সতেরো বছর
Stories
আমি তার সতেরো বছরের জানা।
কত আসাযাওয়া, কত দেখাদেখি, কত বলাবলি; তারই আশেপাশে কত স্বপ্ন, কত অনুমান, কত ইশারা; তারই সঙ্গে সঙ্গে কখনো বা ভোরের ভাঙা ঘুমে শুকতারার আলো, কখনো বা আষাঢ়ের ভরসন্ধ্যায় চামেলিফুলের গন্ধ, কখনো বা বসন্তের শেষ প্রহরে ক্লান্ত নহবতের পিলুবারোয়াঁ; সতেরো বছর ধরে এই-সব গাঁথা পড়েছিল তার মনে।
আরো দেখুন
সমাপ্তি
Stories
অপূর্বকৃষ্ণ বি. এ. পাস করিয়া কলিকাতা হইতে দেশে ফিরিয়া আসিতেছেন।
নদীটি ক্ষুদ্র। বর্ষা অন্তে প্রায় শুকাইয়া যায়। এখন শ্রাবণের শেষে জলে ভরিয়া উঠিয়া একেবারে গ্রামের বেড়া ও বাঁশঝাড়ের তলদেশ চুম্বন করিয়া চলিয়াছে।
আরো দেখুন
অন্তর্হিতা
Verses
প্রদীপ যখন নিবেছিল,
       আঁধার যখন রাতি,
দুয়ার যখন বন্ধ ছিল,
       ছিল না কেউ সাথি--
    মনে হল অন্ধকারে
    কে এসেছে বাহির-দ্বারে,
মনে হল শুনি যেন
       পায়ের ধ্বনি কার,
রাতের হাওয়ায় বাজল বুঝি
       কঙ্কণঝংকার।
বারেক শুধু মনে হল
       খুলি, দুয়ার খুলি।
ক্ষণেক পরে ঘুমের ঘোরে
       কখন গেনু ভুলি।
    "কোন্‌ অতিথি দ্বারের কাছে
    একলা রাতে বসে আছে?'
ক্ষণে ক্ষণে তন্দ্রা ভেঙে
       মন শুধাল যবে
বলেছিলেম, "আর কিছু নয়,
       স্বপ্ন আমার হবে।'
মাঝ-গগনে সপ্ত-ঋষি
       স্তব্ধ গভীর রাতে
জানলা হতে আমায় যেন
       ডাকল ইশারাতে।
    মনে হল "শয়ন ফেলে,
    দিই-না কেন আলো জ্বেলে'--
আলসভরে রইনু শুয়ে
       হল না দীপ জ্বালা।
প্রহর পরে কাটল প্রহর,
       বন্ধ রইল তালা।
জাগল কখন দখিন-হাওয়া
       কাঁপল বনের হিয়া,
স্বপ্নে কথা-কওয়ার মতো
       উঠল মর্মরিয়া।
    যুথীর গন্ধ ক্ষণে ক্ষণে
    মূর্ছিল মোর বাতায়নে,
শিহর দিয়ে গেল আমার
       সকল অঙ্গ চুমে।
জেগে উঠে আবার কখন
       ভরল নয়ন ঘুমে।
ভোরের তারা পুব-গগনে
       যখন হল গত
বিদায়রাতির একটি ফোঁটা
       চোখের জলের মতো,
    হঠাৎ মনে হল তবে--
    যেন কাহার করুণ রবে
শিরীষ ফুলের গন্ধে আকুল
       বনের বীথি ব্যেপে
শিশির-ভেজা তৃণগুলি
       উঠল কেঁপে কেঁপে।
শয়ন ছেড়ে উঠে তখন
       খুলে দিলেম দ্বার--
হায় রে, ধুলায় বিছিয়ে গেছে
        যূথীর মালা কার।
    ওই যে দূরে, নয়ন নত,
    বনের ছায়ায় ছায়ার মতো
মায়ার মতো মিলিয়ে গেল
       অরুণ-আলোয় মিশে,
ওই বুঝি মোর বাহির-দ্বারের
       রাতের অতিথি সে।
আজ হতে মোর ঘরের দুয়ার
       রাখব খুলে রাতে।
প্রদীপখানি রইবে জ্বালা
       বাহির-জানালাতে।
    আজ হতে কার পরশ লাগি
    পথ তাকিয়ে রইব জাগি--
আর কোনোদিন আসবে না কি
       আমার পরান ছেয়ে
যূথীর মালার গন্ধখানি
       রাতের বাতাস বেয়ে।
আরো দেখুন
আগমনী
Stories
আয়োজন চলেইছে। তার মাঝে একটুও ফাঁক পাওয়া যায় না যে ভেবে দেখি, কিসের আয়োজন।
তবুও কাজের ভিড়ের মধ্যে মনকে এক-একবার ঠেলা দিয়ে জিজ্ঞাসা করি, 'কেউ আসবে বুঝি?'
আরো দেখুন
চিত্রকর
Stories
ময়মনসিংহ ইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে আমাদের গোবিন্দ এল কলকাতায়। বিধবা মায়ের অল্প কিছু সম্বল ছিল। কিন্তু, সব-চেয়ে তার বড়ো সম্বল ছিল নিজের অবিচলিত সংকল্পের মধ্যে। সে ঠিক করেছিল, 'পয়সা' করবই, সমস্ত জীবন উৎসর্গ করে দিয়ে।' সর্বদাই তার ভাষায় ধনকে সে উল্লেখ করত 'পয়সা' বলে। অর্থাৎ, তার মনে খুব একটা দর্শন স্পর্শন ঘ্রাণের যোগ্য প্রত্যক্ষ পদার্থ ছিল; তার মধ্যে বড়ো নামের মোহ ছিল না; অত্যন্ত সাধারণ পয়সা, হাটে হাটে হাতে হাতে ঘুরে ঘুরে ক্ষয়ে যাওয়া, মলিন হয়ে যাওয়া পয়সা, তাম্রগন্ধী পয়সা, কুবেরের আদিম স্বরূপ, যা রুপোয় সোনায় কাগজে দলিলে নানা মূর্তি পরিগ্রহ করে মানুষের মনকে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।
নানা বাঁকা পথের ভিতর দিয়ে নানা পঙ্কে আবিল হতে হতে আজ গোবিন্দ তার পয়সাপ্রবাহিণীর প্রশস্তধারার পাকা বাঁধানো ঘাটে এসে পৌঁচেছে। গানিব্যাগ্‌ওয়ালা বড়োসাহেব ম্যাক্‌ডুগালের বড়োবাবুর আসনে তার ধ্রুব প্রতিষ্ঠা। সবাই তাকে নাম দিয়েছিল ম্যাক্‌দুলাল।
আরো দেখুন
মণিহারা
Stories
সেই জীর্ণপ্রায় বাঁধাঘাটের ধারে আমার বোট লাগানো ছিল। তখন সূর্য অস্ত গিয়াছে।
বোটের ছাদের উপরে মাঝি নমাজ পড়িতেছে। পশ্চিমের জ্বলন্ত আকাশপটে তাহার নীরব উপাসনা ক্ষণে ক্ষণে ছবির মতো আঁকা পড়িতেছিল। স্থির রেখাহীন নদীর জলের উপর ভাষাতীত অসংখ্য বর্ণচ্ছটা দেখিতে দেখিতে ফিকা হইতে গাঢ় লেখায়, সোনার রঙ হইতে ইস্পাতের রঙে, এক আভা হইতে আর-এক আভায় মিলাইয়া আসিতেছিল।
আরো দেখুন
অমল কমল সহজে
Songs
অমল কমল সহজে জলের কোলে আনন্দে রহে ফুটিয়া,
ফিরে না সে কভু "আলয় কোথায়' ব'লে ধুলায় ধুলায় লুটিয়া ॥
          তেমনি সহজে আনন্দে হরষিত
          তোমার মাঝারে রব নিমগ্নচিত,
পূজাশতদল আপনি সে বিকশিত সব সংশয় টুটিয়া ॥
কোথা আছ তুমি পথ না খুঁজিব কভু,   শুধাব না কোনো পথিকে--
তোমারি মাঝারে ভ্রমিব ফিরিব প্রভু,   যখন ফিরিব যে দিকে।
          চলিব যখন তোমার আকাশগেহে
          তোমার অমৃতপ্রবাহ লাগিবে দেহে,
তোমার পবন সখার মতন স্নেহে   বক্ষে আসিবে ছুটিয়া ॥
আরো দেখুন