অধ্যাপক
Stories
কলেজে আমার সহপাঠীসম্প্রদায়ের মধ্যে আমার একটু বিশেষ প্রতিপত্তি ছিল। সকলেই আমাকে সকল বিষয়েই সমজদার বলিয়া মনে করিত।
ইহার প্রধান কারণ, ভুল হউক আর ঠিক হউক, সকল বিষয়েই আমার একটা মতামত ছিল। অধিকাংশ লোকেই হাঁ এবং না জোর করিয়া বলিতে পারে না, আমি সেটা খুব বলিতাম।
আরো দেখুন
ভবিষ্যতের রঙ্গভূমি
Verses
                   সম্মুখে রয়েছে পড়ি যুগ-যুগান্তর।
          অসীম নীলিমে লুটে               ধরণী ধাইবে ছুটে,
                   প্রতিদিন আসিবে, যাইবে রবিকর।
                   প্রতিদিন প্রভাতে জাগিবে নরনারী,
প্রতিসন্ধ্যা শ্রান্তদেহে               ফিরিয়া আসিবে গেহে,
          প্রতিরাত্রে তারকা ফুটিবে সারি সারি।
          কত আনন্দের ছবি, কত সুখ আশা
আসিবে যাইবে হায়,              সুখ-স্বপ্নের প্রায়
          কত প্রাণে জাগিবে, মিলাবে ভালোবাসা।
          তখনো ফুটিবে হেসে কুসুম-কানন,
তখনো রে কত লোকে            কত স্নিগ্ধ চন্দ্রালোকে
          আঁকিবে আকাশ-পটে সুখের স্বপন।
          নিবিলে দিনের আলো, সন্ধ্যা হলে, নিতি
বিরহী নদীর ধারে                 না জানি ভাবিবে কারে,
          না-জানি সে কী কাহিনী, কী সুখ, কী স্মৃতি।
          দূর হতে আসিতেছে, শুন কান পেতে--
          কত গান, সেই মহা-রঙ্গভূমি হতে।
কত যৌবনের হাসি,              কত উৎসবের বাঁশি,
          তরঙ্গের কলধ্বনি প্রমোদের স্রোতে।
          কত মিলনের গীত, বিরহের শ্বাস,
          তুলেছে মর্মর তান বসন্ত-বাতাস,
সংসারের কোলাহল               ভেদ করি অবিরল
          লক্ষ নব কবি ঢালে প্রাণের উচ্ছ্বাস।
          ওই দূর খেলাঘরে খেলাইছ কারা!
          উঠেছে মাথার 'পরে আমাদেরি তারা
আমাদেরি ফুলগুলি                সেথাও নাচিছে দুলি,
          আমাদেরি পাখিগুলি গেয়ে হল সারা।
          ওই দূর খেলাঘরে করে আনাগোনা
হাসে কাঁদে কত কে যে নাহি যায় গণা।
আমাদের পানে হায়              ভুলেও তো নাহি চায়,
          মোদের ওরা তো কেউ ভাই বলিবে না।
          ওই সব মধুমুখ অমৃত-সদন,
          না জানি রে আর কারা করিবে চুম্বন।
শরমময়ীর পাশে                   বিজড়িত আধ-ভাষে
          আমরা তো শুনাব না প্রাণের বেদন।
          আমাদের খেলাঘরে কারা খেলাইছ!
সাঙ্গ না হইতে খেলা              চলে এনু সন্ধেবেলা,
          ধূলির সে ঘর ভেঙে কোথা ফেলাইছ।
          হোথা, যেথা বসিতাম মোরা দুই জন,
          হাসিয়া কাঁদিয়া হত মধুর মিলন,
মাটিতে কাটিয়া রেখা             কত লিখিতাম লেখা,
          কে তোরা মুছিলি সেই সাধের লিখন।
          সুধাময়ী মেয়েটি সে হোথায় লুটিত,
          চুমো খেলে হাসিটুকু ফুটিয়া উঠিত।
তাই রে মাধবীলতা                মাথা তুলেছিল হোথা,
          ভেবেছিনু চিরদিন রবে মুকুলিত।
          কোথায় রে, কে তাহারে করিলি দলিত।
          ওই যে শুকানো ফুল ছুঁড়ে ফেলে দিলে,
          উহার মরম-কথা বুঝিতে নারিলে।
ও যেদিন ফুটেছিল,               নব রবি উঠেছিল,
          কানন মাতিয়াছিল বসন্ত-অনিলে।
          ওই যে শুকায় চাঁপা পড়ে একাকিনী,
          তোমরা তো জানিবে না উহার কাহিনী।
কবে কোন্‌ সন্ধেবেলা   ওরে তুলেছিল বালা,
          ওরি মাঝে বাজে কোন্‌ পূরবীরাগিণী।
          যারে দিয়েছিল ওই ফুল উপহার,
          কোথায় সে গেছে চলে, সে তো নেই আর।
একটু কুসুমকণা                   তাও নিতে পারিল না,
          ফেলে রেখে যেতে হল মরণের পার;
কত সুখ, কত ব্যথা,              সুখের দুখের কথা
          মিশিছে ধূলির সাথে ফুলের মাঝার।
          মিছে শোক, মিছে এই বিলাপ কাতর,
          সম্মুখে রয়েছে পড়ে যুগ-যুগান্তর।
আরো দেখুন
34
Verses
কারে দূর নাহি কর। যত করি দান
তোমারে হৃদয় মন, তত হয় স্থান
সবারে লইতে প্রাণে। বিদ্বেষ যেখানে
দ্বার হতে কারেও তাড়ায় অপমানে
তুমি সেই সাথে যাও; যেথা অহংকার
ঘৃণাভরে ক্ষুদ্রজনে রুদ্ধ করে দ্বার
সেথা হতে ফির তুমি; ঈর্ষা চিত্তকোণে
বসি বসি ছিদ্র করে তোমারি আসনে
তপ্ত শূলে। তুমি থাক,যেথায় সবাই
সহজে খুঁজিয়া পায় নিজ নিজ ঠাঁই।
ক্ষুদ্র রাজা আসে যবে, ভৃত্য উচ্চরবে
হাঁকি কহে, "সরে যাও, দূরে যাও সবে।'
মহারাজ তুমি যবে এস, সেই সাথে
নিখিল জগৎ আসে তোমারি পশ্চাতে।
আরো দেখুন
দুর্বুদ্ধি
Stories
ভিটা ছাড়িতে হইল। কেমন করিয়া, তাহা খোলসা করিয়া বলিব না, আভাস দিব মাত্র।
আমি পাড়াগেঁয়ে নেটিভ ডাক্তার, পুলিসের থানার সম্মুখে আমার বাড়ি। যমরাজের সহিত আমার যে পরিমাণ আনুগত্য ছিল দারোগাবাবুদের সহিত অপেক্ষা কম ছিল না, সুতরাং নর ও নারায়ণের দ্বারা মানুষের যত বিবিধ রকমের পীড়া ঘটিতে পারে তাহা আমার সুগোচর ছিল। যেমন মণির দ্বারা বলয়ের এবং বলয়ের দ্বারা মণির শোভা বৃদ্ধি হয় তেমনি আমার মধ্যস্থতায় দারোগার এবং দারোগার মধ্যস্থতায় আমার উত্তরোত্তর আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটিতেছিল।
আরো দেখুন
215
Verses
MISTAKES LIVE in the neighbourhood of truth
and therefore delude us.
আরো দেখুন
ফেল
Stories
ল্যাজা এবং মুড়া, রাহু এবং কেতু, পরস্পরের সঙ্গে আড়াআড়ি করিলে যেমন দেখিতে হইত এও ঠিক সেইরকম। প্রাচীন হালদার বংশ দুই খণ্ডে পৃথক হইয়া প্রকাণ্ড বসত-বাড়ির মাঝখানে এক ভিত্তি তুলিয়া পরস্পর পিঠাপিঠি করিয়া বসিয়া আছে; কেহ কাহারো মুখদর্শন করে না।
নবগোপালের ছেলে নলিন এবং ননীগোপালের ছেলে নন্দ একবংশজাত, একবয়সি, এক ইস্কুলে যায় এবং পারিবারিক বিদ্বেষ ও রেষারেষিতেও উভয়ের মধ্যে সম্পূর্ণ ঐক্য।
আরো দেখুন
খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন
Stories
রাইচরণ যখন বাবুদের বাড়ি প্রথম চাকরি করিতে আসে তখন তাহার বয়স বারো। যশোহর জিলায় বাড়ি, লম্বা চুল, বড়ো বড়ো চোখ, শ্যামচিক্কণ ছিপ্‌ছিপে বালক। জাতিতে কায়স্থ। তাহার প্রভুরাও কায়স্থ। বাবুদের এক-বৎসর-বয়স্ক একটি শিশুর রক্ষণ ও পালন-কার্যে সহায়তা করা তাহার প্রধান কর্তব্য ছিল।
সেই শিশুটি কালক্রমে রাইচরণের কক্ষ ছাড়িয়া স্কুলে, স্কুল ছাড়িয়া কলেজে, অবশেষে কলেজ ছাড়িয়া মুন্‌সেফিতে প্রবেশ করিয়াছে। রাইচরণ এখনো তাঁহার ভৃত্য।
আরো দেখুন
বিদায়সম্বল
Verses
যাবার দিকের পথিকের 'পরে
          ক্ষণিকার স্নেহখানি
শেষ উপহার করুণ অধরে
          দিল কানে কানে আনি।
"ভুলিব না কভু, রবে মনে মনে'
এই মিছে আশা দেয় খনে খনে,
ছলছল ছায়া নবীন নয়নে
          বাধোবাধো মৃদু বাণী।
যাবার দিকের পথিক সে কথা
          ভরি লয় তার প্রাণে।
পিছনের এই শেষ আকুলতা
          পাথেয় বলি সে জানে।
যখন আঁধারে ভরিবে সরণী,
ভুলে-ভরা ঘুমে নীরব ধরণী,
"ভুলিব না কভু,' এই ক্ষীণধ্বনি
          তখনো বাজিবে কানে।
যাবার দিকের পথিক সে বোঝে--
          যে যায় সে যায় চ'লে,
যারা থাকে তারা এ উহারে খোঁজে,
          যে যায় তাহারে ভোলে।
তবুও নিজেরে ছলিতে ছলিতে
বাঁশি বাজে মনে চলিতে চলিতে
"ভুলিব না কভু' বিভাসে ললিতে
          এই কথা বুকে দোলে।
আরো দেখুন
দানপ্রতিদান
Stories
বড়োগিন্নি যে কথাগুলা বলিয়া গেলেন, তাহার ধার যেমন তাহার বিষও তেমনি। যে-হতভাগিনীর উপর প্রয়োগ করিয়া গেলেন, তাহার চিত্তপুত্তলি একেবারে জ্বলিয়া জ্বলিয়া লুটিতে লাগিল।
বিশেষত, কথাগুলা তাহার স্বামীর উপর লক্ষ্য করিয়া বলা-- এবং স্বামী রাধামুকুন্দ তখন রাত্রের আহার সমাপন করিয়া অনতিদূরে বসিয়া তাম্বুলের সহিত তাম্রকূটধূম সংযোগ করিয়া খাদ্যপরিপাকে প্রবৃত্ত ছিলেন। কথাগুলো শ্রুতিপথে প্রবেশ করিয়া তাঁহার পরিপাকের যে বিশেষ ব্যাঘাত করিল, এমন বোধ হইল না। অবিচলিত গাম্ভীর্যের সহিত তাম্রকূট নিঃশেষ করিয়া অভ্যাসমত যথাকালে শয়ন করিতে গেলেন।
আরো দেখুন
সতেরো বছর
Stories
আমি তার সতেরো বছরের জানা।
কত আসাযাওয়া, কত দেখাদেখি, কত বলাবলি; তারই আশেপাশে কত স্বপ্ন, কত অনুমান, কত ইশারা; তারই সঙ্গে সঙ্গে কখনো বা ভোরের ভাঙা ঘুমে শুকতারার আলো, কখনো বা আষাঢ়ের ভরসন্ধ্যায় চামেলিফুলের গন্ধ, কখনো বা বসন্তের শেষ প্রহরে ক্লান্ত নহবতের পিলুবারোয়াঁ; সতেরো বছর ধরে এই-সব গাঁথা পড়েছিল তার মনে।
আরো দেখুন
নামঞ্জুর গল্প
Stories
আমাদের আসর জমেছিল পোলিটিক্যাল লঙ্কাকাণ্ডের পালায়। হাল আমলের উত্তরকাণ্ডে আমরা সম্পূর্ণ ছুটি পাই নি বটে, কিন্তু গলা ভেঙেছে; তা ছাড়া সেই অগ্নিদাহের খেলা বন্ধ।
বঙ্গভঙ্গের রঙ্গভূমিতে বিদ্রোহীর অভিনয় শুরু হল। সবাই জানেন, এই নাট্যের পঞ্চম অঙ্কের দৃশ্য আলিপুর পেরিয়ে পৌঁছল আণ্ডামানের সমুদ্রকূলে। পারানির পাথেয় আমার যথেষ্ট ছিল, তবু গ্রহের গুণে এপারের হাজতেই আমার ভোগসমাপ্তি। সহযোগীদের মধ্যে ফাঁসিকাঠ পর্যন্ত যাদের সর্বোচ্চ প্রোমোশন হয়েছিল, তাদের প্রণাম করে আমি পশ্চিমের এক শহরের কোণে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় পসার জমিয়ে তুললেম।
আরো দেখুন