দীপালি ভট্টাচার্য

পূর্ণতা

          ১
স্তব্ধরাতে একদিন
            নিদ্রাহীন
              আবেগের আন্দোলনে তুমি
বলেছিলে নতশিরে
            অশ্রুনীরে
              ধীরে মোর করতল চুমি--
"তুমি দূরে যাও যদি,
            নিরবধি
              শূন্যতার সীমাশূন্য ভারে
সমস্ত ভুবন মম
            মরুসম
              রুক্ষ হয়ে যাবে একেবারে।
আকাশবিস্তীর্ণ ক্লান্তি
            সব শান্তি
              চিত্ত হতে করিবে হরণ--
নিরানন্দ নিরালোক
            স্তব্ধ শোক
              মরণের অধিক মরণ।'
                    ২
শুনে, তোর মুখখানি
            বক্ষে আনি
              বলেছিনু তোরে কানে কানে--
"তুই যদি যাস দূরে
            তোরি সুরে
              বেদনা-বিদ্যুৎ গানে গানে
ঝলিয়া উঠিবে নিত্য,
            মোর চিত্ত
              সচকিবে আলোকে আলোকে।
বিরহ বিচিত্র খেলা
            সারা বেলা
              পাতিবে আমার বক্ষে চোখে।
তুমি খুঁজে পাবে প্রিয়ে,
            দূরে গিয়ে
              মর্মের নিকটতম দ্বার--
আমার ভুবনে তবে
            পূর্ণ হবে
              তোমার চরম অধিকার।'
                ৩
দুজনের সেই বাণী
            কানাকানি,
              শুনেছিল সপ্তর্ষির তারা;
রজনীগন্ধার বনে
            ক্ষণে ক্ষণে
              বহে গেল সে বাণীর ধারা।
তার পরে চুপে চুপে
            মৃত্যু রূপে
              মধ্যে এল বিচ্ছেদ অপার।
দেখাশুনা হল সারা,
            স্পর্শহারা
              সে অনন্তে বাক্য নাহি আর।
তবু শূন্য শূন্য নয়,
            ব্যথাময়
              অগ্নিবাষ্পে পূর্ণ সে গগন।
একা-একা সে অগ্নিতে
            দীপ্তগীতে
              সৃষ্টি করি স্বপ্নের ভুবন।

দীপালি ভট্টাচার্য - অন্যান্য নিবেদন