চিত্রকূট (chitrokut)
একটুখানি জায়গা ছিল
রান্নাঘরের পাশে,
সেইখানে মোর খেলা হ'ত
শুক্নো-পারা ঘাসে।
একটা ছিল ছাইয়ের গাদা
মস্ত ঢিবির মতো,
পোড়া কয়লা দিয়ে দিয়ে
সাজিয়েছিলেম কত।
কেউ জানে না সেইটে আমার
পাহাড় মিছিমিছি,
তারই তলায় পুঁতেছিলেম
একটি তেঁতুল-বিচি।
জন্মদিনের ঘটা ছিল,
ছয় বছরের ছেলে--
সেদিন দিল আমার গাছে
প্রথম পাতা মেলে।
চার দিকে তার পাঁচিল দিলেম
কেরোসিনের টিনে,
সকাল বিকাল জল দিয়েছি,
দিনের পরে দিনে।
জল-খাবারের অংশ আমার
এনে দিতেম তাকে,
কিন্তু তাহার অনেকখানিই
লুকিয়ে খেত কাকে।
দুধ যা বাকি থাকত দিতেম
জানত না কেউ সে তো--
পিঁপড়ে খেত কিছুটা তার,
গাছ কিছু বা খেত।
চিকন পাতায় ছেয়ে গেল,
ডাল দিল সে পেতে--
মাথায় আমার সমান হল
দুই বছর না যেতে।
একটি মাত্র গাছ সে আমার
একটুকু সেই কোণ,
চিত্রকূটের পাহাড়-তলায়
সেই হল মোর বন।
কেউ জানে না সেথায় থাকেন
অষ্টাবক্র মুনি--
মাটির 'পরে দাড়ি গড়ায়,
কথা কন না উনি।
রাত্রে শুয়ে বিছানাতে
শুনতে পেতেম কানে
রাক্ষসেরা পেঁচার মতো
চেঁচাত সেইখানে।
নয় বছরের জন্মদিনে
তার তলে শেষ খেলা,
ডালে দিলুম ফুলের মালা
সেদিন সকাল-বেলা।
বাবা গেলেন মুন্শিগঞ্জে
রানাঘাটের থেকে,
কোল্কাতাতে আমায় দিলেন
পিসির কাছে রেখে।
রাত্রে যখন শুই বিছানায়
পড়ে আমার মনে
সেই তেঁতুলের গাছটি আমার
আঁস্তাকুড়ের কোণে।
আর সেখানে নেই তপোবন,
বয় না সুরধুনী--
অনেক দূরে চ'লে গেছেন
অষ্টাবক্র মুনি।