আমাদের এই নদীর কূলে নাইকো স্নানের ঘাট, ধূধূ করে মাঠ। ভাঙা পাড়ির গায়ে শুধু শালিখ লাখে লাখে খোপের মধ্যে থাকে। সকালবেলা অরুণ আলো পড়ে জলের 'পরে, নৌকা চলে দু-একখানি অলস বায়ু-ভরে। আঘাটাতে বসে রইলে, বেলা যাচ্ছে বয়ে-- দাও গো মোরে কয়ে ভাঙন-ধরা কূলে তোমার আর কিছু কি চাই? সে কহিল,ভাই, না ই, না ই, নাই গো আমার কিছুতে কাজ নাই। আমাদের এ নদীর কূলে ভাঙা পাড়ির তল, ধেনু খায় না জল। দূর গ্রামের দু-একটি ছাগ বেড়ায় চরি চরি সারা দিবস ধরি। জলের 'পরে বেঁকে-পড়া খেজুর-শাখা হতে ক্ষণে ক্ষণে মাছরাঙাটি ঝাঁপিয়ে পড়ে স্রোতে। ঘাসের 'পরে অশথতলে যাচ্ছে বেলা বয়ে-- দাও আমারে কয়ে আজকে এমন বিজন প্রাতে আর কারে কি চাই? সে কহিল, ভাই, না ই, না ই, নাই গো আমার কারেও কাজ নাই।
বেহাগ আমি কেবলি স্বপন করেছি বপন বাতাসে-- তাই আকাশকুসুম করিনু চয়ন হতাশে। ছায়ার মতন মিলায় ধরণী, কূল নাহি পায় আশার তরণী, মানসপ্রতিমা ভাসিয়া বেড়ায় আকাশে। কিছু বাঁধা পড়িল না শুধু এ বাসনা- বাঁধনে। কেহ নাহি দিল ধরা শুধু এ সুদূর সাধনে। আপনার মনে বসিয়া একেলা অনলশিখায় কী করিনু খেলা, দিনশেষে দেখি ছাই হল সব হুতাশে! আমি কেবলি স্বপন করেছি বপন বাতাসে।