মহামায়া
Stories
মহামায়া এবং রাজীবলোচন উভয়ে নদীর ধারে একটা ভাঙা মন্দিরে সাক্ষাৎ করিল।
মহামায়া কোনো কথা না বলিয়া তাহার স্বাভাবিক গম্ভীর দৃষ্টি ঈষৎ ভর্ৎসনার ভাবে রাজীবের প্রতি নিক্ষেপ করিল। তাহার মর্ম এই, তুমি কী সাহসে আজ অসময়ে আমাকে এখানে আহ্বান করিয়া আনিয়াছ। আমি এ পর্যন্ত তোমার সকল কথা শুনিয়া আসিতেছি বলিয়াই তোমার এতদূর স্পর্ধা বাড়িয়া উঠিয়াছে?
আরো দেখুন
গিন্নি
Stories
ছাত্রবৃত্তি ক্লাসের দুই-তিন শ্রেণী নীচে আমাদের পণ্ডিত ছিলেন শিবনাথ। তাঁহার গোঁফদাড়ি কামানো, চুল ছাঁটা এবং টিকিটি হ্রস্ব। তাঁহাকে দেখিলেই বালকদের অন্তরাত্মা শুকাইয়া যাইত।
প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায়, যাহাদের হুল আছে তাহাদের দাঁত নাই। আমাদের পণ্ডিতমহাশয়ের দুই একত্রে ছিল। এ দিকে কিল চড় চাপড় চারাগাছের বাগানের উপর শিলাবৃষ্টির মতো অজস্র বর্ষিত হইত, ও দিকে তীব্র বাক্যজ্বালায় প্রাণ বাহির হইয়া যাইত।
আরো দেখুন
16
Verses
এবার     ভাসিয়ে দিতে হবে আমার
             এই তরী।      
  তীরে বসে যায় যে বেলা,
            মরি গো মরি।
  ফুল-ফোটানো সারা ক'রে
  বসন্ত যে গেল স'রে,
  নিয়ে ঝরা ফুলের ডালা
            বলো কী করি।
  জল উঠেছে ছলছলিয়ে
            ঢেউ উঠেছে দুলে,
  মর্মরিয়ে ঝরে পাতা
            বিজন তরুমূলে।
  শূন্য মনে কোথায় তাকাস।
  সকল বাতাস সকল আকাশ
  ওই পারের ওই বাঁশির সুরে
            উঠে শিহরি।
আরো দেখুন
অনধিকার প্রবেশ
Stories
একদা প্রাতঃকালে পথের ধারে দাঁড়াইয়া এক বালক আর-এক বালকের সহিত একটি অসমসাহসিক অনুষ্ঠান সম্বন্ধে বাজি রাখিয়াছিল। ঠাকুরবাড়ির মাধবীবিতান হইতে ফুল তুলিয়া আনিতে পারিবে কি না, ইহাই লইয়া তর্ক। একটি বালক বলিল 'পারিব', আর-একটি বালক বলিল 'কখনোই পারিবে না'।
কাজটি শুনিতে সহজ অথচ করিতে কেন সহজ নহে তাহার বৃত্তান্ত আর-একটু বিস্তারিত করিয়া বলা আবশ্যক।
আরো দেখুন
আমার মালার ফুলের দলে
Songs
                       আমার মালার ফুলের দলে আছে লেখা
                                বসন্তের মন্ত্রলিপি।
                       এর মাধুর্যে আছে যৌবনের আমন্ত্রণ।
                       সাহানা রাগিণী এর
                              রাঙা রঙে রঞ্জিত,
                       মধুকরের ক্ষুধা অশ্রুত ছন্দে
                              গন্ধে তার গুঞ্জরে।
                   আন্‌ গো ডালা, গাঁথ্‌ গো মালা,
                   আন্‌ মাধবী মালতী অশোকমঞ্জরী,
                            আয় তোরা আয়।
                   আন্‌ করবী রঙ্গন কাঞ্চন রজনীগন্ধা
                              প্রফুল্ল মল্লিকা,
                            আয় তোরা আয়।
                   মালা পর্‌ গো মালা পর্‌ সুন্দরী,
                            ত্বরা কর্‌ গো ত্বরা কর্‌।
                   আজি পূর্ণিমা রাতে জাগিছে চন্দ্রমা,
                             বকুলকুঞ্জ
                   দক্ষিণবাতাসে দুলিছে কাঁপিছে
                             থরথর মৃদু মর্মরি।
                   নৃত্যপরা বনাঙ্গনা বনাঙ্গনে সঞ্চরে,
                   চঞ্চলিত চরণ ঘেরি মঞ্জীর তার গুঞ্জরে।
                   দিস নে মধুরাতি বৃথা বহিয়ে
                             উদাসিনী, হায় রে।
                   শুভলগন গেলে চলে ফিরে দেবে না ধরা,
                             সুধাপসরা
                   ধুলায় দেবে শূন্য করি,
                             শুকাবে বঞ্জুলমঞ্জরী।
                   চন্দ্রকরে অভিষিক্ত নিশীথে ঝিল্লিমুখর বনছায়ে
                   তন্দ্রাহারা পিক-বিরহকাকলি-কূজিত দক্ষিণবায়ে
                   মালঞ্চ মোর ভরল ফুলে ফুলে ফুলে গো,
                   কিংশুকশাখা চঞ্চল হল দুলে দুলে গো॥
আরো দেখুন
পুনরাবৃত্তি
Stories
সেদিন যুদ্ধের খবর ভালো ছিল না। রাজা বিমর্ষ হয়ে বাগানে বেড়াতে গেলেন।
দেখতে পেলেন, প্রাচীরের কাছে গাছতলায় বসে খেলা করছে একটি ছোটো ছেলে আর একটি ছোটো মেয়ে।
আরো দেখুন
তরুতলে ছিন্নবৃন্ত মালতীর ফুল
Songs
                  তরুতলে ছিন্নবৃন্ত মালতীর ফুল—
            মুদিয়া আসিছে আঁখি তার,  চাহিয়া দেখিল চারি ধার ।।
                  শুষ্ক তৃণরাশি-মাঝে একেলা পড়িয়া,
            চারি দিকে কেহ নাই আর— নিরদয় অসীম সংসার ।।
                  কে আছে গো দিবে তার তৃষিত অধরে
            একবিন্দু শিশিরের কণা— কেহ না, কেহ না ।।
            মধুকর কাছে এসে বলে,  ‘মধু কই। মধু চাই, চাই ।’
            ধীরে ধীরে নিশ্বাস ফেলিয়া  ফুল বলে, ‘কিছু নাই, নাই।’
            ‘ফুলবালা, পরিমল দাও’ বায়ু আসি কহিতেছে কাছে ।
            মলিন বদন ফিরাইয়া  ফুল বলে, ‘আর কী বা আছে।’
            মধ্যাহ্নকিরণ চারি দিকে  খরদৃষ্টে চেয়ে অনিমিখে—
                   ফুলটির মৃদু প্রাণ হায়,
                          ধীরে ধীরে শুকাইয়া যায় ।।
আরো দেখুন
উপসংহার
Stories
ভোজরাজের দেশে যে মেয়েটি ভোরবেলাতে দেবমন্দিরে গান গাইতে যায় সে কুড়িয়ে-পাওয়া মেয়ে।
আচার্য বলেন, 'একদিন শেষরাত্রে আমার কানে একখানি সুর লাগল। তার পরে সেইদিন যখন সাজি নিয়ে পারুলবনে ফুল তুলতে গেছি তখন এই মেয়েটিকে ফুলগাছতলায় কুড়িয়ে পেলেম।'
আরো দেখুন
মানভঞ্জন
Stories
রমানাথ শীলের ত্রিতল অট্টালিকায় সর্ব্বোচ্চ তলের ঘরে গোপীনাথ শীলের স্ত্রী গিরিবালা বাস করে। শয়নকক্ষের দক্ষিণ দ্বারের সম্মুখে ফুলের টবে গুটিকতক বেলফুল এবং গোলাপফুলের গাছ; ছাতটি উচ্চ প্রাচীর দিয়া ঘেরা-- বহিরদৃশ্য দেখিবার জন্য প্রাচীরের মাঝে মাঝে একটি করিয়া ইট ফাঁক দেওয়া আছে। শোবার ঘরে নানা বেশ এবং বিবেশ-বিশিষ্ট বিলাতি নারীমূর্তির বাঁধানো এন্‌গ্রেভিং টাঙানো রহিয়াছে; কিন্তু প্রবেশদ্বারের সম্মুখবর্তী বৃহৎ আয়নার উপরে ষোড়শী গৃহস্বামিনীর যে প্রতিবিম্বটি পড়ে তাহা দেয়ালের কোনো ছবি অপেক্ষা সৌন্দর্যে ন্যূন নহে।
গিরিবালার সৌন্দর্য অকস্মাৎ আলোকরশ্মির ন্যায়, বিস্ময়ের ন্যায়, নিদ্রাভঙ্গে চেতনার ন্যায়, একেবারে চকিতে আসিয়া আঘাত করে এবং এক আঘাতে অভিভূত করিয়া দিতে পারে। তাহাকে দেখিলে মনে হয়, ইহাকে দেখিবার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না; চারি দিকে এবং চিরকাল যেরূপ দেখিয়া আসিতেছি এ একেবারে হঠাৎ তাহা হইতে অনেক স্বতন্ত্র।
আরো দেখুন
ললাটের লিখন
Stories
ছেলেবেলায় পৃথ্বীশের ডান দিকের কপালে চোট লেগেছিল ভুরুর মাঝখান থেকে উপর পর্যন্ত। সেই আঘাতে ডান চোখটাও সংকুচিত। পৃথ্বীশকে ভালো দেখতে কি না সেই প্রশ্নের উত্তরটা কাটা দাগের অবিচারে সম্পূর্ণ হতে পারল না। অদৃষ্টের এই লাঞ্ছনাকে এত দিন থেকে প্রকাশ্যে পৃথ্বীশ বহন করে আসছে তবুও দাগও যেমন মেলায় নি তেমনি ঘোচে নি তার সংকোচ। নতুন কারো সঙ্গে পরিচয় হবার উপলক্ষে প্রত্যেকবার ধিক্‌কারটা জেগে ওঠে মনে। কিন্তু বিধাতাকে গাল দেবার অধিকার তার নেই। তার রচনার ঐশ্বর্যকে বন্ধুরা স্বীকার করছে প্রচুর প্রশংসায়, শত্রুরা নিন্দাবাক্যের নিরন্তর কটুক্তিতে। লেখার চারি দিকে ভিড় জমছে। দু টাকা আড়াই টাকা দামের বইগুলো ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে ঘরে। সম্পাদকরা তার কলমের প্রসাদ ছুটোছাঁটা যা-ই পায় কিছুই ছাড়ে না। পাঠিকারা বলে, পৃথ্বীশবাবু মেয়েদের মন ও চরিত্র যেমন আশ্চর্য বোঝেন ও বর্ণনা করেন এমন সাধ্য নেই আর কোনো লেখকের। পুরুষ-বন্ধুরা বলে, ওর লেখায় মেয়েদের এত-যে স্তুতিবাদ সে কেবল হতভাগার ভাঙা কপালের দোষে। মুখশ্রী যদি অক্ষুণ্ন হত তা হলে মেয়েদের সম্বন্ধে সত্য কথা বাধত না মুখে। মুখের চেহারা বিপক্ষতা করায় মুখের অত্যুক্তিকে সহায় করেছে মনোহরণের অধ্যবসায়।
শ্রীমতী বাঁশরি সরকার ব্যারিস্টারি চক্রের মেয়ে-- বাপ ব্যারিস্টার, ভাইরা ব্যারিস্টার। দু বার গেছে য়ুরোপে ছুটি উপলক্ষে। সাজে সজ্জায় ভাষায় ভঙ্গিতে আছে আধুনিক যুগের সুনিপুণ উদ্দামতা। রূপসী বলতে যা বোঝায় তা নয়, কিন্তু আকৃতিটা যেন ফ্রেঞ্চ পালিশ দিয়ে ঝকঝকে করা।
আরো দেখুন