পুষ্প ছিল বৃক্ষশাখে, হে নারী, তোমার অপেক্ষায় পল্লবচ্ছায়ায়। তোমার নিশ্বাস তারে লেগে অন্তরে সে উঠিয়াছে জেগে, মুখে তব কী দেখিতে পায়। সে কহিছে-- "বহু পূর্বে তুমি আমি কবে একসাথে আদিম প্রভাতে প্রথম আলোকে জেগে উঠি এক ছন্দে বাঁধা রাখী দুটি দুজনে পরিনু হাতে হাতে। "আধো আলো-অন্ধকারে উড়ে এনু মোরা পাশে পাশে প্রাণের বাতাসে। একদিন কবে কোন্ মোহে দুই পথে চলে গেনু দোঁহে আমাদের মাটির আবাসে। "বারে বারে বনে বনে জন্ম লই নব নব বেশে নব নব দেশে। যুগে যুগে রূপে রূপান্তরে ফিরিনু সে কী সন্ধান-তরে সৃজনের নিগূঢ় উদ্দেশে। "অবশেষে দেখিলাম কত জন্ম-পরে নাহি জানি ওই মুখখানি। বুঝিলাম আমি আজও আছি প্রথমের সেই কাছাকাছি, তুমি পেলে চরমের বাণী। "তোমার আমার দেহে আদিছন্দ আছে অনাবিল আমাদের মিল। তোমার আমার মর্মতলে একটি সে মূল সুর চলে, প্রবাহ তাহার অন্তঃশীল। "কী যে বলে সেই সুর, কোন্ দিকে তাহার প্রত্যাশা, জানি নাই ভাষা। আজ, সখী, বুঝিলাম আমি সুন্দর আমাতে আছে থামি-- তোমাতে সে হল ভালোবাসা।'
নারীর দুখের দশা অপমানে জড়ানো এই দেখি দিকে দিকে ঘরে ঘরে ছড়ানো। জানো কি এ অন্যায় সমাজের হিসাবে নিমেষে নিমেষে কত হলাহল মিশাবে? পুরুষ জেনেছে এটা বিধিনির্দিষ্ট তাদের জীবন-ভোজে নারী উচ্ছিষ্ট। রোগ-তাপে সেবা পায়, লয় তাহা অলসে-- সুধা কেন ঢালে বিধি ছিদ্র এ কলসে! সমসম্মান হেথা নাহি মানে পুরুষে, নিজ প্রভুপদমদে তুলে রয় ভুরু সে। অর্ধেক কাপুরুষ অর্ধেক রমণী তাতেই তো নাড়ীছাড়া এ দেশের ধমণী। বুঝিতে পারে না ওরা-- এ বিধানে ক্ষতি কার। জানি না কী বিপ্লবে হবে এর প্রতিকার। একদা পুরুষ যদি পাপের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়ে নারীর পাশে নাহি নামে যুদ্ধে অর্ধেক-কালি-মাখা সমাজের বুকটা খাবে তবে বারে বারে শনির চাবুকটা। এত কথা বৃথা বলা--যে পেয়েছে ক্ষমতা নিঃসহায়ের প্রতি নাই তার মমতা, আপনার পৌরুষ করি দিয়া লাঞ্ছিত অবিচার করাটাই হয় তার বাঞ্ছিত।