মাটি
Verses
বাঁখারির বেড়া দেওয়া ভূমি; হেথা করি ঘোরাফেরা
          সারাক্ষণ আমি-দিয়ে ঘেরা
               বর্তমানে।
                    মন জানে
                    এ মাটি আমারি,
                   যেমন এ শালতরুসারি
বাঁধে নিজ তলবীথি শিকড়ের গভীর বিস্তারে
          দূর শতাব্দীর অধিকারে।
   হেথা কৃষ্ণচূড়াশাখে ঝরে শ্রাবণের বারি
          সে যেন আমারি--
   ভোরে ঘুমভাঙা আলো, রাত্রে তারাজ্বলা অন্ধকার,
          যেন সে আমারি আপনার
             এ মাটির সীমাটুকু মাঝে।
          আমার সকল খেলা, সব কাজে,
               এ ভূমি জড়িত আছে শাশ্বতের যেন সে লিখন।
                   হঠাৎ চমক ভাঙে নিশীথে যখন
সপ্তর্ষির চিরন্তন দৃষ্টিতলে,
     ধ্যানে দেখি, কালের যাত্রীর দল চলে
                   যুগে যুগান্তরে।
                 এই ভূমিখণ্ড-'পরে
                   তারা এল, তারা গেল কত।
             তারাও আমারি মতো
                 এ মাটি নিয়েছে ঘেরি--
             জেনেছিল, একান্ত এ তাহাদেরি।
                 কেহ আর্য কেহ বা অনার্য তারা,
             কত জাতি নামহীন, ইতিহাসহারা।
          কেহ হোমাগ্নিতে হেথা দিয়েছিল হবির অঞ্জলি,
                কেহ বা দিয়েছে নরবলি।
          এ মাটিতে একদিন যাহাদের সুপ্তচোখে
             জাগরণ এনেছিল অরুণ-আলোকে
                   বিলুপ্ত তাদের ভাষা।
          পরে পরে যারা বেঁধেছিল বাসা,
               সুখে দুঃখে জীবনের রসধারা
          মাটির পাত্রের মতো প্রতি ক্ষণে ভরেছিল যারা
                   এ ভূমিতে,
             এরে তারা পারিল না কোনো চিহ্ন দিতে।
               আসে যায়
                   ঋতুর পর্যায়,
               আবর্তিত অন্তহীন
                   রাত্রি আর দিন;
               মেঘরৌদ্র এর 'পরে
          ছায়ার খেলেনা নিয়ে খেলা করে
               আদিকাল হতে।
                   কালস্রোতে
          আগন্তুক এসেছি হেথায়
               সত্য কিম্বা দ্বাপরে ত্রেতায়
                   যেখানে পড়ে নি লেখা
          রাজকীয় স্বাক্ষরের একটিও স্থায়ী রেখা।
                   হায় আমি,
                        হায় রে ভূস্বামী,
          এখানে তুলিছ বেড়া--উপাড়িছ হেথা যেই তৃণ
               এই মাটিতে সে-ই রবে লীন
          পুনঃ পুনঃ বৎসরে বৎসরে। তারপরে!--
               এই ধূলি রবে পড়ি আমি-শূন্য চিরকাল-তরে।
আরো দেখুন
বল দাও মোরে
Songs
বল দাও মোরে বল দাও,    প্রাণে দাও মোর শকতি
সকল হৃদয় লুটায়ে    তোমারে করিতে প্রণতি ॥
সরল সুপথে ভ্রমিতে,    সব অপকার ক্ষমিতে,
সকল গর্ব দমিতে    খর্ব করিতে কুমতি ॥
হৃদয়ে তোমারে বুঝিতে,    জীবনে তোমারে পূজিতে,
তোমার মাঝারে খুঁজিতে    চিত্তের চিরবসতি।
তব কাজ শিরে বহিতে,    সংসারতাপ সহিতে,
ভবকোলাহলে রহিতে,    নীরবে করিতে ভকতি ॥
তোমার বিশ্বছবিতে    তব প্রেমরূপ লভিতে,
গ্রহ-তারা-শশী-রবিতে    হেরিতে তোমার আরতি।
বচনমনের অতীতে    ডুবিতে তোমার জ্যোতিতে,
সুখে দুখে লাভে ক্ষতিতে    শুনিতে তোমার ভারতী ॥
আরো দেখুন
পুত্রযজ্ঞ
Stories
বৈদ্যনাথ গ্রামের মধ্যে বিজ্ঞ ছিলেন সেইজন্য তিনি ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি রাখিয়া বর্তমানের সমস্ত কাজ করিতেন। যখন বিবাহ করিলেন তখন তিনি বর্তমান নববধূর অপেক্ষা ভাবী নবকুমারের মুখ স্পষ্টতররূপে দেখিতে পাইয়াছিলেন। শুভদৃষ্টির সময় এতটা দূরদৃষ্টি প্রায় দেখা যায় না। তিনি পাকা লোক ছিলেন সেইজন্য প্রেমের চেয়ে পিণ্ডটাকেই অধিক বুঝিতেন এবং পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা এই মর্মেই তিনি বিনোদিনীকে বিবাহ করিয়াছিলেন।
কিন্তু এ সংসারে বিজ্ঞ লোকও ঠকে। যৌবনপ্রাপ্ত হইয়াও যখন বিনোদিনী তাহার সর্বপ্রধান কর্তব্যটি পালন করিল না তখন পুন্নাম নরকের দ্বারা খোলা দেখিয়া বৈদ্যনাথ বড়ো চিন্তিত হইলেন। মৃত্যুর পরে তাঁহার বিপুল ঐশ্বর্যই বা কে ভোগ করিবে এই ভাবনায় মৃত্যুর পূর্বে তিনি সেই ঐশ্বর্য ভোগ করিতে বিমুখ হইলেন। পূর্বেই বলিয়াছি, বর্তমানের অপেক্ষা ভবিষ্যৎটাকেই তিনি সত্য বলিয়া জানিতেন।
আরো দেখুন
অসম্ভব কথা
Stories
এক যে ছিল রাজা।
তখন ইহার বেশি কিছু জানিবার আবশ্যক ছিল না। কোথাকার রাজা, রাজার নাম কী, এ সকল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়া গল্পের প্রবাহ রোধ করিতাম না। রাজার নাম শিলাদিত্য কি শালিবাহন, কাশী কাঞ্চি কনোজ কোশল অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গের মধ্যে ঠিক কোন্‌খানটিতে তাঁহার রাজত্ব, এ সকল ইতিহাস-ভূগোলের তর্ক আমাদের কাছে নিতান্তই তুচ্ছ ছিল,-- আসল যে-কথাটি শুনিলে অন্তর পুলকিত হইয়া উঠিত এবং সমস্ত হৃদয় একমুহূর্তের মধ্যে বিদ্যুদ্বেগে চুম্বকের মতো আকৃষ্ট হইত সেটি হইতেছে-- এক যে ছিল রাজা।
আরো দেখুন
70
Verses
            দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার
                     গানের ওপারে।
আমার    সুরগুলি পায় চরণ, আমি
                     পাই নে তোমারে।
  বাতাস বহে মরি মরি
  আর বেঁধে রেখো না তরী,
  এসো এসো পার হয়ে মোর
            হৃদয়-মাঝারে।
  তোমার সাথে গানের খেলা
            দূরের খেলা যে,
  বেদনাতে বাঁশি বাজায়
            সকল বেলা যে।
  কবে নিয়ে আমার বাঁশি
  বাজাবে গো আপনি আসি,
  আনন্দময় নীরব রাতের
            নিবিড় আঁধারে।
আরো দেখুন
তরুতলে ছিন্নবৃন্ত মালতীর ফুল
Songs
                  তরুতলে ছিন্নবৃন্ত মালতীর ফুল—
            মুদিয়া আসিছে আঁখি তার,  চাহিয়া দেখিল চারি ধার ।।
                  শুষ্ক তৃণরাশি-মাঝে একেলা পড়িয়া,
            চারি দিকে কেহ নাই আর— নিরদয় অসীম সংসার ।।
                  কে আছে গো দিবে তার তৃষিত অধরে
            একবিন্দু শিশিরের কণা— কেহ না, কেহ না ।।
            মধুকর কাছে এসে বলে,  ‘মধু কই। মধু চাই, চাই ।’
            ধীরে ধীরে নিশ্বাস ফেলিয়া  ফুল বলে, ‘কিছু নাই, নাই।’
            ‘ফুলবালা, পরিমল দাও’ বায়ু আসি কহিতেছে কাছে ।
            মলিন বদন ফিরাইয়া  ফুল বলে, ‘আর কী বা আছে।’
            মধ্যাহ্নকিরণ চারি দিকে  খরদৃষ্টে চেয়ে অনিমিখে—
                   ফুলটির মৃদু প্রাণ হায়,
                          ধীরে ধীরে শুকাইয়া যায় ।।
আরো দেখুন
পান্নালাল
Stories
দাদামশায়, তোমার পাগলের দলের মধ্যে পান্নালাল ছিল খুব নতুন রকমের।
জান, দিদি? তোমার পাগলরা প্রত্যেকেই নতুন, কারও সঙ্গে কারও মিল হয় না। যেমন তোমার দাদামশায়। বিধাতার নতুন পরীক্ষা। ছাঁচ তিনি ভেঙে ফেলেন। সাধারণ লোকের বুদ্ধিতে মিল হয়, অসাধারণ পাগলের মিল হয় না। তোমাকে একটা উদাহরণ দেখাই--
আরো দেখুন
আরম্ভ ও শেষ
Verses
শেষ কহে, একদিন সব শেষ হবে,
হে আরম্ভ, বৃথা তব অহংকার তবে।
আরম্ভ কহিল ভাই, যেথা শেষ হয়
সেইখানে পুনরায় আরম্ভ-উদয়।
আরো দেখুন
4
Verses
তোমার শঙ্খ ধুলায় প'ড়ে,
     কেমন করে সইব।
বাতাস আলো গেল মরে
     এ কী রে দুর্দৈব।
লড়বি কে আয় ধ্বজা বেয়ে,
গান আছে যার ওঠ-না গেয়ে,
চলবি যারা চল্‌ রে ধেয়ে,
     আয় না রে নিঃশঙ্ক।
ধুলয় পড়ে রইল চেয়ে
     ওই যে অভয় শঙ্খ।
চলেছিলাম পূজার ঘরে
     সাজিয়ে ফুলের অর্ঘ্য।
খুঁজি সারাদিনের পরে
     কোথায় শান্তি-শর্গ।
এবার আমার হৃদয়-ক্ষত
ভেবেছিলাম হবে গত,
ধুয়ে মলিন চিহ্ন যত
     হব নিষ্কলঙ্ক।
পথে দেখি ধুলায় নত
     তোমার মহাশঙ্খ।
আরতি-দীপ এই কি জ্বালা।
     এই কি আমার সন্ধ্যা।
গাঁথার রক্তজবার মালা?
     হায় রজনীগন্ধা।
ভেবেছিলাম যোঝাযুঝি
মিটিয়ে পাব বিরাম খুঁজি,
চুকিয়ে দিয়ে ঋণের পুঁজি,
     লব তোমার অঙ্ক।
হেনকালে ডাকল বুঝি
     নীরব তব শঙ্খ।
যৌবনেরি পরশমণি
     করাও তবে স্পর্শ।
দীপক-তানে উঠুক ধ্বনি
     দীপ্ত প্রাণের হর্ষ।
নিশার বক্ষ বিদায় করে
উদ্‌বোধনে গগন ভরে
অন্ধ দিকে দিগন্তরে
     জাগাও-না আতঙ্ক।
দুই হাতে আজ তুলব ধরে
     তোমার জয়শঙ্খ।
জানি জানি তন্দ্রা মম
     রইবে না আর চক্ষে।
জানি শ্রাবণধারা-সম
     বাণ বাজিয়ে বক্ষে।
কেউ বা ছুটে আসবে পাশে,
কাঁদবে বা কেউ দীর্ঘশ্বাসে,
দুঃস্বপনে কাঁপবে ত্রাসে
     সুপ্তির পর্যঙ্ক।
বাজবে যে আজ মহোল্লাসে
     তোমার মহাশঙ্খ।
তোমার কাছে আরাম চেয়ে
     পেলাম শুধু লজ্জা।
এবার সকল অঙ্গ ছেয়ে
     পরাও রণসজ্জা।
ব্যাঘাত আসুক নব নব,
আঘাত খেয়ে অটল রব,
বক্ষে আমার দুঃখে তব
     বাজবে জয়ডঙ্ক।
দেব সকল শক্তি, লব
     অভয় তব শঙ্খ।
আরো দেখুন
বউ-ঠাকুরানীর হাট
Novels
অন্তর্বিষয়ী ভাবের কবিত্ব থেকে বহির্বিষয়ী কল্পনালোকে একসময়ে মন যে প্রবেশ করলে, ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে লাগল, এ বোধ হয় কৌতূহল থেকে।
প্রাচীর-ঘেরা মন বেরিয়ে পড়ল বাইরে, তখন সংসারের বিচিত্র পথে তার যাতায়াত আরম্ভ হয়েছে। এই সময়টাতে তার লেখনী গদ্যরাজ্যে নূতন ছবি নূতন নূতন অভিজ্ঞতা খুঁজতে চাইলে। তারই প্রথম প্রয়াস দেখা দিল বউ-ঠাকুরানীর হাট গল্পে-- একটা রোমান্টিক ভূমিকায় মানবচরিত্র নিয়ে খেলার ব্যাপারে, সেও অল্পবয়সেরই খেলা। চরিত্রগুলির মধ্যে যেটুকু জীবনের লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে সেটা পুতুলের ধর্ম ছাড়িয়ে উঠতে পারে নি। তারা আপন চরিত্রবলে অনিবার্য পরিণামে চালিত নয়, তারা সাজানো জিনিস একটা নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে। আজও হয়তো এই গল্পটার দিকে ফিরে চাওয়া যেতে পারে। এ যেন অশিক্ষিত আঙুলের আঁকা ছবি; সুনিশ্চিত মনের পাকা হাতের চিহ্ন পড়ে নি তাতে। কিন্তু আর্টের খেলাঘরে ছেলেমানুষিরও একটা মূল্য আছে। বুদ্ধির বাধাহীন পথে তার খেয়াল যা-তা কাণ্ড করতে বসে, তার থেকে প্রাথমিক মনের একটা কিছু কারিগরি বেরিয়ে পড়ে।
"বঁধুয়া অসময়ে কেন হে প্রকাশ?
সকলি যে স্বপ্ন বলে হতেছে বিশ্বাস।
চন্দ্রাবলীর কুঞ্জে ছিলে,      সেথায় তো আদর মিলে?
এরি মধ্যে মিটিল কি প্রণয়েরি আশ?
এখনো তো রয়েছে রাত      এখনো হয় নি প্রভাত,
এখনো এ রাধিকার ফুরায় নি তো অশ্রুপাত।
চন্দ্রাবলীর কুসুমসাজ       এখনি কি শুকাল আজ?
চকোর হে, মিলাল কি সে চন্দ্রমুখের মধুর হাস?"
"আজ তোমারে দেখতে এলেম অনেক দিনের পরে।
ভয় নাইকো সুখে থাকো,
অধিক ক্ষণ থাকব নাকো।
আসিয়াছি দুদণ্ডেরি তরে।
দেখব শুধু মুখখানি
শুনব দুটি মধুর বাণী
আড়াল থেকে হাসি দেখে চলে যাব দেশান্তরে।"
"মলিন মুখে ফুটুক হাসি জুড়াক দু-নয়ন।"
"মলিন মুখে ফুটুক হাসি, জুড়াক দু-নয়ন।
মলিন বসন ছাড়ো সখী, পরো আভরণ।"
হাসিরে পায়ে ধরে রাখিবি কেমন করে,
হাসির সে প্রাণের সাধ ও অধরে খেলা করে।
"সারা বরষ দেখি নে মা, মা তুই আমার কেমনধারা,
নয়নতারা হারিয়ে আমার অন্ধ হল নয়নতারা।
এলি কি পাষাণী ওরে
দেখব তোরে আঁখি ভরে
কিছুতেই থামে না যে মা, পোড়া এ নয়নের ধারা।"
"কবরীতে ফুল শুকাল, কাননের ফুল ফুটল বনে,
দিনের আলো প্রকাশিল, মনের সাধ রহিল মনে।"
"ওরে, যেতে হবে, আর দেরি নাই,
পিছিয়ে পড়ে রবি কত, সঙ্গীরা তোর গেল সবাই।
আয় রে ভবের খেলা সেরে, আঁধার করে এসেছে রে,
(ওরে) পিছন ফিরে বারে বারে কাহার পানে চাহিস রে ভাই।
খেলতে এল ভবের নাটে, নতুন লোকে নতুন খেলা,
হেথা হতে আয় রে সরে, নইলে তোরে মারবে ঢেলা,
নামিয়ে দে রে প্রাণের বোঝা, আর এক দেশে চল্‌ রে সোজা,
(সেথা) নতুন করে বাঁধবি বাসা, নতুন খেলা খেলবি সে ঠাঁই।"
"আমার যাবার সময় হল,
আমায় কেন রাখিস ধরে,
চোখের জলের বাঁধন দিয়ে
বাঁধিস নে আর মায়াডোরে।
ফুরিয়েছে জীবনের ছুটি,
ফিরিয়ে নে তোর নয়ন দুটি,
নাম ধরে আর ডাকসি নে ভাই,
যেতে হবে ত্বরা করে।"
"ভিক্ষা যদি দিবে রাই,
(আমার) সোনা রুপায় কাজ নাই,
(আমি) প্রাণের দায়ে এসেছি হে,
মান রতন ভিক্ষা চাই।
আমিই শুধু রইনু বাকি।
যা ছিল তা গেল চলে, রইল যা তা কেবল ফাঁকি
আমার ব'লে ছিল যারা
আর তো তারা দেয় না সাড়া,
কোথায় তারা, কোথায় তারা? কেঁদে কেঁদে কারে ডাকি।
বল্‌ দেখি মা, শুধাই তোরে,
আমার কিছু রাখলি নে রে?
আমি কেবল আমায় নিয়ে কোন্‌ প্রাণেতে বেঁচে থাকি।
আমি শুধু রইনু বাকি।
যা ছিল তা গেল চলে,
রইল যা তা কেবল ফাঁকি।"
তাজবে তাজ নওবে নও।
আমি শুধু রইনু বাকি।
আর কি আমি ছাড়ব তোরে।
মন দিয়ে মন            নাই বা পেলেম
জোর করে রাখিব ধরে।
শূন্য করে হৃদয়-পুরী       প্রাণ যদি করিলে চুরি
তুমিই তবে থাকো সেথায়
শূন্য হৃদয় পূর্ণ করে।
আরো দেখুন
শুভদৃষ্টি
Stories
কান্তিচন্দ্রের বয়স অল্প, তথাপি স্ত্রীবিয়োগের পর দ্বিতীয় স্ত্রীর অনুসন্ধানে ক্ষান্ত থাকিয়া পশুপক্ষী-শিকারেই মনোনিবেশ করিয়াছেন। দীর্ঘ কৃশ কঠিন লঘু শরীর, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, অব্যর্থ লক্ষ্য, সাজসজ্জায় পশ্চিমদেশীর মতো; সঙ্গে সঙ্গে কুস্তিগির হীরা সিং, ছক্কনলাল, এবং গাইয়ে বাজিয়ে খাঁসাহেব, মিঞাসাহেব অনেক ফিরিয়া থাকে; অকর্মণ্য অনুচর-পরিচরেরও অভাব নাই।
দুই-চারিজন শিকারী বন্ধুবান্ধব লইয়া অঘ্রানের মাঝামাঝি কান্তিচন্দ্র নৈদিঘির বিলের ধারে শিকার করিতে গিয়াছেন। নদীতে দুইটি বড়ো বোটে তাঁহাদের বাস, আরো  গোটা-তিনচার নৌকায় চাকরবাকরের দল গ্রামের ঘাট ঘিরিয়া বসিয়া আছে। গ্রামবধূদের জল তোলা, স্নান করা প্রায় বন্ধ। সমস্ত দিন বন্দুকের আওয়াজে জলস্থল কম্পমান, সন্ধ্যাবেলায় ওস্তাদি গলায় তানকর্তবে পল্লীর নিদ্রাতন্দ্রা তিরোহিত।
আরো দেখুন