ছন্দের মাত্রা - ২
Essays
উপরের প্রবন্ধে লিখেছি "আঁধার রজনী পোহালো' গানটি নয় মাত্রার ছন্দে রচিত।
ছন্দতত্ত্বে প্রবীণ অমূল্যবাবু ওর নয়-মাত্রিকতার দাবি একেবারে নামঞ্জুর করে দিলেন। আর কারো হাত থেকে এ রায় এলে তাকে আপিল করবার যোগ্য বলেও গণ্য করতুম না, এ ক্ষেত্রে ধাঁধা লাগিয়ে দিলে। রাস্তার লোক এসে যদি আমাকে বলে তোমার হাতে পাঁচটা আঙুল নেই, তাহলে মনে উদ্বেগের কোনো কারণ ঘটে না। কিন্তু, শারীরতত্ত্ববিদ্ এসে যদি এই সংবাদটা জানিয়ে যান তাহলে দশবার করে নিজের আঙুল গুনে দেখি, মনে ভয় হয়, অঙ্ক বুঝি ভুলে গেছি। অবশেষে নিতান্ত হতাশ হয়ে স্থির করি, যে-কটাকে এতদিন আঙুল বলে নিশ্চিন্ত ছিলুম বৈজ্ঞানিক মতে তার সব-কটা আঙুলই নয়; হয়তো শাস্ত্রবিচারে জানা যাবে যে, আমার আঙুল আছে মাত্র তিনটি, বাকি দুটো বুড়ো আঙুল আর কড়ে আঙুল, তারা হরিজন-শ্রেণীয়।
মহাভারতের কথা অমৃতসমান,
কাশীরামদাস কহে শুনে পুণ্যবান্।
মহাভারতের বাণী
অমৃতসমান মানি,
কাশীরামদাস ভনে
শোনে তাহা সর্বজনে।
আঁধার রজনী পোহালো,
জগৎ পুরিল পুলকে।
বিংশতি কোটি মানবের বাস
এ ভারতভূমি যবনের দাস
রয়েছে পড়িয়া শৃঙ্খলে বাঁধা।
যেথায় বিংশতি কোটি মানবের বাস
সেই তো ভারতবর্ষ যবনের দাস
শৃঙ্খলেতে বাঁধা পড়ে আছে।
১ ২ ০
আঁধার । রজনী । পোহালো।
উত্তরদিগন্ত ব্যাপি দেবতাত্মা হিমাদ্রি বিরাজে,
দুই প্রান্তে দুই সিন্ধু, মানদণ্ড যেন তারি মাঝে।
মাথা তুলে তুমি যবে চল তব রথে
তাকাও না কোথা আমি ফিরি পথে পথে,
অবসাদজাল মোরে ঘেরে পায় পায়।
মনে পড়ে, এই হাতে নিয়েছিলে সেবা,
তবু হায় আজ মোরে চিনিবে সে কেবা,
তোমারি চাকার ধুলা মোরে ঢেকে যায়।
মাথা তুলে তুমি
যবে চল তব
রথে
তাকাও না কোথা
আমি ফিরি পথে
পথে,
অবসাদজাল
ঘেরে মোরে পায়
পায়।
মনে পড়ে, এই
হাতে নিয়েছিলে
সেবা--
তবু হায় আজ
মোরে চিনিবে সে
কেবা--
তোমারি চাকার
ধুলা মোরে ঢেকে
যায়।
প্রাণে মোর আছে তার বাণী,
তার বেশি তার নাহি জানি।
প্রাণে মোর
আছে তার
বাণী।
প্রাণে মোর আছে
তার বাণী।
প্রাণে মোর আছে তার
বাণী।
১ ২
সকল বেলা । কাটিয়া গেল, ।
৩ ৪
বিকাল নাহি । যায়।
১ ২ ৩
মন চায় । চলে আসে । কাছে, ।
৪ ৫
তবুও পা । চলে না।
বলিবার । কত কথা । আছে, ।
তবু কথা । বলে না।
নয়নে । নিষ্ঠুর । চাহনি ।
হৃদয়ে । করুণা । ঢাকা।
গভীর । প্রেমের । কাহিনী ।
গোপন । করিয়া । রাখা।
১ ২ ৩ ৪
অন্তর তার । কী বলিতে চায় । চঞ্চল চর । ণে,
কণ্ঠের হার । নয়ন ডুবায় । চম্পক বর । নে।
বারে বারে যায় । চলিয়া
ভাসায় গো আঁখি । নীরে সে।
বিরহের ছলে । ছলিয়া
মিলনের লাগি । ফিরে সে।
১ ২ ৩
বারে বারে । যায় চলি । য়া
ভাসায় গো । আঁখিনীরে । সে।
বিরহের । ছলে ছলি । য়া
মিলনের । লাগি ফিরে । সে।
সারাদিন । দহে তিয়া । ষা,
বারেক না । দেখি উহা । রে।
অসময়ে । লয়ে কী আ । শা
অকারণে । আসে দুয়া । রে।
মেঘ ডাকে গম্ভীর গরজনে,
ছায়া নামে তমালের বনে বনে,
ঝিল্লি ঝনকে নীপবীথিকায়।
সরোবর উচ্ছল কূলে কূলে,
তটে তারি বেণুশাখা দুলে দুলে
মেতে ওঠে বর্ষণগীতিকায়।
শ্রাবণগগন, ঘোর ঘনঘটা,
তাপসী যামিনী এলায়েছে জটা,
দামিনী ঝলকে রহিয়া রহিয়া।
তমালবনে ঝরিছে বারিধারা,
তড়িৎ ছুটে আঁধারে দিশাহারা।
ছিঁড়িয়া ফেলে কিরণকিঙ্কিণী
আত্মঘাতী যেন সে পাগলিনী।
২ ১
গগনে গরজে মেঘ । ঘন বরিষণ।
১ ২ ৩
গগনে গরজে মেঘ । ঘন বর । ষা।
জ্বেলেছে পথের আলোক
সূর্যরথের চালক,
অরুণরক্ত গগন।
বক্ষে নাচিছে রুধির,
কে রবে শান্ত সুধীর
কে রবে তন্দ্রামগন।
বাতাসে উঠিছে হিলোল,
সাগর-ঊর্মি বিলোল,
এল মহেন্দ্রলগন,
কে রবে তন্দ্রামগন।
সকল বেলা কাটিয়া গেল,
বিকাল নাহি যায়।
সকল বেলা কাটিয়া গেল,
বকুলতলে আসন মেলো--
পৈঙ্গল-ছদঃ সূত্রাণি
ভংজিঅ মলঅচোলবই ণিবলিঅ
গংজিঅ গুজ্জরা।
মালবরাঅ মলঅগিরি লুক্কিঅ
পরিহরি কুংজরা।
খুরাসাণ খুহিঅ রণমহ মুহিঅ
লংঘিঅ সাঅরা।
হম্মীর চলিঅ হারব পলিঅ
রিউগণহ কাঅরা॥
পঢ়ম দহ দিজ্জিআ
পুণবি তহ কিজ্জিআ
পুণবি দহ তহ বিরই জাআ।
এম পরি বিবিহু দল
মত্ত সততীস পল
এহু কহ ঝুল্লণা ণাঅরাআ॥
কুংতঅরু ধণুদ্ধরু
হঅবর গঅবরু
ছক্কলু বিবি পা-
ইক্ক দলে।
কুঞ্জপথে জ্যোৎস্নারাতে
চলিয়াছে সখীসাথে
মল্লিকাকাকলিকার
মাল্য হাতে।
বর্ষণশান্ত
পাণ্ডুর মেঘ যবে ক্লান্ত
বন ছাড়ি মনে এল নীপরেণুগন্ধ,
ভরি দিল কবিতার ছন্দ।
আরো দেখুন