মণিহারা
Stories
সেই জীর্ণপ্রায় বাঁধাঘাটের ধারে আমার বোট লাগানো ছিল। তখন সূর্য অস্ত গিয়াছে।
বোটের ছাদের উপরে মাঝি নমাজ পড়িতেছে। পশ্চিমের জ্বলন্ত আকাশপটে তাহার নীরব উপাসনা ক্ষণে ক্ষণে ছবির মতো আঁকা পড়িতেছিল। স্থির রেখাহীন নদীর জলের উপর ভাষাতীত অসংখ্য বর্ণচ্ছটা দেখিতে দেখিতে ফিকা হইতে গাঢ় লেখায়, সোনার রঙ হইতে ইস্পাতের রঙে, এক আভা হইতে আর-এক আভায় মিলাইয়া আসিতেছিল।
আরো দেখুন
রাজটিকা
Stories
নবেন্দুশেখরের সহিত অরুণলেখার যখন বিবাহ হইল, তখন হোমধূমের অন্তরাল হইতে ভগবান প্রজাপতি ঈষৎ একটু হাস্য করিলেন। হায়, প্রজাপতির পক্ষে যাহা খেলা আমাদের পক্ষে তাহা সকল সময়ে কৌতুকের নহে।
নবেন্দুশেখরের পিতা পূর্ণেন্দুশেখর ইংরাজরাজ-সরকারে বিখ্যাত। তিনি এই ভবসমুদ্রে কেবলমাত্র দ্রুতবেগে সেলাম-চালনা দ্বারা রায়বাহাদুর পদবীর উৎতুঙ্গ মরুকূলে উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন; আরো দুর্গমতর সম্মানপথের পাথেয় তাঁহার ছিল, কিন্তু পঞ্চান্ন বৎসর বয়ঃক্রমকালে অনতিদূরবর্তী রাজখেতাবের কুহেলিকাচ্ছন্ন গিরিচূড়ার প্রতি করুণ লোলুপ দৃষ্টি স্থিরনিবদ্ধ করিয়া এই রাজানুগৃহীত ব্যাক্তি অকস্মাৎ খেতাববর্জিত লোকে গমন করিলেন এবং তাঁহার বহু-সেলাম-শিথিল গ্রীবাগ্রন্থি শ্মশানশয্যায় বিশ্রাম লাভ করিল।
আরো দেখুন
দান
Verses
             হে উষা তরুণী,
নিশীথের সিন্ধুতীরে নিঃশব্দের মন্ত্রস্বর শুনি
যেমনি উঠিলে জেগে, দেখিলে তোমার শয্যাশেষে
             তোমারি উদ্দেশে
        রেখেছে ফুলের ডালি
                   শিশিরে প্রক্ষালি
কোন্‌ মহা-অন্ধকারে কে প্রেমিক প্রচ্ছন্ন সুন্দর।
             তোমারে দিয়েছে বর
তোমার অজ্ঞাতে
                   সুপ্তিঢাকা রাতে,
        তব শুভ্র আলোকেরে করিয়া স্মরণ
                   আগে হতে করেছে বরণ।
        নিজেরে আড়াল করি
             বর্ণে গন্ধে ভরি
                       প্রেমের দিয়েছে পরিচয়
                            ফুলেরে করিয়া বাণীময়।
মৌনী তুমি, মুগ্ধ তুমি, স্তব্ধ তুমি, চক্ষু ছলোছলো--
             কথা কও, বলো কিছু বলো,
       তোমার পাখির গানে
             পাঠাও সে-অলক্ষ্যের পানে
                   প্রতিভাষণের বাণী,
   বলো তারে-- হে অজানা, জানি আমি জানি,
             তুমি ধন্য, তুমি প্রিয়তম,
                        নিমেষে নিমেষে তুমি চিরন্তন মম।
আরো দেখুন
হালদারগোষ্ঠী
Stories
এই পরিবারটির মধ্যে কোনোরকমের গোল বাধিবার কোনো সংগত কারণ ছিল না। অবস্থাও সচ্ছল, মানুষগুলিও কেহই মন্দ নহে, কিন্তু তবুও গোল বাধিল।
কেননা, সংগত কারণেই যদি মানুষের সব-কিছু ঘটিত তবে তো লোকালয়টা একটা অঙ্কের খাতার মতো হইত, একটু সাবধানে চলিলেই হিসাবে কোথাও কোনো ভুল ঘটিত না; যদি বা ঘটিত সেটাকে রবার দিয়া মুছিয়া সংশোধন করিলেই চলিয়া যাইত।
আরো দেখুন
বিদূষক
Stories
কাঞ্চীর রাজা কর্ণাট জয় করতে গেলেন। তিনি হলেন জয়ী। চন্দনে, হাতির দাঁতে, আর সোনামানিকে হাতি বোঝাই হল।
দেশে ফেরবার পথে বলেশ্বরীর মন্দির বলির রক্তে ভাসিয়ে দিয়ে রাজা পুজো দিলেন।
আরো দেখুন
ছায়াছবি
Verses
একটি দিন পড়িছে মনে মোর।
          উষার নিল মুকুট কাড়ি
                   শ্রাবণ ঘনঘোর;
বাদলবেলা বাজায়ে দিল তূরী,
          প্রহরগুলি ঢাকিয়া মুখ
                   করিল আলো চুরি।
সকাল হতে অবিশ্রামে
ধারাপতনশব্দ নামে,
                   পরদা দিল টানি,
সংসারের নানা ধ্বনিরে
                   করিল একখানি।
     প্রবল বরিষনে
পাংশু হল দিকের মুখ,
আকাশ যেন নিরুৎসুক,
নদীপারের নীলিমা ছায়
          পাণ্ডু আবরণে।
কর্মদিন হারালো সীমা,
          হারালো পরিমাণ,
বিনা কারণে ব্যথিত হিয়া
উঠিল গাহি গুঞ্জরিয়া
                   বিদ্যাপতি-রচিত সেই
                  ভরা-বাদর গান।
ছিলাম এই কুলায়ে বসি
          আপন মন-গড়া,
হঠাৎ মনে পড়িল তবে
এখনি বুঝি সময় হবে,
ছাত্রীটিরে দিতে হবে যে পড়া।
     থামায়ে গান চাহিনু পশ্চাতে;
          ভীরু সে মেয়ে কখন এসে
               নীরব পায়ে দুয়ার ঘেঁষে
দাঁড়ায়ে আছে খাতা ও বহি হাতে।
      করিনু পাঠ শুরু।
কপোল তার ঈষৎ রাঙা,
গলাটি আজ কেমন ভাঙা,
বক্ষ বুঝি করিছে দুরু দুরু।
     কেবলি যায় ভুলে,
অন্যমনে রয়েছে যেন
     বইয়ের পাতা খুলে।
কহিনু তারে, আজকে পড়া থাক।
     সে শুধু মুখে তুলিয়া আঁখি
          চাহিল নির্বাক।
তুচ্ছ এই ঘটনাটুকু,
          ভাবি নি ফিরে তারে।
গিয়েছে তার ছায়ামূরতি
          কালের খেয়াপারে।
স্তব্ধ আজি বাদলবেলা,
          নদীতে নাহি ঢেউ,
                   অলসমনে বসিয়া আছি
                 ঘরেতে নেই কেউ।
       হঠাৎ দেখি চিত্রপটে চেয়ে,
                 সেই-যে ভীরু মেয়ে
মনের কোণে কখন গেছে আঁকি
          অবর্ষিত অশ্রুভরা
ডাগর দুটি আঁখি।
আরো দেখুন
একরাত্রি
Stories
সুরবালার সঙ্গে একত্রে পাঠশালায় গিয়াছি, বউ-বউ খেলিয়াছি। তাহাদের বাড়িতে গেলে সুরবালার মা আমাকে বড় যত্ন করিতেন এবং আমাদের দুইজনকে একত্র করিয়া  আপনা-আপনি বলাবলি করিতেন,'আহা দুটিতে বেশ মানায়।'
ছোট ছিলাম কিন্তু কথাটার অর্থ একরকম বুঝতে পারিতাম। সুরবালার প্রতি যে সর্বসাধারণের অপেক্ষা আমার কিছু বিশেষ দাবি ছিল, সে ধারণা আমার মনে বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছিল। সেই অধিকারমদে মত্ত হইয়া তাহার প্রতি যে আমি শাসন এবং উপদ্রব না করিতাম তাহা নহে। সেও সহিষ্ণুভাবে আমার সকলরকম  ফরমাশ খাটিত এবং শাস্তি বহন করিত। পাড়ায় তাহার রূপের প্রশংসা ছিল, কিন্তু বর্বর বালকের চক্ষে সে সৌন্দর্যের কোনো গৌরব ছিল না-- আমি কেবল জানিতাম, সুরবালা আমারই প্রভুত্ব স্বীকার করিবার জন্য পিতৃগৃহে জন্মগ্রহণ করিয়াছিল, এইজন্য সে আমার বিশেষরূপ অবহেলার পাত্র।
আরো দেখুন
চার অধ্যায়
Novels
এলার মনে পড়ে তার জীবনের প্রথম সূচনা বিদ্রোহের মধ্যে। তার মা মায়াময়ীর ছিল বাতিকের ধাত, তাঁর ব্যবহারটা বিচার-বিবেচনার প্রশস্ত পথ ধরে চলতে পারত না। বেহিসাবি মেজাজের অসংযত ঝাপটায় সংসারকে তিনি যখন-তখন ক্ষুব্ধ করে তুলতেন, শাসন করতেন অন্যায় করে, সন্দেহ করতেন অকারণে। মেয়ে যখন অপরাধ অস্বীকার করত, ফস করে বলতেন, মিথ্যে কথা বলছিস। অথচ অবিমিশ্র সত্যকথা বলা মেয়ের একটা ব্যসন বললেই হয়। এজন্যেই সে শাস্তি পেয়েছে সব-চেয়ে বেশি। সকল রকম অবিচারের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতা তার স্বভাবে প্রবল হয়ে উঠেছে। তার মার কাছে মনে হয়েছে, এইটেই স্ত্রীধর্মনীতির বিরুদ্ধ।
একটা কথা সে বাল্যকাল থেকে বুঝেছে যে, দুর্বলতা অত্যাচারের প্রধান বাহন। ওদের পরিবারে যে-সকল আশ্রিত অন্নজীবী ছিল, যারা পরের অনুগ্রহ-নিগ্রহের সংকীর্ণ বেড়া-দেওয়া ক্ষেত্রের মধ্যে নিঃসহায়ভাবে আবদ্ধ তারাই কলুষিত করেছে ওদের পরিবারের আবহাওয়াকে, তারাই ওর মায়ের অন্ধ প্রভুত্বচর্চাকে বাধাবিহীন করে তুলেছে। এই অস্বাস্থ্যকর অবস্থার প্রতিক্রিয়ারূপেই ওর মনে অল্পবয়স থেকেই স্বাধীনতার আকাঙক্ষা এত দুর্দাম হয়ে উঠেছিল।
প্রহরশেষের আলোয় রাঙা
সেদিন চৈত্রমাস,
তোমার চোখে দেখেছিলাম
আমার সর্বনাশ।"
Upwards
Towards the peaks,
Towards the stars,
Towards the vast silence."
আরো দেখুন