাম্‌ অহমীশমীড্যং
পিতেপ পুত্রস্য সখেব সখ্যুঃ
প্রিয়ঃ প্রিয়ায়ার্হসি দেব সোঢ়ুম্‌।
পিতেব পুত্রস্য সখেব সখ্যুঃ
প্রিয়ঃ প্রিয়ায়ার্হসি দেব সোঢ়ুম্‌।
পিয়া ঘর আয়ে, সোহী পীতম পিয় প্যার রে।
মীরাকে প্রভু গিরিধর নাগর,
চরণকমল বলিহার রে।
পথপর রয়নি অঁধেরী,
কুঞ্জপর দীপ উজিয়ারা।
আরো দেখুন
ঠাকুরদা
Stories
নয়নজোড়ের জমিদারেরা এককালে বাবু বলিয়া বিশেষ বিখ্যাত ছিলেন। তখনকার কালের বাবুয়ানার আদর্শ বড়ো সহজ ছিল না। এখন যেমন রাজা-রায়বাহাদুর খেতাব অর্জন করিতে অনেক খানা নাচ ঘোড়দৌড় এবং সেলাম-সুপারিশের শ্রাদ্ধ করিতে হয়, তখনো সাধারণের নিকট হইতে বাবু উপাধি লাভ করিতে বিস্তর দুঃসাধ্য তপশ্চরণ করিতে হইত।
আমাদের নয়নজোড়ের বাবুরা পাড় ছিঁড়িয়া ফেলিয়া ঢাকাই কাপড় পরিতেন, কারণ পাড়ের কর্কশতায় তাঁহাদের সুকোমল বাবুয়ানা ব্যথিত হইত। তাঁহারা লক্ষ টাকা দিয়া বিড়ালশাবকের বিবাহ দিতেন এবং কথিত আছে, একবার কোনো উৎসব উপলক্ষে রাত্রিকে দিন করিবার প্রতিজ্ঞা করিয়া অসংখ্য দীপ জ্বলাইয়া সূর্যকিরণের অনুকরণে তাঁহারা সাচ্চা রুপার জরি উপর হইতে বর্ষণ করিয়াছিলেন।
আরো দেখুন
ভুল স্বর্গ
Stories
লোকটি নেহাত বেকার ছিল।
তার কোনো কাজ ছিল না, কেবল শখ ছিল নানা রকমের।
আরো দেখুন
চিত্রকর
Stories
ময়মনসিংহ ইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে আমাদের গোবিন্দ এল কলকাতায়। বিধবা মায়ের অল্প কিছু সম্বল ছিল। কিন্তু, সব-চেয়ে তার বড়ো সম্বল ছিল নিজের অবিচলিত সংকল্পের মধ্যে। সে ঠিক করেছিল, 'পয়সা' করবই, সমস্ত জীবন উৎসর্গ করে দিয়ে।' সর্বদাই তার ভাষায় ধনকে সে উল্লেখ করত 'পয়সা' বলে। অর্থাৎ, তার মনে খুব একটা দর্শন স্পর্শন ঘ্রাণের যোগ্য প্রত্যক্ষ পদার্থ ছিল; তার মধ্যে বড়ো নামের মোহ ছিল না; অত্যন্ত সাধারণ পয়সা, হাটে হাটে হাতে হাতে ঘুরে ঘুরে ক্ষয়ে যাওয়া, মলিন হয়ে যাওয়া পয়সা, তাম্রগন্ধী পয়সা, কুবেরের আদিম স্বরূপ, যা রুপোয় সোনায় কাগজে দলিলে নানা মূর্তি পরিগ্রহ করে মানুষের মনকে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।
নানা বাঁকা পথের ভিতর দিয়ে নানা পঙ্কে আবিল হতে হতে আজ গোবিন্দ তার পয়সাপ্রবাহিণীর প্রশস্তধারার পাকা বাঁধানো ঘাটে এসে পৌঁচেছে। গানিব্যাগ্‌ওয়ালা বড়োসাহেব ম্যাক্‌ডুগালের বড়োবাবুর আসনে তার ধ্রুব প্রতিষ্ঠা। সবাই তাকে নাম দিয়েছিল ম্যাক্‌দুলাল।
আরো দেখুন
চোখের বালি
Novels
বিনোদিনীর মাতা হরিমতি মহেন্দ্রের মাতা রাজলক্ষ্মীর কাছে আসিয়া ধন্না দিয়া পড়িল। দুইজনেই এক গ্রামের মেয়ে, বাল্যকালে একত্রে খেলা করিয়াছেন।
রাজলক্ষ্মী মহেন্দ্রকে ধরিয়া পড়িলেন, "বাবা মহিন, গরিবের মেয়েটিকে উদ্ধার করিতে হইবে। শুনিয়াছি মেয়েটি বড়ো সুন্দরী, আবার মেমের কাছে পড়াশুনাও করিয়াছে-- তোদের আজকালকার পছন্দর সঙ্গে মিলিবে।"
"চরণতরণী দে মা, তারিণী তারা।'
আরো দেখুন
6
Verses
তুমি কি কেবল ছবি শুধু পটে লিখা।
     ওই যে সুদূর নীহারিকা
       যারা করে আছে ভিড়
          আকাশের নীড়;
     ওই যে যারা দিনরাত্রি
অলো-হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী
          গ্রহ তারা রবি
তুমি কি তাদেরি মতো সত্য নও।
     হায় ছবি, তুমি শুধু ছবি।
চিরচঞ্চলের মাঝে তুমি কেন শান্ত হয়ে রও।
          পথিকের সঙ্গ লও
     ওগো পথহীন।
          কেন রাত্রিদিন
সকলের মাঝে থেকে সবা হতে আছ এত দূরে
     স্থিরতার চির অন্তঃপুরে।
          এই ধূলি
     ধূসর অঞ্চল তুলি
         বায়ুভরে ধায় দিকে দিকে;
বৈশাখে সে বিধবার আভরণ খুলি
     তপস্বিনী ধরণীরে সাজায় গৈরিকে;
         অঙ্গে তার পত্রলিখা দেয় লিখে
          বসন্তের মিলন-উষায়,
         এই ধূলি এও সত্য হায়;
             এই তৃণ
         বিশ্বের চরণতলে লীন
এরা যে অস্থির, তাই এরা সত্য সবি--
          তুমি স্থির, তুমি ছবি,
              তুমি শুধু ছবি।
একদিন এই পথে চলেছিলে আমাদের পাশে।
     বক্ষ তব দুলিত নিশ্বাসে;
          অঙ্গে অঙ্গে প্রাণ তব
          কত গানে কত নাচে
             রচিয়াছে
          আপনার ছন্দ নব নব
       বিশ্বতালে রেখে তাল;
     সে যে আজ হল কত কাল।
          এ জীবনে
         আমার ভুবনে
          কত সত্য ছিলে।
         মোর চক্ষে এ নিখিলে
       দিকে দিকে তুমিই লিখিলে
     রূপের তুলিকা ধরি রসের মুরতি।
সে-প্রভাতে তুমিই তো ছিলে
     এ-বিশ্বের বাণী মূর্তিমতী।
একসাথে পথে যেতে যেতে
    রজনীর আড়ালেতে
     তুমি গেলে থামি।
    তার পরে আমি
     কত দুঃখে সুখে
    রাত্রিদিন চলেছি সম্মুখে।
চলেছে জোয়ার-ভাঁটা আলোকে আঁধারে
     আকাশ-পাথারে;
          পথের দুধারে
     চলেছে ফুলের দল নীরব চরণে
          বরনে বরনে;
সহস্রধারায় ছোটে দুরন্ত জীবন-নির্ঝরিণী
     মরণের বাজায়ে কিঙ্কিণী।
          অজানার সুরে
     চলিয়াছি দূর হতে দূরে--
          মেতেছি পথের প্রেমে।
          তুমি পথ হতে নেমে
              যেখানে দাঁড়ালে
                     সেখানেই আছ থেমে।
এই তৃণ, এই ধূলি-- ওই তারা, ওই শশী-রবি
                   সবার আড়ালে
          তুমি ছবি, তুমি শুধু ছবি।
          কী প্রলাপ কহে কবি।
              তুমি ছবি?
নহে নহে, নও শুধু ছবি।
     কে বলে রয়েছ স্থির রেখার বন্ধনে
          নিস্তব্ধ ক্রন্দনে।
     মরি মরি, সে আনন্দ থেমে যেত যদি
              এই নদী
          হারাত তরঙ্গবেগ,
              এই মেঘ
     মুছিয়া ফেলিত তার সোনার লিখন।
          তোমার চিকন
চিকুরের ছায়াখানি বিশ্ব হতে যদি মিলাইত
              তবে
            একদিন কবে
          চঞ্চল পবনে লীলায়িত
      মর্মর-মুখর ছায়া মাধবী-বনের
             হত স্বপনের।
     তোমায় কি গিয়েছিনু ভুলে।
তুমি যে নিয়েছ বাসা জীবনের মূলে
              তাই ভুল।
অন্যমনে চলি পথে, ভুলি নে কি ফুল।
          ভুলি নে কি তারা।
              তবুও তাহারা
          প্রাণের নিশ্বাসবায়ু করে সুমধুর,
     ভুলের শূন্যতা-মাঝে ভরি দেয় সুর।
          ভুলে থাকা নয় সে তো ভোলা;
বিস্মৃতির মর্মে বসি রক্তে মোর দিয়েছ যে দোলা।
          নয়নসম্মুখে তুমি নাই,
     নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই;
              আজি তাই
     শ্যামলে শ্যামল তুমি, নীলিমায় নীল।
              আমার নিখিল
     তোমাতে পেয়েছে তার অন্তরের মিল।
          নাহি জানি, কেহ নাহি জানে
          তব সুর বাজে মোর গানে;
              কবির অন্তরে তুমি কবি,
     নও ছবি, নও ছবি, নও শুধু ছবি।
     তোমারে পেয়েছি কোন্‌ প্রাতে,
          তার পরে হারায়েছি রাতে।
   তার পরে অন্ধকারে অগোচরে তোমারেই লভি।
          নও ছবি, নও তুমি ছবি।
আরো দেখুন
কর্তার ভূত
Stories
বুড়ো কর্তার মরণকালে দেশসুদ্ধ সবাই বলে উঠল, 'তুমি গেলে আমাদের কী দশা হবে।'
শুনে তারও মনে দুঃখ হল। ভাবলে, 'আমি গেলে এদের ঠাণ্ডা রাখবে কে।'
আরো দেখুন