চণ্ডী
Stories
দিদি, তুমি বোধ হয় ও পাড়ার চণ্ডীবাবুকে জান?
জানি নে! তিনি যে ডাকসাইটে নিন্দুক।
আরো দেখুন
উদ্ধার
Stories
গৌরী প্রাচীন ধনীবংশের পরমাদরে পালিতা সুন্দরী কন্যা। স্বামী পরেশ হীনাবস্থা হইতে সম্প্রতি নিজের উপার্জনে কিঞ্চিৎ অবস্থার উন্নতি করিয়াছে; যতদিন তাঁহার দৈন্য ছিল ততদিন কন্যার কষ্ট হইবে ভয়ে শ্বশুর শাশুড়ি স্ত্রীকে তাঁহার বাড়িতে পাঠান নাই। গৌরী বেশ-একটু বয়স্থা হইয়াই পতিগৃহে আসিয়াছিল।
বোধ করি এই-সকল কারণেই পরেশ সুন্দরী যুবতী স্ত্রীকে সম্পূর্ণ নিজের আয়ত্তগম্য বলিয়া বোধ করিতেন না এবং বোধ করি সন্দিগ্ধ স্বভাব তাঁহার একটা ব্যাধির মধ্যে।
আরো দেখুন
তোতাকাহিনী
Stories
এক-যে ছিল পাখি। সে ছিল মূর্খ। সে গান গাহিত, শাস্ত্র পড়িত না। লাফাইত, উড়িত, জানিত না কায়দাকানুন কাকে বলে।
রাজা বলিলেন, 'এমন পাখি তো কাজে লাগে না, অথচ বনের ফল খাইয়া রাজহাটে ফলের বাজারে লোকসান ঘটায়।'
আরো দেখুন
ললাটের লিখন
Stories
ছেলেবেলায় পৃথ্বীশের ডান দিকের কপালে চোট লেগেছিল ভুরুর মাঝখান থেকে উপর পর্যন্ত। সেই আঘাতে ডান চোখটাও সংকুচিত। পৃথ্বীশকে ভালো দেখতে কি না সেই প্রশ্নের উত্তরটা কাটা দাগের অবিচারে সম্পূর্ণ হতে পারল না। অদৃষ্টের এই লাঞ্ছনাকে এত দিন থেকে প্রকাশ্যে পৃথ্বীশ বহন করে আসছে তবুও দাগও যেমন মেলায় নি তেমনি ঘোচে নি তার সংকোচ। নতুন কারো সঙ্গে পরিচয় হবার উপলক্ষে প্রত্যেকবার ধিক্‌কারটা জেগে ওঠে মনে। কিন্তু বিধাতাকে গাল দেবার অধিকার তার নেই। তার রচনার ঐশ্বর্যকে বন্ধুরা স্বীকার করছে প্রচুর প্রশংসায়, শত্রুরা নিন্দাবাক্যের নিরন্তর কটুক্তিতে। লেখার চারি দিকে ভিড় জমছে। দু টাকা আড়াই টাকা দামের বইগুলো ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে ঘরে। সম্পাদকরা তার কলমের প্রসাদ ছুটোছাঁটা যা-ই পায় কিছুই ছাড়ে না। পাঠিকারা বলে, পৃথ্বীশবাবু মেয়েদের মন ও চরিত্র যেমন আশ্চর্য বোঝেন ও বর্ণনা করেন এমন সাধ্য নেই আর কোনো লেখকের। পুরুষ-বন্ধুরা বলে, ওর লেখায় মেয়েদের এত-যে স্তুতিবাদ সে কেবল হতভাগার ভাঙা কপালের দোষে। মুখশ্রী যদি অক্ষুণ্ন হত তা হলে মেয়েদের সম্বন্ধে সত্য কথা বাধত না মুখে। মুখের চেহারা বিপক্ষতা করায় মুখের অত্যুক্তিকে সহায় করেছে মনোহরণের অধ্যবসায়।
শ্রীমতী বাঁশরি সরকার ব্যারিস্টারি চক্রের মেয়ে-- বাপ ব্যারিস্টার, ভাইরা ব্যারিস্টার। দু বার গেছে য়ুরোপে ছুটি উপলক্ষে। সাজে সজ্জায় ভাষায় ভঙ্গিতে আছে আধুনিক যুগের সুনিপুণ উদ্দামতা। রূপসী বলতে যা বোঝায় তা নয়, কিন্তু আকৃতিটা যেন ফ্রেঞ্চ পালিশ দিয়ে ঝকঝকে করা।
আরো দেখুন
মণিহারা
Stories
সেই জীর্ণপ্রায় বাঁধাঘাটের ধারে আমার বোট লাগানো ছিল। তখন সূর্য অস্ত গিয়াছে।
বোটের ছাদের উপরে মাঝি নমাজ পড়িতেছে। পশ্চিমের জ্বলন্ত আকাশপটে তাহার নীরব উপাসনা ক্ষণে ক্ষণে ছবির মতো আঁকা পড়িতেছিল। স্থির রেখাহীন নদীর জলের উপর ভাষাতীত অসংখ্য বর্ণচ্ছটা দেখিতে দেখিতে ফিকা হইতে গাঢ় লেখায়, সোনার রঙ হইতে ইস্পাতের রঙে, এক আভা হইতে আর-এক আভায় মিলাইয়া আসিতেছিল।
আরো দেখুন
সিদ্ধি
Stories
স্বর্গের অধিকারে মানুষ বাধা পাবে না, এই তার পণ। তাই, কঠিন সন্ধানে অমর হবার মন্ত্র সে শিখে নিয়েছে। এখন একলা বনের মধ্যে সেই মন্ত্র সে সাধনা করে।
বনের ধারে ছিল এক কাঠকুড়নি মেয়ে। সে মাঝে মাঝে আঁচলে ক'রে তার জন্যে ফল নিয়ে আসে, আর পাতার পাত্রে আনে ঝরনার জল।
আরো দেখুন
ছন্দোমাধুরী
Verses
পাষাণে-বাঁধা কঠোর পথ
চলেছে তাহে কালের রথ,
          ঘুরিছে তার মমতাহীন চাকা।
বিরোধ উঠে ঘর্ঘরিয়া,
বাতাস উঠে জর্জরিয়া
          তৃষ্ণাভরা তপ্তবালু-ঢাকা।
নিঠুর লোভ জগৎ ব্যেপে
দুর্বলেরে মারিছে চেপে,
          মথিয়া তুলে হিংসাহলাহল।
অর্থহীন কিসের তরে
এ কাড়াকাড়ি ধুলার 'পরে
          লজ্জাহীন বেসুর কোলাহল!
                   হতাশ হয়ে যেদিকে চাহি
       কোথাও কোনো উপায় নাহি,
                 মানুষরূপে দাঁড়ায় বিভীষিকা।
করুণাহীন দারুণ ঝড়ে
দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে
          অন্যায়ের প্রলয়ানলশিখা।
সহসা দেখি, সুন্দর হে,
কে দূতী তব বারতা বহে
          ব্যাঘাত-মাঝে অকালে অস্থানে।
ছুটিয়া আসে গহন হতে
আত্মহারা উছল স্রোতে
          রসের ধারা মরুভূমির পানে।
ছন্দোভাঙা হাটের মাঝে
তরল তালে নূপুর বাজে,
          বাতাসে যেন আকাশবাণী ফুটে।
কর্কশেরে নৃত্য হানি
ছন্দোময়ী মূর্তিখানি
          ঘূর্ণিবেগে আবর্তিয়া উঠে।
ভরিয়া ঘট অমৃত আনে,
সে কথা সে কি আপনি জানে--
          এনেছে বহি সীমাহীনের ভাষা।
প্রবল এই মিথ্যারাশি,
তারেও ঠেলি উঠেছে হাসি
          অবলারূপে চিরকালের আশা।
আরো দেখুন
বিচ্ছেদ
Verses
      ব্যাকুল নয়ন মোর, অস্তমান রবি,
      সায়াহ্নে মেঘাবনত পশ্চিম গগনে,
      সকলে দেখিতেছিল সেই মুখচ্ছবি--
      একা সে চলিতেছিল আপনার মনে।
      ধরণী ধরিতেছিল কোমল চরণ,
      বাতাস লভিতেছিল বিমল নিশ্বাস,
      সন্ধ্যার আলোক-আঁকা দুখানি নয়ন
      ভুলায়ে লইতেছিল পশ্চিম আকাশ।
      রবি তারে দিতেছিল আপন কিরণ,
      মেঘ তারে দিতেছিল স্বর্ণময় ছায়া,
      মুগ্ধহিয়া পথিকের উৎসুক নয়ন
      মুখে তার দিতেছিল প্রেমপূর্ণ মায়া।
      চারি দিকে শস্যরাশি চিত্রসম স্থির,
      প্রান্তে নীল নদীরেখা, দূর পরপারে
      শুভ্র চর, আরো দূরে বনের তিমির
      দহিতেছে অগ্নিদীপ্তি দিগন্ত-মাঝারে।
      দিবসের শেষ দৃষ্টি-- অন্তিম মহিমা--
      সহসা ঘেরিল তারে কনক-আলোকে,
      বিষণ্ণ কিরণপটে মোহিনী প্রতিমা
      উঠিল প্রদীপ্ত হয়ে অনিমেষ চোখে।
      নিমেষে ঘুরিল ধরা, ডুবিল তপন,
      সহসা সম্মুখে এল ঘোর অন্তরাল--
      নয়নের দৃষ্টি গেল, রহিল স্বপন,
      অনন্ত আকাশ, আর ধরণী বিশাল।
আরো দেখুন
ধ্বংস
Stories
দিদি, তোমাকে একটা হালের খবর বলি।--
প্যারিস শহরের অল্প একটু দূরে ছিল তাঁর ছোটো বাসাটি। বাড়ির কর্তার নাম পিয়ের শোপ্যাঁ। তাঁর সারা জীবনের শখ ছিল গাছপালার জোড় মিলিয়ে, রেণু মিলিয়ে, তাদের চেহারা, তাদের রঙ, তাদের স্বাদ বদল ক'রে নতুন রকমের সৃষ্টি তৈরি করতে। তাতে কম সময় লাগত না। এক-একটি ফুলের ফলের স্বভাব বদলাতে বছরের পর বছর কেটে যেত। এ কাজে যেমন ছিল তাঁর আনন্দ তেমনি ছিল তাঁর ধৈর্য। বাগান নিয়ে তিনি যেন জাদু করতেন। লাল হত নীল, সাদা হত আলতার রঙ, আঁটি যেত উড়ে, খোসা যেত খ'সে। যেটা ফলতে লাগে ছ মাস তার মেয়াদ কমে হত দু মাস। ছিলেন গরিব, ব্যবসাতে সুবিধা করতে পারতেন না। যে করত তাঁর হাতের কাজের তারিফ তাকে দামি মাল অমনি দিতেন বিলিয়ে। যার মতলব ছিল দাম ফাঁকি দিতে সে এসে বলত, কী ফুল ফুটেছে আপনার সেই গাছটাতে, চার দিক থেকে লোক আসছে দেখতে, একেবারে তাক লেগে যাচ্ছে।
আরো দেখুন
হাসিরাশি
Verses
নাম রেখেছি বাবলারানী,
            একরত্তি মেয়ে।
হাসিখুশি চাঁদের আলো
            মুখটি আছে ছেয়ে।
ফুট্‌ফুটে তার দাঁত কখানি,
            পুট্‌পুটে তার ঠোঁট।
মুখের মধ্যে কথাগুলি সব
            উলোটপালোট।
কচি কচি হাত দুখানি,
            কচি কচি মুঠি,
মুখ নেড়ে কেউ কথা ক'লে
            হেসেই কুটি-কুটি।
তাই তাই তাই তালি দিয়ে
            দুলে দুলে নড়ে,
চুলগুলি সব কালো কালো
            মুখে এসে পড়ে।
"চলি চলি পা পা'
            টলি টলি যায়,
গরবিনী হেসে হেসে
            আড়ে আড়ে চায়।
হাতটি তুলে চুড়ি দুগাছি
            দেখায় যাকে তাকে,
হাসির সঙ্গে নেচে নেচে
           নোলক দোলে নাকে।
রাঙা দুটি ঠোঁটের কাছে
           মুক্তো আছে ফ'লে,
মায়ের চুমোখানি-যেন
           মুক্তো হয়ে দোলে।
আকাশেতে চাঁদ দেখেছে,
           দু হাত তুলে চায়,
মায়ের কোলে দুলে দুলে
           ডাকে "আয় আয়'।
চাঁদের আঁখি জুড়িয়ে গেল
           তার মুখেতে চেয়ে,
চাঁদ ভাবে কোত্থেকে এল
           চাঁদের মতো মেয়ে।
কচি প্রাণের হাসিখানি
           চাঁদের পানে ছোটে,
চাঁদের মুখের হাসি আরো
           বেশি ফুঠে ওঠে।
এমন সাধের ডাক শুনে চাঁদ
           কেমন করে আছে --
তারাগুলি ফেলে বুঝি
           নেমে আসবে কাছে!
সুধামুখের হাসিখানি
           চুরি ক'রে নিয়ে
রাতারাতি পালিয়ে যাবে
           মেঘের আড়াল দিয়ে।
আমরা তারে রাখব ধরে
           রানীর পাশেতে।
হাসিরাশি বাঁধা রবে
           হাসিরাশিতে।
আরো দেখুন
চতুরঙ্গ
Novels
আমি পাড়াগাঁ হইতে কলিকাতায় আসিয়া কালেজে প্রবেশ করিলাম। শচীশ তখন বি. এ. ক্লাসে পড়িতেছে। আমাদের বয়স প্রায় সমান হইবে।
শচীশকে দেখিলে মনে হয় যেন একটা জ্যোতিষ্ক-- তার চোখ জ্বলিতেছে; তার লম্বা সরু আঙুলগুলি যেন আগুনের শিখা; তার গায়ের রঙ যেন রঙ নহে, তাহা আভা। শচীশকে যখন দেখিলাম অমনি যেন তার অন্তরাত্মাকে দেখিতে পাইলাম; তাই একমুহূর্তে তাহাকে ভালোবাসিলাম।
আরো দেখুন