গলি
Stories
আমাদের এই শানবাঁধানো গলি, বারে বারে ডাইনে বাঁয়ে এঁকে বেঁকে একদিন কী যেন খুঁজতে বেরিয়েছিল। কিন্তু, সে যে দিকেই যায় ঠেকে যায়। এ দিকে বাড়ি, ও দিকে বাড়ি, সামনে বাড়ি।
উপরের দিকে যেটুকু নজর চলে তাতে সে একখানি আকাশের রেখা দেখতে পায়-- ঠিক তার নিজেরই মতো সরু, তার নিজেরই মতো বাঁকা।
আরো দেখুন
ওরা অকারণে চঞ্চল
Songs
              ওরা   অকারণে চঞ্চল।
     ডালে ডালে   দোলে বায়ুহিল্লোলে   নব পল্লবদল॥
ছড়ায়ে ছড়ায়ে ঝিকিমিকি আলো
              দিকে দিকে ওরা   কী খেলা খেলালো,
     মর্মরতানে   প্রাণে ওরা   আনে   কৈশোরকোলাহাল॥
ওরা   কান পেতে শোনে   গগনে গগনে
              নীরবের কানাকানি,
                   নীলিমার কোন্‌ বাণী।
ওরা   প্রাণঝরনার উচ্ছল ধার,   ঝরিয়া ঝরিয়া বহে অনিবার,
          চির তাপসিনী ধরণীর ওরা   শ্যামশিখা হোমানল॥
আরো দেখুন
সন্ধ্যা ও প্রভাত
Stories
এখানে নামল সন্ধ্যা। সূর্যদেব, কোন্‌ দেশে, কোন্‌ সমুদ্রপারে, তোমার প্রভাত হল।
অন্ধকারে এখানে কেঁপে উঠছে রজনীগন্ধা, বাসরঘরের দ্বারের কাছে অবগুণ্ঠিতা নববধূর মতো; কোন্‌খানে ফুটল ভোরবেলাকার কনকচাঁপা।
আরো দেখুন
তপস্বিনী
Stories
বৈশাখ প্রায় শেষ হইয়া আসিল। প্রথমরাত্রে গুমট গেছে, বাঁশগাছের পাতাটা পর্যন্ত নড়ে না, আকাশের তারাগুলো যেন মাথা-ধরার বেদনার মতো দব্‌ দব্‌ করিতেছে। রাত্রি তিনটের সময় ঝির্‌ঝির্‌ করিয়া একটুখানি বাতাস উঠিল। ষোড়শী শূন্য মেঝের উপর খোলা জানলার নীচে শুইয়া আছে, একটা কাপড়ে-মোড়া টিনের বাক্স তার মাথার বালিশ। বেশ বোঝা যায়, খুব উৎসাহের সঙ্গে সে কৃচ্ছসাধন করিতেছে।
প্রতিদিন ভোর চারটের সময় উঠিয়া স্নান সারিয়া ষোড়শী ঠাকুরঘরে গিয়া বসে। আহ্নিক করিতে বেলা হইয়া যায়। তার পরে বিদ্যারত্নমশায় আসেন; সেই ঘরে বসিয়াই তাঁর কাছে সে গীতা পড়ে। সংস্কৃত সে কিছু কিছু শিখিয়াছে। শঙ্করের বেদান্তভাষ্য এবং পাতঞ্জলদর্শন মূল গ্রন্থ হইতে পড়িবে, এই তার পণ। বয়স তার তেইশ হইবে।
আরো দেখুন
তোমাদের একি ভ্রান্তি
Songs
            তোমাদের এ কী ভ্রান্তি--
কে ওই পুরুষ দেবকান্তি,
            প্রহরী, মরি মরি।
এমন করে কি ওকে বাঁধে।
দেখে যে আমার প্রাণ কাঁদে।
            বন্দী করেছ কোন্‌ দোষে।
আরো দেখুন
প্রায়শ্চিত্ত
Stories
স্বর্গ ও মর্তের মাঝখানে একটা অনির্দেশ্য অরাজক স্থান আছে যেখানে ত্রিশঙ্কু রাজা ভাসিয়া বেড়াইতেছেন, যেখানে আকাশকুসুমের অজস্র আবাদ হইয়া থাকে। সেই বায়ুদুর্গবেষ্টিত মহাদেশের নাম 'হইলে-হইতে-পারিত'। যাঁহারা মহৎ কার্য করিয়া অমরতা লাভ করিয়াছেন তাঁহারা ধন্য হইয়াছেন, যাঁহারা সামান্য ক্ষমতা লইয়া সাধারণ মানবের মধ্যে সাধারণভাবে সংসারের প্রাত্যহিক কর্তব্যসাধনে সহায়তা করিতেছেন তাঁহারাও ধন্য; কিন্তু যাঁহারা অদৃষ্টের ভ্রমক্রমে হঠাৎ দুয়ের মাঝখানে পড়িয়াছেন তাঁহাদের আর কোনো উপায় নাই। তাঁহারা একটা কিছু হইলে হইতে পারিতেন কিন্তু সেই কারণেই তাঁহাদের পক্ষে কিছু-একটা হওয়া সর্বাপেক্ষা অসম্ভব।
আমাদের অনাথবন্ধু সেই মধ্যদেশবিলম্বিত বিধিবিড়ম্বিত যুবক। সকলেরই বিশ্বাস, তিনি ইচ্ছা করিলে সকল বিষয়েই কৃতকার্য হইতে পারিতেন। কিন্তু কোনো কালে তিনি ইচ্ছাও করিলেন না এবং কোনো বিষয়ে তিনি কৃতকার্যও হইলেন না, এবং সকলের বিশ্বাস তাঁহার প্রতি অটল রহিয়া গেল। সকলে বলিল, তিনি পরীক্ষায় ফার্‌স্ট্‌ হইবেন; তিনি আর পরীক্ষা দিলেন না। সকলের বিশ্বাস চাকরিতে প্রবিষ্ট হইলে যে কোনো ডিপার্টমেন্টের উচ্চতম স্থান তিনি অনায়াসে গ্রহণ করিতে পারিবেন; তিনি কোনো চাকরিই গ্রহণ করিলেন না। সাধারণ লোকের প্রতি তাঁহার বিশেষ অবজ্ঞা, কারণ তাহারা অত্যন্ত সামান্য; অসাধারণ লোকের প্রতি তাঁহার কিছুমাত্র শ্রদ্ধা ছিল না, কারণ মনে করিলেই তিনি তাহাদের অপেক্ষা অসাধারণতর হইতে পারিতেন।
আরো দেখুন
সিদ্ধি
Stories
স্বর্গের অধিকারে মানুষ বাধা পাবে না, এই তার পণ। তাই, কঠিন সন্ধানে অমর হবার মন্ত্র সে শিখে নিয়েছে। এখন একলা বনের মধ্যে সেই মন্ত্র সে সাধনা করে।
বনের ধারে ছিল এক কাঠকুড়নি মেয়ে। সে মাঝে মাঝে আঁচলে ক'রে তার জন্যে ফল নিয়ে আসে, আর পাতার পাত্রে আনে ঝরনার জল।
আরো দেখুন
সম্মিলন
Verses
সেথায় কপোত-বধূ লতার আড়ালে
দিবানিশি গাহে শুধু প্রেমের বিলাপ।
নবীন চাঁদের করে একটি হরিণী
আমাদের গৃহদ্বারে আরামে ঘুমায়।
তার শান্ত নিদ্রাকালে নিশ্বাস পতনে
প্রহর গণিতে পারি স্তব্ধ রজনীর।
সুখের আবাসে সেই কাটাব জীবন,
দুজনে উঠিব মোরা, দুজনে বসিব,
নীল আকাশের নীচে ভ্রমিব দুজনে,
বেড়াইব মাঠে মাঠে উঠিব পর্বতে
সুনীল আকাশ যেথা পড়েছে নামিয়া।
অথবা দাঁড়াব মোরা সমুদ্রের তটে,
উপলমণ্ডিত সেই স্নিগ্ধ উপকূল
তরঙ্গের চুম্বনেতে উচ্ছ্বাসে মাতিয়া
থর থর কাঁপে আর জ্বল' জ্বল' জ্বলে!
যত সুখ আছে সেথা আমাদের হবে,
আমরা দুজনে সেথা হব দুজনের,
অবশেষে বিজন সে দ্বীপের মাঝারে
ভালোবাসা, বেঁচে থাকা, এক হ'য়ে যাবে।
মধ্যাহ্নে যাইব মোরা পর্বতগুহায়,
সে প্রাচীন শৈল-গুহা স্নেহের আদরে
অবসান রজনীর মৃদু জোছনারে
রেখেছে পাষাণ কোলে ঘুম পাড়াইয়া।
প্রচ্ছন্ন আঁধারে সেথা ঘুম আসি ধীরে
হয়তো হরিবে তোর নয়নের আভা।
সে ঘুম অলস প্রেমে শিশিরের মতো।
সে ঘুম নিভায়ে রাখে চুম্বন-অনল
আবার নূতন করি জ্বালাবার তরে।
অথবা বিরলে সেথা কথা কব মোরা,
কহিতে কহিতে কথা, হৃদয়ের ভাব
এমন মধুর স্বরে গাহিয়া উঠিবে
আর আমাদের মুখে কথা ফুটিবে না।
মনের সে ভাবগুলি কথায় মরিয়া
আমাদের চোখে চোখে বাঁচিয়া উঠিবে!
চোখের সে কথাগুলি বাক্যহীন মনে
ঢালিবে অজস্র স্রোতে নীরব সংগীত,
মিলিবেক চৌদিকের নীরবতা সনে।
মিশিবেক আমাদের নিশ্বাসে নিশ্বাসে।
আমাদের দুই হৃদি নাচিতে থাকিবে,
শোণিত বহিবে বেগে দোঁহার শিরায়।
মোদের অধর দুটি কথা ভুলি গিয়া
ক'বে শুধু উচ্ছ্বসিত চুম্বনের ভাষা।
দুজনে দুজন আর রব না আমরা,
এক হয়ে যাব মোরা দুইটি শরীরে।
দুইটি শরীর? আহা তাও কেন হল?
যেমন দুইটি উল্কা জ্বলন্ত শরীর,
ক্রমশ দেহের শিখা করিয়া বিস্তার
স্পর্শ করে, মিশে যায়, এক দেহ ধরে,
চিরকাল জ্বলে তবু ভস্ম নাহি হয়,
দুজনেরে গ্রাস করি দোঁহে বেঁচে থাকে;
মোদের যমক-হৃদে একই বাসনা,
দণ্ডে দণ্ডে পলে পলে বাড়িয়া বাড়িয়া,
তেমনি মিলিয়া যাবে অনন্ত মিলন।
এক আশা রবে শুধু দুইটি ইচ্ছার
এই ইচ্ছা রবে শুধু দুইটি হৃদয়ে,
একই জীবন আর একই মরণ,
একই স্বরগ আর একই নরক,
এক অমরতা কিংবা একই নির্বাণ,
হায় হায় এ কী হল এ কী হল মোর!
আমার হৃদয় চায় উধাও উড়িয়া
প্রেমের সুদূর রাজ্যে করিতে ভ্রমণ,
কিন্তু গুরুভার এই মরতের ভাষা
চরণে বেঁধেছে তার লোহার শৃঙ্খল।
নামি বুঝি, পড়ি বুঝি, মরি বুঝি মরি।
আরো দেখুন
সম্পাদক
Stories
আমার স্ত্রী-বর্তমানে প্রভা সম্বন্ধে আমার কোনো চিন্তা ছিল না। তখন প্রভা অপেক্ষা প্রভার মাতাকে লইয়া কিছু অধিক ব্যস্ত ছিলাম।
তখন কেবল প্রভার খেলাটুকু হাসিটুকু দেখিয়া, তাহার আধো আধো কথা শুনিয়া এবং আদরটুকু লইয়াই তৃপ্ত থাকিতাম; যতক্ষণ ভালো লাগিত নাড়াচাড়া করিতাম, কান্না আরম্ভ করিলেই তাহার মার কোলে সমর্পণ করিয়া সত্বর অব্যাহতি লইতাম। তাহাকে যে বহু চিন্তা ও চেষ্টায় মানুষ করিয়া তুলিতে হইবে, এ-কথা আমার মনে আসে নাই।
আরো দেখুন