অধ্যাপক
Stories
কলেজে আমার সহপাঠীসম্প্রদায়ের মধ্যে আমার একটু বিশেষ প্রতিপত্তি ছিল। সকলেই আমাকে সকল বিষয়েই সমজদার বলিয়া মনে করিত।
ইহার প্রধান কারণ, ভুল হউক আর ঠিক হউক, সকল বিষয়েই আমার একটা মতামত ছিল। অধিকাংশ লোকেই হাঁ এবং না জোর করিয়া বলিতে পারে না, আমি সেটা খুব বলিতাম।
আরো দেখুন
পুত্রযজ্ঞ
Stories
বৈদ্যনাথ গ্রামের মধ্যে বিজ্ঞ ছিলেন সেইজন্য তিনি ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি রাখিয়া বর্তমানের সমস্ত কাজ করিতেন। যখন বিবাহ করিলেন তখন তিনি বর্তমান নববধূর অপেক্ষা ভাবী নবকুমারের মুখ স্পষ্টতররূপে দেখিতে পাইয়াছিলেন। শুভদৃষ্টির সময় এতটা দূরদৃষ্টি প্রায় দেখা যায় না। তিনি পাকা লোক ছিলেন সেইজন্য প্রেমের চেয়ে পিণ্ডটাকেই অধিক বুঝিতেন এবং পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা এই মর্মেই তিনি বিনোদিনীকে বিবাহ করিয়াছিলেন।
কিন্তু এ সংসারে বিজ্ঞ লোকও ঠকে। যৌবনপ্রাপ্ত হইয়াও যখন বিনোদিনী তাহার সর্বপ্রধান কর্তব্যটি পালন করিল না তখন পুন্নাম নরকের দ্বারা খোলা দেখিয়া বৈদ্যনাথ বড়ো চিন্তিত হইলেন। মৃত্যুর পরে তাঁহার বিপুল ঐশ্বর্যই বা কে ভোগ করিবে এই ভাবনায় মৃত্যুর পূর্বে তিনি সেই ঐশ্বর্য ভোগ করিতে বিমুখ হইলেন। পূর্বেই বলিয়াছি, বর্তমানের অপেক্ষা ভবিষ্যৎটাকেই তিনি সত্য বলিয়া জানিতেন।
আরো দেখুন
অপরিহরণীয়
Verses
মৃত্যু কহে, পুত্র নিব; চোর কহে ধন।
ভাগ্য কহে, সব নিব যা তোর আপন।
নিন্দুক কহিল, লব তব যশোভার।
কবি কহে, কে লইবে আনন্দ আমার?
আরো দেখুন
চার অধ্যায়
Novels
এলার মনে পড়ে তার জীবনের প্রথম সূচনা বিদ্রোহের মধ্যে। তার মা মায়াময়ীর ছিল বাতিকের ধাত, তাঁর ব্যবহারটা বিচার-বিবেচনার প্রশস্ত পথ ধরে চলতে পারত না। বেহিসাবি মেজাজের অসংযত ঝাপটায় সংসারকে তিনি যখন-তখন ক্ষুব্ধ করে তুলতেন, শাসন করতেন অন্যায় করে, সন্দেহ করতেন অকারণে। মেয়ে যখন অপরাধ অস্বীকার করত, ফস করে বলতেন, মিথ্যে কথা বলছিস। অথচ অবিমিশ্র সত্যকথা বলা মেয়ের একটা ব্যসন বললেই হয়। এজন্যেই সে শাস্তি পেয়েছে সব-চেয়ে বেশি। সকল রকম অবিচারের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতা তার স্বভাবে প্রবল হয়ে উঠেছে। তার মার কাছে মনে হয়েছে, এইটেই স্ত্রীধর্মনীতির বিরুদ্ধ।
একটা কথা সে বাল্যকাল থেকে বুঝেছে যে, দুর্বলতা অত্যাচারের প্রধান বাহন। ওদের পরিবারে যে-সকল আশ্রিত অন্নজীবী ছিল, যারা পরের অনুগ্রহ-নিগ্রহের সংকীর্ণ বেড়া-দেওয়া ক্ষেত্রের মধ্যে নিঃসহায়ভাবে আবদ্ধ তারাই কলুষিত করেছে ওদের পরিবারের আবহাওয়াকে, তারাই ওর মায়ের অন্ধ প্রভুত্বচর্চাকে বাধাবিহীন করে তুলেছে। এই অস্বাস্থ্যকর অবস্থার প্রতিক্রিয়ারূপেই ওর মনে অল্পবয়স থেকেই স্বাধীনতার আকাঙক্ষা এত দুর্দাম হয়ে উঠেছিল।
প্রহরশেষের আলোয় রাঙা
সেদিন চৈত্রমাস,
তোমার চোখে দেখেছিলাম
আমার সর্বনাশ।"
Upwards
Towards the peaks,
Towards the stars,
Towards the vast silence."
আরো দেখুন
এই যে হেরি গো দেবী আমারি
Songs
            এই যে হেরি গো দেবী আমারি!
                 সব কবিতাময় জগত-চরাচর,
                 সব শোভাময় নেহারি।
                 ছন্দে উঠিছে চন্দ্রমা, ছন্দে কনক-রবি উদিছে,
                 ছন্দে জগ-মণ্ডল চলিছে,
                 জ্বলন্ত কবিতা তারকা সবে;
                 এ কবিতার মাঝারে তুমি কে গো দেবী,
                           আলোকে আলো আঁধারি।
             আজি মলয় আকুল,বনে বনে এ কী গীত গাহিছে,
                          ফুল কহিছে প্রাণের কাহিনী,
                           নব রাগ-রাগিণী উছাসিছে,
              এ আনন্দে আজ গীত গাহে মোর হৃদয় সব অবারি।
              তুমিই কি দেবী ভারতী,কৃপাগুণে অন্ধ আঁখি ফুটালে,
                          উষা আনিলে প্রাণের আঁধারে,
                          প্রকৃতির রাগিণী শিখাইলে!
                               তুমি ধন্য গো,
                        রব চিরকাল চরণ ধরি তোমারি।
আরো দেখুন
মেঘ বলেছে ‘যাব যাব’
Verses
মেঘ বলেছে "যাব যাব',
           রাত বলেছে "যাই'।
সাগর বলে,"কূল মিলেছে,
           আমি তো আর নাই।'
        দুঃখ বলে, "রইনু চুপে
        তাঁহার পায়ের চিহ্নরূপে।'
        আমি বলে, "মিলাই আমি,
                আর কিছু না চাই।'
ভুবন বলে, "তোমার তরে
            আছে বরণমালা।'
গগন বলে, "তোমার তরে
            লক্ষ প্রদীপ জ্বালা।'
প্রেম বলে যে, "যুগে যুগে
তোমার লাগি আছি জেগে।'
মরণ বলে, "আমি তোমার
              জীবন-তরী বাই।'
আরো দেখুন
আমি জেনে শুনে তবু ভুলে আছি
Songs
            আমি    জেনে শুনে তবু ভুলে আছি,    দিবস কাটে বৃথায় হে।
            আমি যেতে চাই তব পথপানে,     ওহে    কত বাধা পায় পায় হে।
            ( তোমার অমৃতপথে,    যে পথে তোমার আলো জ্বলে সেই অভয়পথে। )
            চারি দিকে হেরো ঘিরেছে কারা,    শত বাঁধনে জড়ায় হে।
            আমি    ছাড়াতে চাহি, ছাড়ে না কেন গো– ডুবায়ে রাখে মায়ায় হে।
            ( তারা বাঁধিয়া রাখে, তোমার বাহুর বাঁধন হতে তারা বাঁধিয়া রাখে। )
            দাও ভেঙে দাও এ ভবের সুখ,    কাজ নেই এ খেলায় হে।
            আমি    ভুলে থাকি যত অবোধের মতো    বেলা বহে তত যায় হে। 
            ( ভুলে যে থাকি, দিন যে মিলায়, খেলা যে ফুরায়, ভুলে যে থাকি। )
            হানো তব বাজ হৃদয়গহনে,     দুখানল জ্বালো তায় হে।
            তুমি    নয়নের জলে ভাসায়ে আমারে    সে জল দাও মুছায়ে হে। 
            ( নয়নজলে– তোমার-হাতের-বেদনা-দেওয়া নয়নজলে–
                                                 প্রাণের-সকল-কলঙ্ক-ধোওয়া নয়নজলে। ) 
            শূন্য ক’রে দাও হৃদয় আমার,    আসন পাতো সেথায় হে।
            ওহে    তুমি    এসো এসো, নাথ হয়ে বোসো, ভুলো না আমায় হে।
            ( আমার শূন্য প্রাণে– চির-আনন্দে ভরে থাকো আমার শূন্য প্রাণে। )
আরো দেখুন
খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন
Stories
রাইচরণ যখন বাবুদের বাড়ি প্রথম চাকরি করিতে আসে তখন তাহার বয়স বারো। যশোহর জিলায় বাড়ি, লম্বা চুল, বড়ো বড়ো চোখ, শ্যামচিক্কণ ছিপ্‌ছিপে বালক। জাতিতে কায়স্থ। তাহার প্রভুরাও কায়স্থ। বাবুদের এক-বৎসর-বয়স্ক একটি শিশুর রক্ষণ ও পালন-কার্যে সহায়তা করা তাহার প্রধান কর্তব্য ছিল।
সেই শিশুটি কালক্রমে রাইচরণের কক্ষ ছাড়িয়া স্কুলে, স্কুল ছাড়িয়া কলেজে, অবশেষে কলেজ ছাড়িয়া মুন্‌সেফিতে প্রবেশ করিয়াছে। রাইচরণ এখনো তাঁহার ভৃত্য।
আরো দেখুন