উপসংহার
Stories
ভোজরাজের দেশে যে মেয়েটি ভোরবেলাতে দেবমন্দিরে গান গাইতে যায় সে কুড়িয়ে-পাওয়া মেয়ে।
আচার্য বলেন, 'একদিন শেষরাত্রে আমার কানে একখানি সুর লাগল। তার পরে সেইদিন যখন সাজি নিয়ে পারুলবনে ফুল তুলতে গেছি তখন এই মেয়েটিকে ফুলগাছতলায় কুড়িয়ে পেলেম।'
আরো দেখুন
মেঘদূত
Stories
মিলনের প্রথম দিনে বাঁশি কী বলেছিল।
সে বলেছিল, 'সেই মানুষ আমার কাছে এল যে মানুষ আমার দূরের।'
আরো দেখুন
159
Verses
বসন্ত পাঠায় দূত
      রহিয়া রহিয়া
যে কাল গিয়েছে তার
      নিশ্বাস বহিয়া।
আরো দেখুন
ভালোমানুষ
Stories
ছিঃ, আমি নেহাত ভালোমানুষ।
কুসমি বললে, কী যে তুমি বল তার ঠিক নেই। তুমি যে ভালোমানুষ সেও কি বলতে হবে। কে না জানে, তুমি ও পাড়ার লোটনগুণ্ডার দলের সর্দার নও। ভালোমানুষ তুমি বল কাকে।
আরো দেখুন
46
Verses
তোমাদের যে মিলন হবে
        বিশ্বে হল জানাজানি--
তারাগুলি করছে কেবল
        হাসাহাসি কানাকানি।
রাত্রি যখন গভীর হবে
        বাসর-ঘরের বাতায়নে
মারবে ওরা উঁকিঝুঁকি
        --এইটে ওদের আছে মনে।
তোমরা যদি শোধ দিতে চাও,
        এনেছি এই যন্ত্রখানি[১]
ওরা কেন লুকিয়ে রবে
        অন্ধকারের পর্দা টানি।
তোমরা কোণে দাঁড়িয়ে দেখো
        আলোক-সভার মিলন-রাতি--
দ্যুলোকেতে ভূলোকেতে
        হোক-না আড়ি-পাতাপাতি।

[১] দূরবীক্ষণ
আরো দেখুন
মণিহারা
Stories
সেই জীর্ণপ্রায় বাঁধাঘাটের ধারে আমার বোট লাগানো ছিল। তখন সূর্য অস্ত গিয়াছে।
বোটের ছাদের উপরে মাঝি নমাজ পড়িতেছে। পশ্চিমের জ্বলন্ত আকাশপটে তাহার নীরব উপাসনা ক্ষণে ক্ষণে ছবির মতো আঁকা পড়িতেছিল। স্থির রেখাহীন নদীর জলের উপর ভাষাতীত অসংখ্য বর্ণচ্ছটা দেখিতে দেখিতে ফিকা হইতে গাঢ় লেখায়, সোনার রঙ হইতে ইস্পাতের রঙে, এক আভা হইতে আর-এক আভায় মিলাইয়া আসিতেছিল।
আরো দেখুন
আটাশ
Verses
তুমি প্রভাতের শুকতারা
আপন পরিচয় পালটিয়ে দিয়ে
কখনো বা তুমি দেখা দাও
গোধূলির দেহলিতে,
এই কথা বলে জ্যোতিষী।
সূর্যাস্তবেলায় মিলনের দিগন্তে
রক্ত-অবগুণ্ঠনের নিচে
শুভদৃষ্টির প্রদীপ তোমার জ্বাল
শাহানার সুরে।
সকালবেলায় বিরহের আকাশে
শূন্য বাসরঘরের খোলা দ্বারে
ভৈরবীর তানে লাগাও
বৈরাগ্যের মূর্ছনা।
সুপ্তিসমুদ্রের এপারে ওপারে,
চিরজীবন,
সুখদুঃখের আলোয় অন্ধকারে
মনের মধ্যে দিয়েছ
আলোকবিন্দুর স্বাক্ষর।
যখন নিভৃতপুলকে রোমাঞ্চ লেগেছে মনে
গোপনে রেখেছ তার 'পরে
সুরলোকের সম্মতি,
ইন্দ্রাণীর মালার একটি পাপড়ি,
তোমাকে এমনি করেই জেনেছি
আমাদের সকালসন্ধ্যার সোহাগিনী।
পণ্ডিত তোমাকে বলে শুক্রগ্রহ;
বলে, আপন সুদীর্ঘ কক্ষে
তুমি বৃহৎ, তুমি বেগবান,
তুমি মহিমান্বিত;
সূর্যবন্দনার প্রদক্ষিণপথে
তুমি পৃথিবীর সহযাত্রী,
রবিরশ্মিগ্রথিত দিনরত্নের মালা
দুলছে তোমার কণ্ঠে।
যে মহাযুগের বিপুল ক্ষেত্রে
তোমার নিগূঢ় জগদ্ব্যাপার
সেখানে তুমি স্বতন্ত্র, সেখানে সুদূর,
সেখানে লক্ষকোটিবৎসর
আপনার জনহীন রহস্যে তুমি অবগুণ্ঠিত।
আজ আসন্ন রজনীর প্রান্তে
কবিচিত্তে যখন জাগিয়ে তুলেছ
নিঃশব্দ শান্তিবাণী।
সেই মুহূর্তেই
আমাদের অজ্ঞাত ঋতুপর্যায়ের আবর্তন
তোমার জলে স্থলে বাষ্পমণ্ডলীতে
রচনা করছে সৃষ্টিবৈচিত্র৻।
তোমার সেই একেশ্বর যজ্ঞে
আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই,
আমাদের প্রবেশদ্বার রুদ্ধ।
হে পণ্ডিতের গ্রহ,
তুমি জ্যোতিষের সত্য
সে-কথা মানবই,
সে সত্যের প্রমাণ আছে গণিতে।
কিন্তু এও সত্য, তার চেয়েও সত্য
যেখানে তুমি আমাদেরি
আপন শুকতারা, সন্ধ্যাতারা,
যেখানে তুমি ছোটো, তুমি সুন্দর,
যেখানে আমাদের হেমন্তের শিশিরবিন্দুর সঙ্গে তোমার তুলনা,
যেখানে শরতের শিউলি ফুলের উপমা তুমি,
যেখানে কালে কালে
প্রভাতে মানব-পথিককে
নিঃশব্দে সংকেত করেছ
জীবনযাত্রার পথের মুখে,
সন্ধ্যায় ফিরে ডেকেছ
চরম বিশ্রামে।
আরো দেখুন
বদনাম
Stories
ক্রিং ক্রিং ক্রিং সাইকেলের আওয়াজ; সদর দরজার কাছে লাফ দিয়ে নেমে পড়লেন ইন্‌স্‌পেক্টার বিজয়বাবু। গায়ে ছাঁটা কোর্তা, কোমরে কোমরবন্ধ, হাফ-প্যাণ্টপরা, চলনে কেজো লোকের দাপট। দরজার কড়া নাড়া দিতেই গিন্নি এসে খুলে দিলেন।
ইন্‌স্‌পেক্টার ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই ঝংকার দিয়ে উঠলেন--'এমন করে তো আর পারি নে, রাত্তিরের পর রাত্তির খাবার আগলে রাখি! তুমি কত চোর ডাকাত ধরলে, সাধু সজ্জনও বাদ গেল না, আর ঐ একটা লোক অনিল মিত্তিরের পিছন পিছন তাড়া করে বেড়াচ্ছ, সে থেকে থেকে তোমার সামনে এসে নাকের উপর বুড়ো আঙুল নাড়া দিয়ে কোথায় দৌড় মারে তার ঠিকানা নেই। দেশসুদ্ধ লোক তোমার এই দশা দেখে হেসে খুন, এ যেন সার্কাসের খেলা হচ্ছে।'
আরো দেখুন
বাচস্পতি
Stories
দাদামশায়, তুমি তোমার চার দিকে যেসব পাগলের দল জমিয়েছিলে, গুণ হিসেব ক'রে তাদের বুঝি সব নম্বর দিয়ে রেখেছিলে?
হ্যাঁ, তা করতে হয়েছে বই-কি। কম তো জমে নি।
আরো দেখুন
বিদায়
Verses
তবে আমি যাই গো তবে যাই
     ভোরের বেলা শূন্য কোলে
     ডাকবি যখন খোকা বলে,
বলব আমি, "নাই সে খোকা নাই।'
          মা গো, যাই।
     হাওয়ার সঙ্গে হাওয়া হয়ে
     যাব মা, তোর বুকে বয়ে,
ধরতে আমায় পারবি নে তো হাতে।
     জলের মধ্যে হব মা, ঢেউ,
     জানতে আমায় পারবে না কেউ --
স্নানের বেলা খেলব তোমার সাথে।
     বাদলা যখন পড়বে ঝরে
     রাতে শুয়ে ভাববি মোরে,
ঝর্‌ঝরানি গান গাব ওই বনে।
     জানলা দিয়ে মেঘের থেকে
     চমক মেরে যাব দেখে,
আমার হাসি পড়বে কি তোর মনে।
খোকার লাগি তুমি মা গো,
          অনেক রাতে যদি জাগ
     তারা হয়ে বলব তোমায়, "ঘুমো!'
          তুই ঘুমিয়ে পড়লে পরে
          জ্যোৎস্না হয়ে ঢুকব ঘরে,
     চোখে তোমার খেয়ে যাব চুমো।
          স্বপন হয়ে আঁখির ফাঁকে
         দেখতে আমি আসব মাকে,
     যাব তোমার ঘুমের মধ্যিখানে।
          জেগে তুমি মিথ্যে আশে
          হাত বুলিয়ে দেখবে পাশে --
     মিলিয়ে যাব কোথায় কে তা জানে।
          পুজোর সময় যত ছেলে
          আঙিনায় বেড়াবে খেলে,
     বলবে "খোকা নেই রে ঘরের মাঝে'।
          আমি তখন বাঁশির সুরে
          আকাশ বেয়ে ঘুরে ঘুরে
     তোমার সাথে ফিরব সকল কাজে।
          পুজোর কাপড় হাতে ক'রে
          মাসি যদি শুধায় তোরে,
     "খোকা তোমার কোথায় গেল চলে।'
          বলিস "খোকা সে কি হারায়,
          আছে আমার চোখের তারায়,
     মিলিয়ে আছে আমার বুকে কোলে।'
আরো দেখুন
করুণা
Stories
গ্রামের মধ্যে অনুপকুমারের ন্যায় ধনবান আর কেহই ছিল না। অতিথিশালানির্মাণ, দেবালয়প্রতিষ্ঠা, পুষ্করিণীখনন প্রভৃতি নানা সৎকর্মে তিনি ধনব্যয় করিতেন। তাঁহার সিন্ধুক-পূর্ণ টাকা ছিল, দেশবিখ্যাত যশ ছিল ও রূপবতী কন্যা ছিল। সমস্ত যৌবনকাল ধন উপার্জন করিয়া অনুপ বৃদ্ধ বয়সে বিশ্রাম করিতেছিলেন। এখন কেবল তাঁহার একমাত্র ভাবনা ছিল যে, কন্যার বিবাহ দিবেন কোথায়। সৎপাত্র পান নাই ও বৃদ্ধ বয়সে একমাত্র আশ্রয়স্থল কন্যাকে পরগৃহে পাঠাইতে ইচ্ছা নাই--তজ্জন্যও আজ কাল করিয়া আর তাঁহার দুহিতার বিবাহ হইতেছে না।
সঙ্গিনী-অভাবে করুণার কিছুমাত্র কষ্ট হইত না। সে এমন কাল্পনিক ছিল, কল্পনার স্বপ্নে সে সমস্ত দিন-রাত্রি এমন সুখে কাটাইয়া দিত যে, মুহূর্তমাত্রও তাহাকে কষ্ট অনুভব করিতে হয় নাই। তাহার একটি পাখি ছিল, সেই পাখিটি হাতে করিয়া অন্তঃপুরের পুষ্করিণীর পাড়ে কল্পনার রাজ্য নির্মাণ করিত। কাঠবিড়ালির পশ্চাতে পশ্চাতে ছুটাছুটি করিয়া, জলে ফুল ভাসাইয়া, মাটির শিব গড়িয়া, সকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাটাইয়া দিত। এক-একটি গাছকে আপনার সঙ্গিনী ভগ্নী কন্যা বা পুত্র কল্পনা করিয়া তাহাদের সত্য-সত্যই সেইরূপ যত্ন করিত, তাহাদিগকে খাবার আনিয়া দিত, মালা পরাইয়া দিত, নানাপ্রকার আদর করিত এবং তাদের পাতা শুকাইলে, ফুল ঝরিয়া পড়িলে, অতিশয় ব্যথিত হইত। সন্ধ্যাবেলা পিতার নিকট যা-কিছু গল্প শুনিত, বাগানে পাখিটিকে তাহাই শুনানো হইত। এইরূপে করুণা তাহার জীবনের প্রত্যুষকাল অতিশয় সুখে আরম্ভ করিয়াছিল। তাহার পিতা ও প্রতিবাসীরা মনে করিতেন যে, চিরকালই বুঝি ইহার এইরূপে কাটিয়া যাইবে।
আরো দেখুন