সকালে জাগিয়া উঠি ফুলদানে দেখিনু গোলাপ; প্রশ্ন এল মনে-- যুগ-যুগান্তের আবর্তনে সৌন্দর্যের পরিণামে যে শক্তি তোমারে আনিয়াছে অপূর্ণের কুৎসিতের প্রতি পদে পীড়ন এড়ায়ে, সে কি অন্ধ, সে কি অন্যমনা, সেও কি বৈরাগ্যব্রতী সন্ন্যাসীর মতো সুন্দরে ও অসুন্দরে ভেদ নাহি করে-- শুধু জ্ঞানক্রিয়া, শুধু বলক্রিয়া তার, বোধের নাইকো কোনো কাজ? কারা তর্ক করে বলে, সৃষ্টির সভায় সুশ্রী কুশ্রী বসে আছে সমান আসনে-- প্রহরীর কোনো বাধা নাই। আমি কবি তর্ক নাহি জানি, এ বিশ্বেরে দেখি তার সমগ্র স্বরূপে-- লক্ষকোটি গ্রহতারা আকাশে আকাশে বহন করিয়া চলে প্রকাণ্ড সুষমা, ছন্দ নাহি ভাঙে তার সুর নাহি বাধে, বিকৃতি না ঘটায় স্খলন; ঐ তো আকাশে দেখি স্তরে স্তরে পাপড়ি মেলিয়া জ্যোতির্ময় বিরাট গোলাপ।
সতীলোকে বসি আছে কত পতিব্রতা, পুরাণে উজ্জ্বল আছে যাঁহাদের কথা। আরো আছে শত লক্ষ অজ্ঞাতনামিনী খ্যাতিহীনা কীর্তিহীনা কত-না কামিনী-- কেহ ছিল রাজসৌধে কেহ পর্ণঘরে, কেহ ছিল সোহাগিনী কেহ অনাদরে; শুধু প্রীতি ঢালি দিয়া মুছি লয়ে নাম চলিয়া এসেছে তারা ছাড়ি মর্তধাম। তারি মাঝে বসি আছে পতিতা রমণী মর্তে কলঙ্কিনী, স্বর্গে সতীশিরোমণি। হেরি তারে সতীগর্বে গরবিনী যত সাধ্বীগণ লাজে শির করে অবনত। তুমি কী জানিবে বার্তা, অন্তর্যামী যিনি তিনিই জানেন তার সতীত্বকাহিনী।